এক মাস আগে আশা জাগিয়েও আলো দেখাল না শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধির হার। ২০১১-র ডিসেম্বরে তা বাড়ল নামমাত্র ১.৮ শতাংশ হারে।
গত ২০১০ সালের ডিসেম্বরে এই হার ছিল ৮.১%। খনন এবং পণ্য উৎপাদন ক্ষেত্রই শিল্প বৃদ্ধির হারকে টেনে নামিয়েছে বলে শুক্রবার সরকারি সূত্রের ইঙ্গিত। খনন ক্ষেত্রে উৎপাদন কমেছে ৩.৭% (গত বছরের বৃদ্ধি ৫.৯%)। মূলধনী পণ্য উৎপাদন কমেছে ১৬.৫% (গত বছরের বৃদ্ধি ২০.২%)। সাধারণ ভাবে পণ্য উৎপাদন বেড়েছে মাত্র ১.৮% (গত বছরের বৃদ্ধি ৮.৭%)।
এর জেরে এবং ইউরোপ জুড়ে আর্থিক সঙ্কটের কারণে এ দিন মুম্বই বাজারের সূচক সেনসেক্সও ৮২ পয়েন্ট পড়েছে। ভারতে চড়া সুদের হার শিল্পে লগ্নি বাড়ানোর পক্ষে অনুকূল নয় বলেই মনে করছে শিল্পমহল। আর, সেটাই শিল্পোৎপাদন বাড়ায় প্রধান বাধা। নতুন লগ্নির পথ প্রশস্ত করতে তাই রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে কম সুদের জমানায় ফিরতে জোরালো আর্জি জানিয়েছে সিআইআই-সহ সব বণিকসভা। শুধু সুদ বৃদ্ধি থমকে রাখার দাওয়াইয়ে (যা গত দু’টি ঋণনীতিতেই করেছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক) কাজ হবে না বলে মনে করছে তারা।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মতে ডিসেম্বরে শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধির এই তলানিতে নেমে আসা ‘হতাশাজনক’। তবে আর মাস দু’য়েকের মধ্যেই তা ঘুরে দাঁড়াবে বলে তাঁর ধরণা। প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান সি রঙ্গরাজনের মতেও জানুয়ারি থেকে মার্চের ত্রৈমাসিকে লগ্নির পরিবেশ অনুকূল হলে স্বস্তিজনক অবস্থায় পৌঁছবে শিল্পোৎপাদন। |
প্রসঙ্গত, সঙ্কোচনের ধাক্কা সামলে নভেম্বরেই ৫.৯% বেড়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল শিল্পোৎপাদন। ফলে বিশ্ব-মন্দার আশঙ্কা সত্ত্বেও আশার রুপোলি রেখা দেখেছিল কেন্দ্রীয় সরকারও। গত অক্টোবরেই শূন্যের থেকে ৪.৭% (সংশোধিত হিসাব অনুযায়ী) নীচে নেমে গিয়েছিল শিল্পোৎপাদন সূচক। অর্থাৎ, কল-কারখানায় উৎপাদন বাড়া তো দূরের কথা। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় তা কমে গিয়েছিল প্রায় ৫%। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে নভেম্বরে শিল্পোৎপাদন বাড়ে ৫.৯%। কিন্তু এক মাস বাদে ডিসেম্বরে তা ১.৮ শতাংশে নেমে আসায় আগামী মাসে ঋণনীতিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের উপর সুদ কমানোর জন্য নতুন চাপ তৈরি হয়েছে। বৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের নীচে নামার সম্ভাবনা তাতে আরও ইন্ধন জুগিয়েছে।
রয়টার্সের সমীক্ষায় অর্থনীতিবিদরা ডিসেম্বরে ৩.৪% শিল্প বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, বাস্তবে তা ১.৮ শতাংশে নেমে আসায় শিল্পমহলের সঙ্গে সুর মিলিয়ে তাঁরাও লগ্নিতে উৎসাহ দিতে নীতি বদলের পক্ষে মত দিয়েছেন। স্পষ্টতই সুদ কমানোর প্রয়োজনীয়তার দিকেই আঙুল তুলেছেন তাঁরা। তাঁদের মতে বিনিয়োগের বৃত্তে চড়া সুদের জমানা যে বাধা সৃষ্ট করেছে, তার প্রতিকার এখনও করা হয়নি। |