গ্রন্থাগার
পরিষেবায় ধুলো
কোথাও দীর্ঘ দিন কোনও গ্রন্থাগারিক নেই। কোথাও কর্মীসংখ্যা মাত্র এক, গ্রন্থাগারিককেই সামলাতে হয় চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর কাজ। কোথাও বা গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যাচ্ছে প্রাচীন গ্রন্থ ও দুষ্প্রাপ্য পত্রিকা। এমনকী খাস জেলা গ্রন্থাগারেও ঠিকমতো পরিষেবা পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ।
সাঁতরাগাছি পাবলিক লাইব্রেরির সদস্য জুঁই বসু বললেন, “গ্রন্থাগারের নীচের তলায় বেশ বড় ফ্রি রিডিং রুম আছে। মাঝেমধ্যেই জায়গাটি বুটিক ব্যবসায়ীদের ভাড়া দেওয়া হয়। তখন ফ্রি রিডিংয়ের ব্যবস্থা ওপর তলায়, কেবল চারটি আসন নিয়ে। রবীন্দ্রনাথের আবক্ষ মূর্তিও অনেক সময় শাড়ি-সালোয়ারে ঢাকা পড়ে যায়।” গ্রন্থাগারের কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, “গ্রন্থাগার ও বাণী নিকেতন ইনস্টিটিউট প্রায় প্রথম থেকেই সহাবস্থান করছে। ভাড়া দেয় ইনস্টিটিউট।”
অভিযোগ, বই খুঁজে দেওয়ার ব্যাপারে এক শ্রেণির কর্মীর গা-ছাড়া ভাব। কোনও কোনও বইয়ের পাতা ঝুরঝুর করছে, হুঁশ নেই কারও। টেবল-চেয়ারেও ধুলো জমে থাকে। হাওড়া জেলা গ্রন্থাগারের এমনই দশার কথা শোনালেন অরুণকুমার ঘোষ, হারাধন পোল্লের মতো অনেকেই। বালি নিশ্চিন্দা সাধারণ পাঠাগারের গ্রন্থাগারিক তরুণ ঘোষ জানালেন, চারটি কর্মী পদের গ্রন্থাগার সহায়ক এবং দপ্তরির পদ দীর্ঘদিন খালি।
বকুলতলা শহিদ স্মৃতি সঙ্ঘ পাঠাগারের (প্রাইমারি লাইব্রেরি) গ্রন্থাগারিক গৌরী বসুকে সামলাতে হয় চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর দায়িত্বও। বলছিলেন, “আলমারিতে উই ধরছে। ছাদ দিয়ে জল পড়ে। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বছরে মাত্র ১৯ হাজার টাকা পাই। তা দিয়ে ছাদ সারানো সম্ভব নয়। জেলা গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”
এক দিকে নতুন বই কেনার জোয়ার, অন্য দিকে প্রবাসী, ভারতবর্ষ, মডার্ন রিভিউ, শনিবারের চিঠি, বঙ্গদর্শনের মতো দুষ্প্রাপ্য সংগ্রহের পাতা গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যাচ্ছে। এই হাল শতাব্দী-প্রাচীন সাঁত্রাগাছি পাবলিক লাইব্রেরির। দীর্ঘদিন গ্রন্থাগারিক নেই। গ্রন্থাগারের তিন তলায় অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামাঙ্কিত গবেষণাকেন্দ্রটিও প্রচারের অভাবে অন্ধকারে। সম্পাদক সুভাষচন্দ্র বসু বলেন, “গ্রন্থাগারের নিজস্ব টাকায় সাধারণ জীবাণুনাশক দেওয়া সম্ভব হলেও বিজ্ঞানসম্মত ‘ফিউমিগেশান’ করার বিপুল খরচ বহন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।”
পরিসংখ্যান বলছে, হাওড়া সদর মহকুমাতে ৫২টি গ্রামীণ গ্রন্থাগার (প্রাইমারি ইউনিট লাইব্রেরি), ৯টি টাউন গ্রন্থাগার এবং একটি জেলা গ্রন্থাগার আছে। সব মিলিয়ে পদ যেখানে দেড়শোর ওপর, কর্মী সেখানে একশো জন। কর্মীর অভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে দফরপুর রামকৃষ্ণ লাইব্রেরির মতো বেশ কয়েকটি গ্রন্থাগার।
জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক জয়শ্রী সেন বলেন, “কর্মীসংখ্যা বাড়ানোর জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।” জনশিক্ষা প্রসার ও গ্রন্থাগারমন্ত্রী আব্দুল করিম চৌধুরি বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” লাইব্রেরি ভবন মেরামতির প্রশ্নে ডাইরেক্টরেট অফ লাইব্রেরি সার্ভিস কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ভবন মেরামতির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের রাজা রামমোহন লাইব্রেরি ফাউন্ডেশন ২৫ লক্ষ এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকার পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অনুদান দিয়ে থাকে। লাইব্রেরিয়ানকে নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করে আবেদন জানাতে হয়।

ছবি: রণজিৎ নন্দী




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.