এ যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা।
সম্বল বলতে ছিল তিন বিঘে জমির আলু। সেই আলু বিক্রি করে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত দুই ছেলেমেয়ের চিকিৎসা করাবেন বলে ভেবেছিলেন পাত্রসায়রের বিদ্যানন্দপুর গ্রামের কার্তিক নন্দী। কিন্তু গত সোমবার রাতে হাতির পাল গ্রামে ঢুকে তাঁর আড়াই বিঘা জমির আলু মাঠেই শেষ করে দিয়েছে। অসুস্থ দুই ছেলেমেয়ের চিকিৎসা কী ভাবে করাবেন- এখন সেই দুর্ভাবনায় পড়েছেন কার্তিকবাবু। পড়শিদের অনেকেরই জমির একই হাল করেছে হাতির পাল। নিজেদের অবস্থার শোক ছাপিয়ে তাদের গলায় ধরা পড়েছে কার্তিকবাবুর ছেলেমেয়ের চিকিৎসা করা নিয়ে সংশয়ের কথা।
কার্তিকবাবুর দুই সন্তান। ১৪ বছরের ছেলে বুদ্ধদেব ও চার বছরের মেয়ে বৃষ্টি। দু’জনেই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। হাতিদের দাপাদাপিতে তছনছ হয়ে যাওয়া জমির আলে বসে কাঁদছিলেন কার্তিকবাবু। তিনি বলেন, “ব্যাঙ্ক থেকে ৩০ হাজার টাকা কৃষি ঋ
ণ নিয়ে তিন বিঘে জমিতে আলু চাষ করেছিলাম। ভেবেছিলাম আলু বিক্রির টাকায় দুই ছেলেমেয়ের চিকিৎসা করাব ও বাকি টাকায় সংসারের খরচ সামলাবো। কিন্তু হাতির পাল হঠাৎ গ্রামে ঢুকে আড়াই বিঘে আলু খেয়ে, পায়ে পিষে নষ্ট করে দিয়েছে। এ বার কী করব ভেবে পাচ্ছি না।” |
অসহায় চাষি কার্তিক নন্দী। ছবি: শুভ্র মিত্র। |
তাঁর টিনের চালার কাঁচা বাড়ি। স্ত্রী কাকলিদেবী বলেন, “প্রায় তিন সপ্তাহ অন্তর দুই ছেলেমেয়ের রক্ত লাগে। কখনও বিষ্ণুপুর, কখনও বা কলকাতায় গিয়ে রক্ত নিতে হয়। যাতায়াতের খরচ তো কম নয়। তার উপরে ওষুধপত্র কেনার খরচও রয়েছে। আলু বিক্রির টাকায় সারা বছরের চিকিৎসার টাকা তোলা হত। এ বার হাতিরা সর্বনাশ করে দিয়েছে। কী করে ওদের চিকিৎসা করাব জানি না।” কার্তিকবাবু জানান, বছরের বাকি সময়ে তিনি ওই জমিতে বাড়ির খাবারের জন্য ধান চাষ করেন। অন্য কোনও রোজগার নেই। আলুর বিক্রি করে প্রায় ৪০ হাজার টাকা রোজগার হত। সেই টাকাতেই দুই সন্তানের চিকিৎসা ও সংসার খরচ চালান। তাঁর পড়শি সমীর পাল, উত্তম পালেরও বাড়িতেও আলুর খেত নষ্ট হওয়ায় শোকের ছায়া নেমেছে। তবে তাঁদের চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে কার্তিকবাবুর শোচনীয় অবস্থা। তাঁরা বলেন, “ওই ছোট ছেলেমেয়েগুলোর যন্ত্রণা চোখে দেখা যায় না। রক্ত নেওয়ার পরে কিছু দিন ভাল থাকে। কিন্তু এ বার ওদের কী ভাবে চিকিৎসা হবে?” স্থানীয় কুশদ্বীপ গ্রামের বাসিন্দা পাত্রসায়র পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তৃণমূলের দিবাকর নন্দী বলেন, “কার্তিকবাবুর ফসলের যা ক্ষতি হয়েছে, তাঁর ছেলেমেয়ের চিকিৎসা করানো নিয়ে আমরা সবাই উদ্বেগে রয়েছি। কোনও ভাবে সাহায্য করার চেষ্টা করা হবে।”
হাতির পাল অবশ্য বিষ্ণুপুর পেরিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের পথ ধরেছে। ডিএফও (বাঁকুড়া উত্তর) এস কুলন ডেইভাল বলেন, “ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতি পূরণ দেওয়া হবে।” কার্তিকবাবুর সন্তানদের চিকিৎসার কী হবে? তাঁর জবাব, “স্থানীয় বিধায়ক ওদের বিশেষ সাহায্য দেওয়ার জন্য বন দফতরে জানালে আমরাও সুপারিশ করব।” |