নিজস্ব সংবাদদাতা • রানিগঞ্জ |
কেন্দ্রীয় বাহিনী সিআইএসএফ-এর বিরুদ্ধে এক মহিলার প্রতি অশালীন ব্যবহারের অভিযোগ তুলে ইসিএলের কুনস্তরিয়া এরিয়ার নারায়ণকুড়ি খোলামুখ খনির অফিসে চড়াও হলেন শ’খানেক স্থানীয় বাসিন্দা। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ সেখানে কর্মীদের মারধরও করা হয়। তবে রাত পর্যন্ত পুলিশ কাউকে ধরেনি।
ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার রাতে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ওই রাতে সিআইএসএফ গ্রামে এক মহিলার সঙ্গে অশালীন আচরণ করে। এ দিন তাঁরা ওই জওয়ানদেরই খুঁজতে এসেছিলেন। তাঁদের খোঁজ মেলেনি। কিন্তু কোলিয়ারির শিফ্ট ইনচার্জ এস কে রুজ, ইলেকট্রিশিয়ান এন কে চট্টোপাধ্যায়, কোষাধ্যক্ষ জয়ন্ত অগ্রবাল-সহ ১৫ জনকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। তাঁদের প্রথমে আলুগড়িয়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরে ইসিএলের বাঁশড়া এরিয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
কুনস্তরিয়া এরিয়ার এজিএম এস এন সুমন অবশ্য পাল্টা অভিযোগ করেন, “কয়লা চুরিতে বাধা পেয়ে কয়লাচোরেরাই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। তারা খোলামুখ খনির কাজে নানা ভাবে বিঘ্ন ঘটাতে চাইছে। গত বছর ৩ নভেম্বর আমাদের সদর কর্তৃপক্ষ এই নিয়ে আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনারের চিঠিও দেয়। তার ফলে চুরি খানিকটা বন্ধ হয়েছিল। কিন্তু আবার তারা সক্রিয় হয়েছে।”
ইসিএল সূত্রের খবর, এরিয়ার জিএম আর আর শর্মা এ দিন পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দকে ফোন করে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার অনুরোধ করেন। পুলিশ কমিশনার বলেন, “ওখানে যাতে কাজ বিঘ্নিত না হয়, তা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। মারধরের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। সিআইএসএফ-এর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়েও তদন্ত হচ্ছে। সত্য প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।”
কিছু দিন আগেই ওই খনি থেকে কয়লা পাচারের অভিযোগে ছ’জনকে গ্রাম থেকে ধরে এনেছিল পুলিশ। তাদের আত্মীয়-পরিজনেরা তৃণমূলের রানিগঞ্জ ব্লক সভাপতি সেনাপতি মণ্ডলের বাড়িতে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। সেনাপতি তখন দাবি করেছিলেন, পুলিশ ষড়যন্ত্র করে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের ধরেছে। খোলামুখ খনি ও ডাম্পার থেকে প্রকাশ্যে কয়লা চুরি হচ্ছে। অথচ পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে কাউকে গ্রেফতার করছে না। এ দিন তিনি বলেন, “আমি কিছু জানি না।”
সিপিএমের রানিগঞ্জ জোনাল কমিটির সম্পাদক রুনু দত্ত আবার এই খোলামুখ খনির বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর দাবি, “এই ধরনের খনি করতে গেলে পঞ্চায়েত থেকে ‘নো অবজেকশন’ সার্টিফিকেট নিতে হয়। ইসিএল তা তো নেয়ইনি, পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ছাড়পত্রও নেয়নি।” ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় পাল্টা দাবি করেন, “পঞ্চায়েত থেকে সার্টিফিকেট নেওয়ার কোনও আইন নেই। তবু আমরা পঞ্চায়েতের সঙ্গে আলোচনা করেই কাজ শুরু করেছি। পরিবেশ মন্ত্রকের কাছে ক্লাস্টার হিসেবে নারায়ণকুড়ির নামও অন্তর্ভুক্ত আছে। গত রাতে কয়লা চুরির সময়ে সিআইএসএফ এক জনকে হাতেনাতে ধরায় এই হামলা চালানো হয়েছে।” |