আদালতে হেরে পিছু হটলেন সেনাপ্রধান
টু-জি স্পেকট্রাম দুর্নীতিতে কড়া অবস্থান নিলেও, সেনাপ্রধানের বয়স বিতর্কে মনমোহন সরকারকে স্বস্তি দিল সুপ্রিম কোর্ট। আইনি লড়াইয়ে পরাজিত হয়ে লড়াই থেকে সরে আসার কথা জানালেন সেনাপ্রধান জেনারেল বিজয়কুমার সিংহ। ঘোষণা করলেন, সরকার তাঁর ‘সম্মান রক্ষার’ প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় তিনি সন্তুষ্ট। সম্মান বাঁচল সরকারেরও।
১৯৫০ না ১৯৫১, কোন বছরকে তাঁর জন্মসাল ধরা উচিত, তা ঠিক করে দেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন সেনাপ্রধান। স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে কোনও সেনাপ্রধানের মামলা এই প্রথম। যার ফলে উচ্চপদস্থ সেনাকর্তাদের মধ্যে ক্ষমতার লড়াইও প্রকাশ্যে চলে এসেছিল। কিন্তু আজ আদালত রায় দিয়েছে, এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। অর্থাৎ ১৯৫১ নয়, ১৯৫০-এর ১০ মে-কেই সেনাপ্রধানের জন্মতারিখ হিসেবে ধরা হবে। সর্বোচ্চ আদালতের এই মনোভাবের ফলে মামলা প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়েছেন সেনাপ্রধান।
সরকারের বিরুদ্ধে তাঁর লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে সেনাপ্রধানকে অবশ্য তুলোধোনা করেছে আদালত। বিচারপতিরা জেনারেল সিংহকে বলেন, “এক জন সৈনিকের যা স্বপ্ন, তার সমস্ত কিছুই আপনি পেয়েছেন। তা হলে এ সব কেন?” আদালতকে প্রভাবিত করতে কম চাপ সৃষ্টি করেননি সেনাপ্রধান। নিজের বেপরোয়া মনোভাব বোঝাতে এই বিবৃতিও দিয়েছিলেন ১৯৫১-য় তাঁর জন্মসাল, এই স্বীকৃতি না মিললে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তিনি ইস্তফা দেবেন। কিন্তু সর্বোচ্চ আদালত তাঁর মনোভাবকে বিন্দুমাত্র রেয়াত করেনি।
কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে অবশ্য আদালতকে জানানো হয়েছে, জেনারেল সিংহের ‘বিশ্বাসযোগ্যতা’, ‘দক্ষতা’ বা ‘সততা’ নিয়ে তাদের কোনও সংশয় নেই। অবসরের আগে তাঁকে সেনাপ্রধানের পদ থেকে সরাতেও চায় না সরকার। সরকার এই মনোভাব নেওয়ায় এবং গোটা বিষয়টির শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়ে যাওয়ায় অবশ্য সন্তোষ প্রকাশ করেছেন সেনাপ্রধান। তাঁর বক্তব্য, এর ফলে তাঁর সম্মান পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হল। আর লড়াইয়ের দরকার নেই।
মুখে সন্তোষ প্রকাশ করলেও সর্বোচ্চ আদালতের রায়কে সেনাপ্রধানের কাছে বড়সড় ধাক্কা হিসেবেই দেখা হচ্ছে। কারণ নিজের জন্মসাল নিয়ে বহু দিন ধরেই লড়াই চালিয়ে আসছেন তিনি। সেনাবাহিনীর দুই বিভাগে তাঁর দু’রকম জন্মতারিখ নথিবদ্ধ রয়েছে। এক জায়গায় রয়েছে ১৯৫১ সালের ১০ মে। অন্য জায়গায় ১৯৫০ সালের ১০ মে। জেনারেল সিংহের দাবি, তাঁর জন্মসাল আসলে ১৯৫১। কিন্তু তা মানতে রাজি নয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। মন্ত্রকের যুক্তি, অতীতে পদোন্নতির সময় জেনারেল সিংহ নিজেই লিখিত ভাবে জানিয়েছিলেন যে তিনি ১৯৫০-কেই তাঁর জন্মসাল হিসেবে মেনে নিচ্ছেন। আজ সরকারের পাশে দাঁড়িয়ে বিচারপতি আর এম লোঢার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ রায় দিয়েছে, সেনাপ্রধান তাঁর লিখিত প্রতিশ্রুতি থেকে পিছু হটতে পারেন না।
জেনারেল সিংহ অবশ্য বরাবরই যুক্তি দিয়েছেন, তিনি নিজের চাকরির মেয়াদ বাড়াতে চান না। এটা তাঁর সম্মানের লড়াই। এ বিষয়ে তাঁর আপত্তি তিনি সরকারি রেকর্ডে নথিবদ্ধ রাখতে চেয়েছিলেন। ডিসেম্বরে সেনাপ্রধানের সেই আর্জিও খারিজ করে দেয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। আজ অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতে জানান, সেনাপ্রধানের ‘সম্মান’ বজায় রাখতে সরকার ডিসেম্বরের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করছে। কিন্তু সেনাপ্রধানের বয়স ১৯৫০ সালই থাকবে। আদালতও জানিয়েছে, জেনারেল সিংহ যখন ইউপিএসসি-র পরীক্ষা দিয়ে সেনায় যোগ দিয়েছিলেন, তখন আবেদনপত্রে লিখেছিলেন জন্ম ১৯৫০ সালে। সেই সময় সব রেকর্ডেই তাঁর ওই জন্মসাল নথিবদ্ধ রয়েছে। তাকেই জন্মসাল নির্দিষ্ট করে সরকার ভুল করেনি। সরকারি রেকর্ডে তাঁর জন্মসাল সংক্রান্ত কোনও ত্রুটি থাকলে তা তিনি আগেই কেন সংশোধন করেননি, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি লোঢা।
