প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে টানা অভিযান চালিয়ে পুরস্কার পাওয়া উত্তরপাড়া পুরসভায় আবার ছেয়ে গিয়েছে প্লাস্টিক। পুর কর্তৃপক্ষের যে নজরদারি ছিল এলাকার বাজারগুলিতে, তা-ও উধাও হয়ে গিয়েছে দীর্ঘদিন। তারই সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা আবারও প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করছেন অবাধে। সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলছেন, হঠাৎ কেন অভিযান শুরু হল প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে? আর বন্ধই বা হয়ে গেল কেন?
গত মরসুমের ঠিক বর্ষার আগে উত্তরপাড়া পুরসভা প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান চালায়। শুধু বাজারগুলিতে হানা দিয়ে ধরপাকড় এবং ব্যবসায়ীদের জরিমানা করাই নয়, মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে নানা ভাবে উদ্যোগী হয়েছিল পুরসভা। বিভিন্ন ব্যবসায়ী সমিতি এলাকায় এলাকায় পোস্টার, হোর্ডিং দিয়েছিলেন। বিশেষত বাজার এলাকায় লিফলেট বিলি করা হয়েছিল। মানুষের মধ্যে প্লাস্টিকের ব্যবহারের সুদুরপ্রসারী কুফল বোঝাতে পথনাটকের আয়োজন করা হয়েছিল। রবিবার এবং অন্যান্য ছুটির দিনে এলাকার বিভিন্ন বাজার এলাকায় নিয়ম করে পথনাটিকা হত।
এ সবের ফলও মিলেছিল হাতেনাতে। মানুষের মধ্যে চট অথবা পরিবেশবন্ধু অন্যান্য জিনিসের তৈরি ব্যাগ নিয়ে দোকান-বাজারে যাওয়ার অভ্যাস ফিরে এসেছিল। সব থেকে উপকৃত উপকৃত হয়েছিলেন পুর-এলাকার যে সমস্ত জায়গায় জল জমে, সেই সব জায়গার মানুষজন। কারণ, রাস্তায় বা নর্দমায় প্লাস্টিক না থাকায় নিকাশি ব্যবস্থায় হাতেনাতে ফল পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে ছবিটা আমূল বদলে আবার পুরনো চেহারায় ফিরে এসেছে। এখন ব্যবসায়ীরা কোনও রকম রাখঢাক না করেই খোলামেলা ভাবে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ তুলে দিচ্ছেন ক্রেতাদের হাতে। হাত বাড়ালেই প্লাস্টিক মেলায় দোকান বা বাজারমুখী মানুষের ব্যাগ না নিয়ে বেরনোর প্রবণতা আবার ফিরে এসেছে।
উত্তরপাড়া-কোতরং পুরসভার জনস্বাস্থ্য ও পরিষেবা দফতরের কর্তারাও শহরে যে প্লাস্টিক ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে, তা অস্বীকার করেননি। প্রসঙ্গত, রাজ্যে বারাসত, উত্তরপাড়া এবং দীঘা পুরসভার প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে অভিযান প্রশংসিত হয়েছিল। রাজ্য সরকার এই তিন পুরসভাকে মডেল করে আগামী দিনের কর্মসূচি নেওয়ার কথা শুরু করে। সেই পরিকল্পনার সুর কেটে দিয়েছে উত্তরপাড়া পুরসভা। সংশ্লিষ্ট দফতরের চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল দিলীপ যাদবের ব্যাখ্যা, “আমরা প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে যে অভিযান শুরু করেছিলাম, তা অনেকটাই বিচ্ছিন্ন ভাবে। আমাদের পুর-এলাকায় কলকাতা বা অন্যান্য এলাকা থেকে অন্তত ১০ হাজার মানুষ আসছেন প্লাস্টিক নিয়ে। তার উপর, লাগোয়া পুরসভাগুলি প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে সার্বিক ভাবে ব্যবস্থা নেয়নি। তাই এই শহরেও প্লাস্টিকের প্রবেশ একেবারে বন্ধ করা যাচ্ছে না।” তিনি জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই বৈঠক হয়েছে। সার্বিক ভাবেই সব পুরসভাগুলিকে নিয়ে কী ভাবে প্লাস্টিক প্রতিরোধে নামা যায়, সেই চিন্তাভাবনা চলছে। |