বেড়ানো...
ম্যাকাও মারকাটারি
গিন্নি আর ছেলেমেয়েকে নিয়ে লাস ভেগাস যাওয়ার ইচ্ছে?
কিন্তু পারছেন কই? আমেরিকার ভিসা নিয়ে যা কড়াকড়ি। তার ওপর চার জনের প্লেন ভাড়াই তো প্রায় আড়াই লাখ টাকা।
তা হলে কি উপায় নেই ভেগাসের নাইটলাইফ দেখার আর ক্যাসিনোতে বসার?
কে বলল নেই? অবশ্যই আছে। কলকাতা থেকে খুব দূরেও নয়। হংকং থেকে এক ঘণ্টা ফেরি করে গেলেই পৌঁছে যাবেন এশিয়ার লাস ভেগাসে। এমনকী যাঁরা ভেগাস দেখেছেন, তাঁরাও চমকে যাবেন দেখে, কী রকম ‘কার্বন কপি’ করে ফেলা হয়েছে আন্দ্রে আগাসির শহরকে।
এবং পকেটে চাপ অনেক কম। এই লাস ভেগাস আপনি খুব কম খরচে ঘুরে আসতে পারেন। এক বার গিয়ে পড়লে হোটেলের কোনও অভাব নেই এখানে। আর উদ্দাম আনন্দ করতে চাইলে ভেনিশিয়ান হোটেলই হল সেরা জায়গা।
কেন? কী আছে সেই হোটেলে?
তা হলে শুনুন। হোটেলের ভেতরেই নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের মতন ১৫ হাজার আসনের একটা স্টেডিয়াম। আর সেই হোটেলে আপনার ঘর যদি হয় বাবুঘাটে, ডিনার খেতে আপনাকে হেঁটে যেতে হবে অন্তত ইডেন গার্ডেন্স পর্যন্ত। গোটা হোটেলটা এত বড় যে রেস্তোরাঁই আছে প্রায় ৩০টা।
আর মনোরম ম্যাকাওয়ের এই রকম এক স্বর্গীয় প্রেক্ষাপটেই আয়োজিত হয়েছিল এ বারের ‘জি সিনে অ্যাওয়াডর্’। সেই সুবাদে সেখানে গেলে দেখতে পেতেন দুর্লভ সব দৃশ্য। এই যেমন, গুচ্চির শোরুম থেকে ব্যাগ কিনে বেরোচ্ছেন প্রিয়ঙ্কা চোপড়া। কিংবা অ্যাপ্রিকট দিয়ে কর্নফ্লেক্স খাচ্ছেন গৌরী খান। শাহরুখ খান রিসেপশনের মেয়েটিকে বলছেন, তাঁর ঘরে যেন ১০টা দেশলাই বাক্স দেওয়া হয়।
এ তো গেল ‘জি সিনে অ্যাওয়ার্ডসের গল্প।
এ তো গেল স্টারদের গল্প। আর আপনি? আপনার জন্য কী আছে হোটেলে?
গোটা নিউ মার্কেটাই রয়েছে হোটেলের ভেতরে। আরও আছে। লাস ভেগাসের বিখ্যাত শো ‘সার্ক দ্য সোলেইল’ দেখতে পাবেন হোটেলের ১৮০০ সিটের অডিটোরিয়ামে।
এবং আছে পৃথিবীর সব চেয়ে বড় ক্যাসিনো এই তিন হাজার কামরার ভেনিশিয়ান হোটেলে।
কলকাতা থেকে এখনও সরাসরি উড়ান নেই। তাই মুম্বই, দিল্লি বা চেন্নাই হয়ে চার ঘণ্টায় পৌঁছে যান হংকং। সেখান থেকে জুয়া-নগরী ম্যাকাও।
লাস ভেগাসের মতো এখানেও অসংখ্য হোটেল। অসংখ্য বিদেশি ব্র্যান্ডের জিনিসপত্র কেনাকাটার সুযোগ। পৃথিবী বিখ্যাত রাঁধুনিদের সিগনেচার রেস্তোরা।ঁ আর কোটি কোটি ডলারের জুয়া খেলা।
কিন্তু অত হোটেলের মধ্যেও ম্যাকাওয়ের হৃদয় অবশ্যই এই ভেনিশিয়ান। কিন্তু ভেনিশিয়ান কেন? ভেনিসের সঙ্গে সম্পর্ক আছে নাকি?
