নদীর শুখা মরশুম এখনো অর্ধেকও পেরোয়নি অথচ এর মধ্যেই স্বরূপগঞ্জে জলঙ্গির জলস্তর অনেকটাই নিচে। নৌকায় পারাপার স্বাভাবিক রাখতে বাধ্য হয়েই নবদ্বীপ জলপথ পরিবহণ সমিতির তরফ থেকে খেয়াঘাটের জায়গা বদলের আর্জি জানানো হয়েছে জেলা পরিষদের কাছে। মায়াপুর, নবদ্বীপ এবং স্বরূপগঞ্জের মধ্যে মোট চারটি খেয়াঘাট রয়েছে। এর মধ্যে একটি বাদে বাকি তিনটি অর্থাৎ মায়াপুর থেকে নবদ্বীপ, মায়াপুর থেকে স্বরূপগঞ্জ এবং স্বরূপগঞ্জ থেকে মায়াপুর যাওয়ার ওই তিনটি ঘাটই জলঙ্গির উপরে। ফলে নদীতে জল কমে যাওয়ায় বিপর্যস্ত পারপার। জলপথ পরিবহণ সমিতির সম্পাদক মুরারী হালদার বলেন, “সবে মাঘের শেষ। এখনই জলঙ্গিতে দু’ফুট মতো জল আছে। অথচ ফেরি চালাতে কম করে ৬ ফুট জল প্রয়োজন। জল সরার সঙ্গে সঙ্গে মাচাও সরানো হচ্ছে। ইতিমধ্যেই মায়াপুরের হুলোর ঘাট থেকে অস্থায়ী মাচা প্রায় ৩৫ ফুট সরিয়ে আনা হয়েছে। আর সরানো যাবে না। ফলে বাধ্য হয়ে আমরা জেলা পরিষদের কাছে আর্জি জানিয়েছি জলঙ্গির উপরের মায়াপুরের ঘাটটির অবস্থান বদলে গঙ্গার দিকে করার। নাহলে নৌকা চলাচল কিছুদিনের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যাবে।” |
পরিবহণ সমিতির আশঙ্কা দোল উৎসবে প্রচুর লোক সমাগমের আগে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পারাপারের সমসা বড় আকার নেবে। নবদ্বীপে দেবানন্দ গৌড়ীয় মঠ ও চৈতন্য জন্মস্থান আশ্রমের অধ্যক্ষ জানিয়েছেন, দোল উৎসবে ন’টি দ্বীপ পরিক্রমা করা হয়। সেই সময়ে পারাপার নাহলে প্রায় ৬০ কিমি পথ অতিরিক্ত হাঁটতে হবে। ফলে পরিক্রমার আয়োজন ছোট করে দিতে হতে পারে। নদিয়ার সভাধিপতি মেঘলাল শেখ বলেন, “দেখছি যত তাড়াতাড়ি সমস্যার সমাধান করা যায়। সাধারণ যাত্রীরা যাতে হয়রান না হন তার জন্য বিকল্প খোঁজা হচ্ছে।” অন্য দিকে জেলা সেচ দফতরের এসডিও সুপ্রতীম রায় বলেন, “নদীর জলপ্রবাহ এবং জলের গতিবেগ খুবই কম। ফলে দ্রুত পলি জমছে। এ ছাড়াও নদীর খাদির এলাকায় প্রচুর বাড়ি ঘর হয়ে যাওয়ায় নদীর নিজস্ব ‘পেন্ডুলাম মুভমেন্ট’ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বর্ষার ভৈরব নদের মধ্যে দিয়ে পদ্মার জল ছাড়া ওই নদীতে সারা বছর জল সরবরাহের আর কোনও উৎসও নেই।” কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজের ভূগোলের অধ্যাপক ও জলঙ্গি গবেষক বলাইচন্দ্র দাস বলেন, “প্রায় ৫০০ বছরের পুরোনো জলঙ্গির উৎস ও মোহনা নদিয়াতেই। করিমপুরের চর মধুবনা থেকে উৎপন্ন হয়ে স্বরূপগঞ্জে গঙ্গায় মেশে ওই নদী। চর মধুবনা থেকে মুক্তারপুর পর্যন্ত ৪৮ কিমি নদী এখন আর নেই। চাষাবাদের খেত করে এবং ১৯৫৬ সালে করিমপুর-জলঙ্গি রাস্তা তৈরির সময়ে নদীর প্রায় ৪৮ কিমি বুজিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি মুক্তারনগর থেকে স্বরূপগঞ্জ পর্যন্ত ১৭২ কিমিতেও পারাপারের জন্য প্রতি বছর কয়েকশো লরি বালি ফেলা হয়। ফলে ছোট হয়েছে নদী। এ ছাড়া সম্প্রতি কৃষ্ণনগরে রেলের ডবল লাইনের কাজ চলায় শহরের লাগোয়া নদীর অংশ বুজিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ ভাবে নগর উন্নয়নের নানা কাজে নদীকে ক্রমাগত ছোট করে দেওয়া হচ্ছে। নবদ্বীপ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিমল চক্রবর্তী বলেন, “অবস্থার বদল না হলে কিছুদিনের মধ্যেই নদিতে নৌকা চলাচলও বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা সেচ দফতরের সঙ্গে কথা বলে চেষ্টা করছি যাতে একটা ক্যানেল তৈরি করে পারাপার সমস্যার সুরাহা করা যায়।” |