দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বইয়েও এ বার বদলের হাওয়া!
এমনিতে কনকনে ঠান্ডার অভিজ্ঞতা ‘আমচি মুম্বই’-এ দুর্লভ। কিন্তু এ বার এখানেও হাড় কাঁপিয়ে দিচ্ছে শীত। স্বাভাবিকের তুলনায় পাঁচ ডিগ্রি কমে বৃহস্পতিবার মুম্বইয়ের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে গিয়েছিল ৮.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সাগরতীরের এই শহরে এমন শৈত্যপ্রবাহ বিরল।
তা হলে আরবসাগরের পাড়ে এ বার শীতের দাপাদাপি কেন?
আবহবিদেরা বলছেন, উত্তর ভারতের তীব্র শৈত্যপ্রবাহের জেরে কনকনে ঠান্ডার দাপট চলছে আরবসাগরের তীরেও। জ্যাকেট আর বাঁদর-টুপি পরেও কাঁপতে হচ্ছে ঠকঠকিয়ে। শুক্রবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু শীতের দাপট কমেনি। বাংলার প্রবাদ ‘মাঘের শীত বাঘ’ এ বার হানা দিয়েছে পশ্চিম সাগরতীরে।
কিন্তু তাতে বাংলার কী?
প্রাপ্তির একটা সম্ভাবনা আছে বলেই জানাচ্ছে হাওয়া অফিস। এমনিতেই পশ্চিমবঙ্গে চলতি মরসুমে শীতের পঞ্চম ইনিংস চলছে। ভূমধ্যসাগরের বায়ুপ্রবাহের পরিবর্তনটা পশ্চিম ভারতে যে-খেল্ দেখাচ্ছে, তার ঝলক উপচে আসতে পারে পূর্বেও। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আরবসাগরের তীরে হাওয়ার মর্জিবদলের জেরে পূর্ব ভারতেও শীত যদি আরও লম্বা ইনিংস বা ষষ্ঠ ইনিংস খেলে দেয়, অবাক হওয়ার কিছু নেই। এ-যাত্রা মুম্বই হয়তো কলকাতাকে টেক্কা দিচ্ছে। কিন্তু আখেরে শীত-ভাগ্যে ফের শিকে ছিঁড়তে পারে কলকাতার।
উচ্চচাপ বলয়ের বাউন্সারে গাঙ্গেয় দক্ষিণবঙ্গে কয়েক দিন থমকে গিয়েছিল শীত। শুক্রবার থেকে সে ফের ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। বৃহস্পতিবারের তুলনায় শুক্রবার কলকাতায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এক ধাক্কায় পাঁচ ডিগ্রি কমে গিয়ে হয় ১৪.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। স্বাভাবিকের তুলনায় দু’ডিগ্রি কম। আজ, শনিবার তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলে জানাচ্ছে হাওয়া অফিস। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই পর্যায়ে শীতের মেয়াদ আরও অন্তত চার দিন। শীত যে তাড়াতাড়ি বিদায় নেবে, এমন সম্ভাবনার কথা কেউই বলছেন না। আর তার দীর্ঘস্থায়িত্বে আরবসাগরের বায়ুবদলের অবদানও থাকতে পারে কিছুটা।
কিন্তু মুম্বই-মুলুকেই বা হাওয়ার এই মেজাজ পরিবর্তনের কারণ কী?
পুণের কেন্দ্রীয় আবহাওয়া পূর্বাভাস কেন্দ্র জানাচ্ছে, উত্তর ভারতের কনকনে ঠান্ডা হাওয়াই এই শৈত্যপ্রবাহের মূলে। আবার তারও পিছনে আছে পশ্চিমী ঝঞ্ঝার ধারাবাহিক তাড়না। আবহবিদেরা বলছেন, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের বায়ুপ্রবাহের পরিবর্তনই ঘনঘন পশ্চিমী ঝঞ্ঝার সৃষ্টি করছে। একের পর এক পশ্চিমী ঝঞ্ঝা ইরান-পাকিস্তানে বৃষ্টি ও শীত বাড়িয়ে কাশ্মীর হয়ে ঢুকে পড়ছে ভারতে। আর ইরান-পাকিস্তানে অনবরত পশ্চিমী ঝঞ্ঝা সৃষ্টির প্রভাব পড়ছে মুম্বইয়েও।
পুণের আবহবিজ্ঞান দফতরের বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ বার গোটা ইউরোপে, বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপে প্রচণ্ড ঠান্ডা পড়েছে। তা প্রভাবিত করছে ভূমধ্যসাগরের বায়ুপ্রবাহকে। রোমানিয়া, রাশিয়ায় জব্বর ঠান্ডা যত দিন চলবে, তত দিন ভূমধ্যসাগরের বায়ুপ্রবাহ অস্থির থাকবে। এর ফলে আরও পশ্চিমী ঝঞ্ঝা তৈরি হবে বলে জানাচ্ছেন আবহবিদেরা।
পশ্চিমবঙ্গ-সহ পূর্ব ভারতে শীত এ বার বারেবারেই চমক লাগাচ্ছে। উত্তর ভারতেও। সব শেষে পশ্চিম উপকূলে। শীত এ বার সামগ্রিক ভাবেই আবহবিদদের বিস্মিত করেছে। সে যেমন একের পর এক ইনিংস খেলেই চলেছে, তাতে আগামী দিনে আরও ভেল্কি দেখার অপেক্ষায় আবহবিদেরা।
এবং শীতের এই প্রতাপে আঞ্চলিক সঙ্কীর্ণতা নেই। তার এই সাম্রাজ্য বিস্তার মোটামুটি আন্তর্জাতিক বলেই আবহবিদদের অভিমত। তাঁদের একাংশ বলছেন, ইরান, পাকিস্তান ও ভারতে অস্বাভাবিক শীতের জন্য দায়ী ‘লা নিনা’ (প্রশান্ত মহাসাগরের আকস্মিক শীতল স্রোত)। লা নিনা প্রশান্ত মহাসাগরের কোনও এলাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে। তার ফলেই বায়ুপ্রবাহের এই পরিবর্তন।
দিল্লির মৌসম ভবনের বিজ্ঞানীরা অবশ্য বলছেন, লা নিনা-র প্রকোপে এমন শীত আগে দেখা যায়নি। এর পিছনে বিশ্ব উষ্ণায়নের ‘হাত’ থাকতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা। |