আছে, অবশ্যই আছে। শেলডন অ্যাডেলসন নামের এক ভদ্রলোক পৃথিবীর ষোড়শতম আর আমেরিকার অষ্টম ধনী মানুষ। তিনি এই হোটেলের মালিক। লাস ভেগাসে তাঁর দু’টো হোটেল ভেনিশিয়ান আর প্যালাজো। সঙ্গে সিঙ্গাপুরের মারিনা বে স্যান্ডস। সেই লাস ভেগাসের কার্বন কপি ম্যাকাওতে এই ভেনিশিয়ান।
“হনিমুনে ভেনিসে গিয়েছিলাম। ওখানে গন্ডোলাতে ঘুরতে ঘুরতে মনে হল এ রকম একটা কৃত্রিম হোটেল যদি বানানো যায় যেখানে জল আছে, জলের উপর ভাসছে গন্ডোলা। এক কথায় সুপার লাক্সারি। তৈরি করলাম ভেনিশিয়ান,” বলছিলেন অ্যাডেলসন।
রাতের আলোয় ভেনিশিয়ান ম্যাকাও জি সিনে অ্যাওয়ার্ডসে শাহরুখ ও গৌরী
এবং ভুল বলেননি। হোটেলের ভেতর দিয়ে বয়ে চলছে জলের স্রোত। সেই জলে গন্ডোলার সঙ্গে ইতালিয়ান গান। সঙ্গে কৃত্রিম আকাশ আঁকা হোটেলের ছাদ। এবং গন্ডোলা যে কৃত্রিম নদীর ওপর দিয়ে ভেসে যাচ্ছে তার পাশে ডিজাইনার দোকান।
অনেক দিন ধরেই আডেলসন নাকি ভারতেও এমন একখানা হোটেল বানানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু ক্যাসিনো খোলা নিয়ে অসুবিধে আছে বলে সেটা হয়নি। এই হোটেল চেন যে কোম্পানির অংশ সেই স্যান্ডস গোষ্ঠীর কলকাতাতেও ব্যবসা ছড়ানোর পরিকল্পনা আছে। “আমাদের এই হোটেলে কাজ করেন ১৬ হাজার কর্মী। সিঙ্গাপুরেও পর্যটনকে দারুণ ভাবে সমৃদ্ধ করেছে আমাদের মারিনা বে স্যান্ডস। ম্যাকাওয়ের অর্থনীতিও এই একটা হোটেলের জন্য অনেকটা বদলে গেছে। ধরুন কলকাতা বা তার আশেপাশে যদি আমাদের এমন একটা প্রপার্টি থাকত, কলকাতাতেও আমরা অনেক কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারতাম,” বললেন অ্যাডেলসন।
এখানেই শেষ নয়। কসমেটিক সার্জারি নিয়ে যখন সারা বিশ্বে এত মাতামাতি সেই সময় এই ভেনিশিয়ানেই রয়েছে চিনের সব চেয়ে ভাল কসমেটিক সার্জারি ক্লিনিক। শোনা যায় হলিউড সেলিব্রিটিরা নাকি এখানে এসে নাক, ঠোঁট সাজিয়ে বা মেরামত করে যান। জি সিনে অ্যাওয়ার্ডস চলাকালীন সারা বিশ্বের মিডিয়া উপস্থিত ছিল বলেই কোনও বলিউডি নায়িকাকে ওই চার দিন কসমেটিক সার্জারি ক্লিনিকে ঢুকতে দেখলাম না। কিন্তু এক ক্লিনিক কর্মী বললেন, অন্তত তিন জন তাঁদের কাছে নাক আর ঠোঁটের ছাঁচ ঠিক করার খরচ চেয়ে পাঠিয়েছিলেন।
এলাহি এই ব্যবস্থার খরচ কিন্তু বেশি নয়। ভাল ডিল পেলে ভেনিশিয়ানে ভাড়া ছয় হাজার থেকে আট হাজার টাকার মধ্যে। এবং এই হোটেলে সবই স্যুইট। তবে যদি মনে করেন, ম্যাকাওতে শপিং করবেন, তা হলে কিন্তু মানিব্যাগ বেশ মোটা হতে হবে। কারণ এখানে সবই ডিজাইনারওয়্যার। তা কেনাকাটা না হয় নাই করলেন তার জন্য তো ব্যাঙ্কক আছেই।
কিন্তু যদি অর্ধেক খরচে লাস ভেগাসের মজা উপভোগ করতে চান, তা হলে বোধহয় ম্যাকাওই সেরা জায়গা।
আর একটা কথা। অনেকেই ক্যাসিনোতে হাজার টাকা নিয়ে খেলা শুরু করে তিন লাখ পর্যন্ত জিতে বাড়ি ফিরেছেন। আবার অনেকে সর্বস্বান্তও হয়েছেন।
সুতরাং ফুর্তি করুন বিন্দাস। কিন্তু ক্যাসিনোতে সামলে।
এনজয়!!
যাত্রা-ফর্দ
• কলকাতা থেকে সরাসরি ফ্লাইট নেই। দিল্লি, মুম্বই বা চেন্নাই হয়ে যেতে হবে। ভায়া হংকং। ফ্লাইট ভাড়া মাথাপিছু ১১,০০০ টাকা (দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই থেকে)।
• হংকং থেকে ম্যাকাও যেতে হয় স্টিমারে। খরচ ১৪০০ টাকা মাথাপিছু।
• ম্যাকাও যাওয়ার আগে হংকংয়ে অবশ্যই খানিকটা সময় কাটান। এখানকার ডিজ্নিল্যান্ড বাচ্চাদের দারুণ পছন্দ হবে। ডিজ্নিল্যান্ডে ঢোকার খরচ ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা মাথাপিছু।
• ম্যাকাওয়ে নানা বাজেটের হোটেল আছে। খরচ ৩০০০ টাকা থেকে ১০,০০০ টাকা। ভেনিশিয়ান হোটেলে আগে থেকে বুক করলে ৬০০০ টাকাতেও ঘর পেতে পারেন।
• ম্যাকাওতে প্রত্যেক হোটেলের জেটি থেকে পিক-আপ এবং ড্রপ আছে। সেটা নিতে ভুলবেন না।
• ম্যাকাও রিল্যাক্স করার জায়গা। সব হোটেলেই নিজস্ব শপিং মল, স্পা, মিনি গল্ফ কোর্স আর ক্যাসিনো আছে। সুতরাং এক বার ঢুকে পড়লে ছুটিটা হোটেলের মধ্যেই দিব্যি কাটিয়ে দিতে পারেন। ভেনিশিয়ান ম্যাকাওতে উপরি হল গন্ডোলায় করে ভাসার আকর্ষণ।
• সারা বছরই রাতের দিকে ঠান্ডা পড়ে। সঙ্গে হাল্কা গরম জামাকাপড় রাখুন।
• আর হ্যাঁ, কলকাতায় যেমন চাইনিজ খান, তেমন চাইনিজ কিন্তু ম্যাকাওতে আশা করবেন না।
• ১ হংকং ডলার= ৭ ভারতীয় টাকা (আনুমানিক)


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.