নিজের জীবন বিপন্ন করে ছিনতাইবাজদের হাত থেকে বন্ধুর প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা বাঁচালেন ভদ্রেশ্বরের সুনীলকুমার রক্ষিত।
মোটরবাইকে দুই ছিনতাইবাজ। এক জনের হাতে টাকার ব্যাগের একটি হাতল। অন্য হাতল ধরে রেখেছেন সুনীলবাবু। মোটরবাইকের গতি বাড়াল ছিনতাইবাজরা। মাটিতে পড়ে গিয়েও ব্যাগের হাতল ছাড়লেন না সুনীলবাবু। হেঁচড়াতে হেঁচড়াতেই মোটরবাইকের পিছনে এগিয়ে গেলেন কিছুটা। বন্ধু কালীশঙ্কর গুহের চিৎকারে স্থানীয় লোকজন ধাওয়া করল ছিনতাইবাজদের। ছিনতাইবাজরা ব্যাগ ছেড়ে চম্পট দিল। তত ক্ষণে হাত-পেট-বুক-পা দিয়ে রক্ত ঝরছে বছর বাহান্নর সুনীলবাবুর।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টে নাগাদ ভদ্রেশ্বর থানা ও পুরসভার অদূরে জি টি রোডে গুটিকয়েক পথচারী ওই দৃশ্য দেখে চমকে ওঠেন। রাতেই গুরুতর আহত সুনীলবাবুকে স্থানীয় একটি সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর বাঁ পায়ের হাড়ে চিড় ধরেছে। সেখানে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। শরীরেরও অনেক জায়গায় ক্ষত হয়েছে।
|
আহত সুনীলকুমার রক্ষিত হাসপাতালে। শুক্রবার তাপস ঘোষের তোলা ছবি। |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কালীশঙ্করবাবু এবং সুনীলবাবু আবাল্য বন্ধু। থাকেন ভদ্রেশ্বরের পালবাগান এলাকায়। সেখানেই নিজের একটি বাড়ি তৈরি করছেন কালীশঙ্করবাবু। সেই কারণে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টে নাগাদ কাছের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা তোলেন। সঙ্গে ছিলেন সুনীলবাবু। দু’জনে হেঁটেই ফিরছিলেন। তার পরেই ওই ঘটনা। বৃহস্পতিবার ওই এলাকায় দোকানপাট বন্ধ থাকে। বিকেল ৪টে নাগাদ রাস্তায় লোকজনও কম ছিল। কালীশঙ্করবাবুর চিৎকারে লোকজন এসে ছিনতাইবাজদের ধরতে না পারলেও সুনীলবাবুকে তাঁর বাড়িতে পৌঁছে দেন। শুক্রবার সকালে থানায় ছিনতাইয়ের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেন কালীশঙ্করবাবু।
এ দিন হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সুনীলবাবুর বাঁ পায়ে ব্যান্ডেজ জড়ানো। শরীরের কয়েক জায়গায় ব্যান্ডেজ। এক পাশে দাঁড়িয়ে কালীশঙ্করবাবু। শারীরিক কষ্টের মধ্যেও বন্ধুর টাকা বাঁচিয়ে দিতে পেরে তৃপ্ত লাগছিল সুনীলবাবুকে। তাঁর কথায়, “ব্যথা লেগেছে বলে দুঃখ নেই। কিন্তু কালীর সারা জীবনের সঞ্চিত অর্থ ছিনতাইবাজরা নিয়ে গেলে দুঃখের শেষ থাকত না। টাকাটা বাঁচাতে পেরেছি, এটাই অনেক।”
কালীশঙ্করবাবু বলেন, “আমি ওর কাছে সারা জীবনের জন্য ঋণী হয়ে গেলাম। অবসর নেওয়ার পরে ওর সঙ্গেই সময় কাটাই। টাকার ব্যাগ আমার হাতেই ছিল। ছিনতাইবাজরা টান মারতেই ও ধরে ফেলে।” তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদের অনুমান, নির্দিষ্ট খবরের ভিত্তিতেই ছিনতাইবাজরা ব্যাঙ্ক থেকে কালীশঙ্করবাবুদের পিছু নেয়। কিন্তু বেগতিক বুঝে তারা পালায়। হুগলির পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী জানিয়েছেন, ওই ঘটনায় সন্দেহভাজন এক জনকে আটক করা হয়েছে। তদন্ত চলছে। |