অবশেষে ‘রাজি’ হলেন নরেন্দ্র মোদী। উত্তরপ্রদেশে ভোট প্রচারে তিনি যাবেন বলে ঘোষণা করে দিল বিজেপি।
দিল্লিতে আজ দলের সদর দফতরে উত্তরপ্রদেশের প্রচারের দায়িত্বে থাকা বিজেপি নেতা মুখতার আব্বাস নকভি বলেন, “নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। এত দিন উনি গুজরাতে লাগাতার সদ্ভাবনা মিশনে ব্যস্ত ছিলেন। এ বারে উনি সময় দেবেন বলে জানিয়েছেন।’’ তবে কবে উত্তরপ্রদেশে যাবেন মোদী, সেটি এখনও স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না বিজেপি নেতারা।
তবে দলীয় সূত্রের মতে, সঞ্জয় জোশীকে উত্তরপ্রদেশের সংগঠনের দায়িত্বে নিয়ে আসাকে কেন্দ্র করে নিতিন গডকড়ীর উপর ক্ষোভ এখনও মেটেনি মোদীর। সে কারণে পঞ্জাব ও উত্তরাখণ্ডের ভোট প্রচারেও তিনি যাননি। উত্তরপ্রদেশে প্রথম দফায় নির্বাচন হওয়ার পর দ্বিতীয় দফার ভোটও এসে গেল, এখনও পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশে পা রাখেননি তিনি। ঘনিষ্ঠ মহলে গডকড়ী বলেছেন, উত্তরপ্রদেশে না গিয়ে মোদী বিজেপি সভাপতির তো বটেই, দলের ভাবমূর্তিতেও আঁচ ফেলছেন। তিনি জানেন, প্রচারে যাওয়ার থেকে না যাওয়ার ঘটনা আরও শিরোনামে আসবে। সঞ্জয় জোশীকে নিয়ে বিবাদের জেরে গত বছর দিল্লিতে জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক বয়কট করেও ঠিক এ ভাবে শিরোনামে এসেছিলেন তিনি।
কিন্তু বুধবার গুজরাত দাঙ্গার গুলবার্গ সোসাইটি হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিশেষ তদন্তকারী দলের (সিট) যে আংশিক রিপোর্ট জমা পড়ে, তাতে ক্লিনচিট পাওয়ার সম্ভাবনা দেখতে পেয়েই পরিস্থিতি নতুন মোড় নিতে থাকে। দাঙ্গায় নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে গুজরাত হাইকোর্টের রায় নিয়ে চুপচাপ থেকে সিট-এর খণ্ড-রিপোর্ট নিয়েই হইচই শুরু করে বিজেপি। গডকড়ী থেকে অরুণ জেটলি সকলেই প্রকাশ্যে মোদী-বন্দনায় নেমে পড়েন। গডকড়ী প্রতিনিধি পাঠিয়ে মোদীকে উত্তরপ্রদেশে যাওয়ার জন্য রাজি করানোর চেষ্টা করেন। মোদী তাঁদের জানান, তিনি সময় দেবেন।
কিন্তু বিজেপি নেতাদের আশঙ্কা এখনও মেটেনি। তাঁরা মনে করছেন, এ ধরনের আশ্বাস আগেও দিয়েছেন মোদী। তা সত্ত্বেও প্রচারে যাননি। লালকৃষ্ণ আডবাণীর মতো নেতারাও বাবুসিংহ কুশওয়াহাকে নিয়ে বিতর্কের পর ভোট-প্রচারে না যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু দলীয় নেতৃত্ব তাঁকে বোঝান, সে ক্ষেত্রে ভোটে বিরূপ প্রভাব পড়বে। প্রথম পর্বের আগে অযোধ্যায় পাঠিয়ে হিন্দুত্ব উস্কে দেওয়ার কাজটি আডবাণীকে দিয়ে সেরেছে দল।
বিজেপির এক শীর্ষ নেতার মন্তব্য, এ বার মোদী যদি সত্যিই ভোট প্রচারে যান, তাহলে ‘হিন্দুত্বের পোস্টারবয়’কে দিয়ে শেষ দু’টি ধাপে মেরুকরণের রাজনীতি করানো সম্ভব হবে। প্রথম ধাপে যে রেকর্ড ভোট পড়েছে, তাতে মায়াবতীর লোকসান হবে বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। সমাজবাদী পার্টি ও কংগ্রেস সংখ্যালঘু ভোট নিয়ে কাড়াকাড়ি করছে। শেষ দু’টি ধাপের নির্বাচনী এলাকায় প্রায় ৩৫ শতাংশ মুসলিম রয়েছেন। সেই অঞ্চলটি আবার জাঠ অধ্যুষিত। অজিত সিংহের রাষ্ট্রীয় লোকদল সেই এলাকায় প্রভাবশালী। ফলে আখেরে জাঠ ও মুসলিম দুই দিক থেকেই কংগ্রেসের লাভ হবে। সেখানে মোদী গিয়ে যদি মেরুকরণের কাজটি সেরে আসতে পারেন, তাহলে সংখ্যালঘু ভোট এককাট্টা হলে মুলায়মের লাভ হবে, কংগ্রেসের ক্ষতি। বাকি হিন্দু ভোট বিজেপি নিজের ঝুলিতে পুরতে পারবে। মোদী এলে বিজেপিশাসিত অন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদেরও ভোট প্রচারে আমন্ত্রণ জানানো হবে। মোদীর জন্যই আপাতত তাঁদের ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে। পাছে নতুন বিতর্ক শুরু হয় যে, বাকি সব মুখ্যমন্ত্রী এলেন, শুধু মোদী এলেন না।
এখন শেষ পর্যন্ত মোদী কথা রাখেন কি না, সেটা দেখার অপেক্ষাতেই রয়েছে দল। না আঁচালে বিশ্বাস নেই। |