লেকের ধার থেকে মিলল স্কুলছাত্রের দেহ
দু’দিন ধরে নিখোঁজ একাদশ শ্রেণির এক স্কুলছাত্রের দেহ উদ্ধার হল রবীন্দ্র সরোবর থেকে। শুক্রবার বেলা ১১টা নাগাদ লেকে ভেসে ওঠে তার দেহটি। পুলিশ জানায়, তার নাম ঋজু বসাক (১৭)। লা মার্টিনিয়ার ফর বয়েজ স্কুলের কলা বিভাগে পড়ত সে। বুধবার সন্ধ্যা থেকে তার খোঁজ মিলছিল না।
পুলিশ জানায়, ঋজুর বাড়ি বাড়ি মুচিপাড়া থানা এলাকায় ১০ নম্বর চৈতন সেন লেনে। বাবা কাজল দাস এবং মা মিত্রার একমাত্র সন্তান ছিল সে। কাজলবাবুর একাধিক ব্যবসা আছে।
পুলিশ জেনেছে, কিছু দিন ধরে ঋজুর মানসিক অবসাদ চলছিল। স্বভাবে চুপচাপ ছেলেটি কবিতা, গল্প লিখত। গিটার বাজিয়ে গানও গাইত। বাবা-মাকে গত কয়েক দিন ধরেই বলছিল, সে সৃজনশীল লেখা লিখতে পারছে না। বাড়িতে এ-ও জানিয়েছিল, ক’টা দিন ফুটপাথে কাটাতে চায়। লা মার্টিনিয়ার ফর বয়েজ স্কুলের তরফে সুপ্রিয় ধর বলেন, “গত জুন মাসে এই স্কুলে ভর্তি হয়েছিল ঋজু। সৃজনশীল ছেলে, ভাল ছাত্রও ছিল সে। শিক্ষকদের সঙ্গে খুব ভাল সম্পর্ক ছিল ওর।”
পুলিশের বক্তব্য, আপাতদৃষ্টিতে ওই কিশোরের দেহে আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। তার মোবাইলেরও হদিস নেই। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান দময়ন্তী সেন বলেন, “ঋজু আগে এক বার ঘুমের ওষুধ খেয়েছিল বলে জানা গিয়েছে।”
ঋজুর জ্যাঠামশাই অরূপকুমার বসাক জানান, বুধবার বন্ধুদের সঙ্গে একটি সেমিনারে গিয়েছিল সে। সেমিনার শেষে তাড়াতাড়ি ফিরবে বলেও মাকে জানিয়েছিল। কিন্তু ওই রাতে মিত্রাদেবীর মোবাইলে তরুণকুমার মল্লিক নামে এক ব্যক্তির ফোন আসে। তিনি জানান, ঋজুর স্কুলের ব্যাগ, কোট, টাই, বেল্ট, মোজা চারু মার্কেট থানার কাছে একটি সিনেমা হলের সামনে পড়ে আছে। ওই থানাতেই পরে ঋজুর পরিবারের তরফে ডায়েরি করা হয়। সেমিনার শেষে ঋজু কোথায় গিয়েছিল, তা বলতে পারেনি তার সহপাঠীরা।
ঋজুর পরিবারের সূত্রে পুলিশ জেনেছে, সে মাঝেমধ্যে কিছু কবরস্থানে বসে লেখালেখি করত। সে সব জায়গাতেও তল্লাশি চালায় পুলিশ। বুধবার রাত থেকে ছেলেটির মোবাইল বন্ধ ছিল। শুক্রবার সকাল সওয়া ৯টা নাগাদ কিছুক্ষণের জন্য ঋজুর মোবাইলে সাড়া মেলে। অরূপবাবু বলেন, “আমিই ফোন করি। ওই প্রান্তে কেউ আমায় প্রশ্ন করে, তুমি কে বলছ? চেঁচামেচি হচ্ছিল বলে ভাল করে শুনতে পাইনি।” পুলিশ জানায়, সকালে ঋজুর মোবাইলের টাওয়ারের অবস্থান ছিল শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোড। তখনই লেকের কাছে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। বিকেলে ঋজুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঋজুর মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বাবাও কথা বলার অবস্থায় নেই।

কেন হয়?
ক্রিয়েটিভ রাইটিং শিক্ষকের সঙ্গে ছেলেটির সম্পর্ক কেমন ছিল, দেখা দরকার। কারণ, শিক্ষক খুব পছন্দের হলে অনেক সময়েই তাঁর প্রিয়পাত্র হতে চায় ছাত্র। তার হয়তো মনে হচ্ছিল, খুব ভাল লিখতে পারছে না সে। তাই শিক্ষক তেমন পছন্দ করবেন না। তা ঘিরে তৈরি হতে পারে হতাশা। এখনকার বাবা-মায়েরাও তো খুব ‘প্রোটেকটিভ’। অভাব সম্পর্কে প্রায় কোনও ধারণাই তৈরি হয় না তাই ছেলেমেয়েদের। এ দিকে আবার তাদের ঘিরেই থাকে অভিভাবকদের অতিরিক্ত প্রত্যাশা। সব ভাল না হলেই তাই সেই চাপে সহজে ভেঙে পড়ে সন্তানেরা।
বাবা-মায়ের সঙ্গ কম পেয়ে আজকাল অধিকাংশ শিশুই খুব একা। তাদের ভাল লাগা, মন খারাপ বা সমস্যা ভাগ করে নেওয়ারও কেউ থাকে না। আবার রাগ-দুঃখ-আবেগ নিয়ন্ত্রণের শিক্ষাও দেন না বড়রা। ফলে প্রেমের কথা জানানানি হওয়া বা শিক্ষকের বকুনিতে সহজেই মৃত্যুর মতো চরম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে ছেলেমেয়েরা।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.