আগে ছিল ক্লাস পালানো ছাত্র। তাদের পাকড়াও করে ক্লাসে আনতেন শিক্ষকরা। অসমের ক্ষেত্রে এখন ব্যাপারটা উল্টো দাঁড়িয়েছে! ক্লাস পালানো শিক্ষকদের ক্লাসমুখী করতে নাজেহাল ছাত্র-অভিভাবকের দল। কেউ ক্লাস পালিয়ে প্রাইভেট টিউশন করছেন, কেউ দোকান দিয়েছেন, কেউ বা মদ্যপ অবস্থায় রাস্তায় গড়াগড়ি খাচ্ছেন। রাজ্যের নানা অঞ্চল থেকে ফাঁকিবাজ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেতে পেতে হয়রান শিক্ষামন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা একটি ‘হেল্পলাইন’ চালু করতে চলেছেন।
সম্প্রতি শিক্ষক, এমনকী প্রধান শিক্ষককেও স্কুল চলাকালীন মদ্যপ অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। সংবাদমাধ্যমে দেখানো হয়েছে সেই সব কাণ্ড। পাশাপাশি, পঠনপাঠনের সময়েই জুয়ার আড্ডা, ব্যবসা, রাজনীতি-সহ নানা কাজে স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের একাংশ ব্যস্ত থাকছেন। সেইসব কাজ সেরে পড়াতে আসার সময়ই পাচ্ছেন না তাঁরা। এ নিয়ে বেশ কিছু স্কুলে আন্দোলন হয়েছে। কোনও কোনও স্কুলে তালাও লাগানো হয়। সেই সঙ্গে ছাত্রদের মারধরের ঘটনাও আকছার ঘটছে।
মন্ত্রীর মোবাইলে বিভিন্ন সময় এ নিয়ে অভিযোগ জানিয়ে পরিচিতরা এসএমএস করলেও তা সরকারিভাবে অভিযোগ হিসাবে গণ্য না হওয়ায় অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। ব্যক্তিগতভাবে মন্ত্রী একাধিক প্রধান শিক্ষককে সতর্ক করলেও সামগ্রিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।
সব দিক ভেবেচিন্তেই সরকারি হেল্পলাইনের পরিকল্পনা। শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, হেল্পলাইন চালু হলে ২৪ ঘণ্টা, যে কেউ স্কুল-কলেজের শিক্ষক বা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ‘সরকারিভাবে’ অভিযোগ জানাতে পারবেন। অভিযোগকারীর পরিচয় গোপন রাখা হবে। অভিযোগ পাওয়ার পরেই তা খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে শিক্ষা দফতর। প্রয়োজনে তদন্ত কমিটিও গড়া হতে পারে। শিক্ষক ছাড়াও শিক্ষা দফতরের কর্মী ও অফিসারদের দুর্নীতি নিয়েও এই নম্বরে অভিযোগ জানানো যেতে পারে।
অন্য দিকে, গুয়াহাটি শহরের ১২টি স্কুল বন্ধ করে তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিলেন অসমের শিক্ষামন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। কলকাতার আমরি হাসপাতালে আগুন লাগার পরে অগ্নি নির্বাপণ ও বিপর্যয় মোকাবিলা বিভাগের তরফে গুয়াহাটির স্কুলগুলিতে পরিকাঠামোগত সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। তার ভিত্তিতে শহরের ১৭টি স্কুলকে বিপজ্জনক হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। তাদের বলা হয়েছিল, এক মাসের মধ্যে সুরক্ষাবিধি মেনে পরিকাঠামো ঢেলে সাজতে হবে। কিন্তু, গত সপ্তাহ অবধি শ্রীমন্ত শঙ্করদেব অ্যাকাডেমি, মডার্ন হাই স্কুল, সিরদি সাই বিদ্যামন্দির, সান ফ্লাওয়ার, প্রাগজ্যোতিষ ইংলিশ স্কুল, শ্রীরাম আকাদেমি-সহ ১২টি স্কুল তা করেনি। ফলে গুয়াহাটি পুরসভার তরফে শিক্ষা দফতরের কাছে চিঠি পাঠিয়ে, স্কুলগুলিতে তালা লাগিয়ে দেওয়ার অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। শিক্ষামন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেন, “নিয়মমতো, পুরসভার আমাদের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই। তারা নিজেরাই, স্কুলে তালা লাগাতে পারত। আমার কাছে, ছাত্রছাত্রীদর প্রাণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই, আমি, স্কুলগুলি বন্ধ করার জন্য পুরসভাকে সবুজ সংকেত দিয়েছি। পর্যাপ্ত সময় পেলেও ১২টি স্কুলের কর্তৃপক্ষ, অগ্নিনির্বাপণ বিধি মেনে, স্কুল ভবনে পরিবর্তন ঘটাতে উদ্যোগী হয়নি। তাই, বাধ্য হয়েই, আমাদের কঠোর হতে হচ্ছে।” |