এই বয়স-বিতর্কে সেনাবাহিনীর মধ্যে উচ্চ পদের জন্য ক্ষমতার লড়াইও প্রকাশ্যে চলে এসেছিল। সেনাপ্রধানের ৩১ মে অবসর নেওয়ার কথা। ইস্টার্ন কম্যান্ডের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল বিক্রম সিংহ পরবর্তী সেনাধ্যক্ষ হবেন। কিন্তু ১৯৫১-কে তাঁর জন্মসাল হিসেবে ধরলে তাঁর অবসরের সময় আসবে ২০১৩ সালের মার্চে। সে ক্ষেত্রে পরবর্তী সেনাপ্রধান হবেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল কে টি পট্টনায়ক, যিনি এখন নর্দার্ন কম্যান্ডের প্রধান। সর্বোচ্চ আদালত প্রথম থেকেই অবস্থান নিয়েছিল, সেনাপ্রধানের সঙ্গে সরকারের এই সংঘাত প্রকাশ্যে আসা উচিত নয়। তাই গত সপ্তাহে দু’পক্ষকেই আদালতের বাইরে সমস্যা মিটিয়ে নেওয়ার জন্য সময় দেওয়া হয়। কিন্তু দুই শিবিরই অনড় মনোভাব নেয়। সেনাপ্রধান বনাম সরকারের এই বেনজির ‘সম্মানের লড়াইয়ে’ কারওর ভাবমূর্তিই যে উজ্জ্বল হয়নি, এ দিনও আদালত তা জানিয়ে দিয়েছেন। বিরক্তি প্রকাশ করে বিচারপতিরা বলেন, “ঘরের আবর্জনা প্রকাশ্যে আনলে গন্ধ তো ছড়াবেই।”
আদালতের কাছে সেনাপ্রধানের আবেদন ছিল, সর্বোচ্চ আদালতই ঠিক করে দিক কোন সালকে তাঁর জন্মসাল হিসেবে ধরা হবে। আজ আদালত জানিয়ে দিয়েছে, এ বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। জেনারেল সিংহের বিরুদ্ধে কোনও পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে তিনিই সেনাপ্রধানের পদে থাকবেন, আদালত তা সুনিশ্চিত করতে চায়।
আজ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকও আদালতের এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে। মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এ কে অ্যান্টনিও আশা করছেন, এই বিতর্ক মিটল। সেনাপ্রধানের ঘনিষ্ঠ মহলেও ইঙ্গিত মিলেছে, সুযোগ থাকলেও তিনি আদালতের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন জানাচ্ছেন না।

বয়স নামা
১৯৭০
সেনাবাহিনীতে যোগ দিলেন ভি কে সিংহ।
২০০২
সেনার অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল এবং মিলিটারি সেক্রেটারির নথিতে
আলাদা আলাদা জন্মতারিখ। ভুল ঠিক করার আবেদন ভি কে সিংহের।
২০০৬
লেফটেন্যান্ট জেনারেল হলেন ভি কে সিংহ। ১৯৫০ সালেই জন্ম বলে মুচলেকা দিলেন।
২০০৮
কম্যান্ডার হলেন ভি কে সিংহ। ১৯৫০ সালে জন্ম বলে ফের মুচলেকা দিলেন।
২০১০, মার্চ
সেনাপ্রধান হলেন ভি কে সিংহ। পূর্বসূরি দীপক কপূরকে
চিঠিতে জানালেন, জন্মতারিখ বিতর্ক ‘শেষ হয়ে গিয়েছে।’
২০১০, অক্টোবর
ভি কে সিংহের জন্ম ১৯৫১ সালেই। তথ্যের অধিকার আইনে
আবেদনের জবাবে জানালেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের আইনি উপদেষ্টা।
২০১১, মে
আইনি পরামর্শ নেওয়ার আগে জানানো হয়নি, প্রতিবাদ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের।
২০১১, মে
জন্মতারিখ ঠিক করতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে আবেদন ভি কে সিংহের।
২০১১, জুলাই
অ্যাটর্নি জেনারেলের মত নিয়ে আবেদন খারিজ।
২০১১, অগস্ট
ফের আবেদন ভি কে সিংহের।
২০১১, ডিসেম্বর
ফের খারিজ আবেদন।
২০১২, ১৬ জানুয়ারি
সুপ্রিম কোর্টে ভি কে সিংহ।
২০১২, ১০ ফেব্রুয়ারি
ভি কে সিংহের আবেদন গ্রহণ করতে রাজি হল না কোর্ট। আবেদন প্রত্যাহার।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.