এলসিডি ও এসি বসানোর পাশাপাশি ঘরগুলির ভোল পাল্টে ফেলায় পর্যটকদের কাছে আকর্ষণ হারাতে বসেছে জলদাপাড়ার হলং বনবাংলো। পরিবেশ প্রেমী থেকে পর্যটন সংস্থার কর্ণধার সকলে আজ জলদাপাড়া জঙ্গলের মাঝে ওই বাংলোর ঘরগুলির নয়া চেহারা দেখে বেজায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। যেখানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ঐতিহ্যবাহী জায়গাগুলিকে অবিকৃত রেখে সাজানোর কথা বলছেন, সেখানে হলং বাংলো যেভাবে বিকৃত করা হয়েছে তাতে ক্ষুব্ধ পর্যটন প্রেমীরা মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। খুব দ্রুত বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে ঘরগুলি পুনরায় পুরানো চেহারায় ফিরিয়ে আনা না হলে হলং-এর আকর্ষণ তলানিতে ঠেকবে বলে আশঙ্কা করছেন ওই সমস্ত প্রকৃতি প্রেমী ও পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত লোকজনেরা। প্রকৃতি প্রেমী তথা ভ্রমণ সাহিত্যিক গৌরীশঙ্কর ভট্টাচার্য হলং-এর ঘরগুলি দেখে বেজায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁর কথায়, “ঘরগুলিকে যেভাবে ঢেলে সাজার নামে নষ্ট করা হয়েছে তা মানা যায় না। জঙ্গলের মাঝে ওই বাংলোর ঘরগুলিতে টেলিভিশন ও এসি বসানোর মানে কী বুঝতে পারছি না। আগেকার আমেজ তো এখন আর কোনও ভাবে মিলবে না।” পর্যটন সংস্থা হেল্প ট্যুরিজমের কর্ণধার রাজ বসু বলেন, “হলং বাংলোকে ব্যবহার করে পর্যটন শিল্পের জোয়ার আনা যেতে পারত। বনের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে ঘরগুলি সাজানো প্রয়োজন ছিল। যেটা হলং-এর ক্ষেত্রে হয়নি। পর্যটন দফতর টাকা দিয়েছে। সে টাকা দিয়ে বিশেষজ্ঞের মতামত না নিয়ে ঘর সাজানো হয়েছে। এতে পর্যটন শিল্পের ক্ষতি হলে মুখ্যমন্ত্রী হয়তো তা মেনে নেবেন না।”
হলং ঘুরে যাওয়া পর্যটকদের একটি বড় অংশও নয়া ঘরগুলিতে রাত কাটানোর পরে বন কর্মীদের কাছে ক্ষোভের কথা জানাতে ভুলছেন না। কয়েকজন পর্যটক জানান, শহরের কোনও হোটেলের সঙ্গে হলং-এর তফাত আজ নেই। গত বার পর্যন্ত ঘরের বড় জানালা দিয়ে বনের সৌন্দর্য, বুনো ঘ্রাণের পাশাপাশি বন্য জন্তুদের নুন খাওয়ার দৃশ্য উপভোগ করা যেত। এসি মেশিন বসানোর জানালায় দুটি করে পাল্লা বসানো হয়েছে। জানালার উপর মোটা পর্দা দিয়ে এমনভাবে জড়িয়ে ফেলা হয়েছে যাতে সহজে জানালা খোলা সম্ভব হচ্ছে না। সেগুন কাঠের দেওয়ালে নতুন করে প্লাইবোর্ড সেঁটে দিয়ে রঙ করায় পাকা ঘরের আদল এসেছে। এখনও মেঝেয় কার্পেট পাতা না হলেও এসি মেশিন থেকে এলসিডি বসানো হয়েছে। বনের পরিবেশ উপভোগ করতে এসে বদ্ধ ঘরে আটকে পড়তে হচ্ছে পর্যটকদের। গত বছর ২০ লক্ষ টাকা হলং বাংলো সাজানোর জন্য বরাদ্দ করে পর্যটন দফতর এলসিডি এবং এসি বসানো হবে বলে জানতে পেরে প্রথমে আপত্তি করেন বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন। কিছুদিন পরে বনমন্ত্রীর সম্মতি পেয়ে কাজ শুরু হয়। নয়া সাজে হলং যে প্রকৃতি প্রেমী পর্যটকরা মেনে নিতে পারছেন না তা প্রকাশ্যে জানিয়ে দিচ্ছেন। |