ধান বেচতে ব্যর্থ চাষিরা
ধান কেনা নিয়ে চাষিদের ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে বামপন্থী কৃষক সংগঠনের আন্দোলনে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে দক্ষিণ দিনাজপুর। বিডিও অফিস ঘেরাও, ভাঙচুর, হাটে ধান লুঠ-সহ বিভিন্ন এলাকায় রোজ পথ অবরোধের জেরে পরিস্থিতি ঘোরালো হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের তরফে চালকলগুলির মাধ্যমে রোজ দু থেকে তিন জায়গায় শিবির করে সহায়ক দামে ধান কেনা হচ্ছে। কিন্তু অন্যান্য ব্লকে হাটগুলিতে চাষিরা ধান নিয়ে গেলেও কেনার কেউ নেই। ফলে তপন ব্লকের গুড়ইল অঞ্চলের মতো কুমারগঞ্জের জাকিরপুর, ডাঙা অঞ্চলের মত বিস্তীর্ণ এলাকার ছোট চাষিরা এখনও ধান বেচতে পারেননি। সরকারি শিবির কবে হবে, তাও জানা নেই। ফলে ক্ষোভ বাড়ছে। আর চাষিদের এই ক্ষোভ পুঁজি করেই দক্ষিণ দিনাজপুরের হারানো জমি ফিরে পেতে ময়দানে নেমে পড়েছে সিপিএম এবং আরএসপি। চেকের বদলে নগদ টাকায় প্রতি হাটে সরকারি সহায়ক দামে চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনার দাবিতে বৃহস্পতিবার আরএসপির সংযুক্ত কিসান সভার নেতৃত্বে তপন বিডিও অফিসে রাত অবধি ঘেরাও বিক্ষোভ চলে। বিডিওকে না-পেয়ে দফতরে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ। বিক্ষোভকারীদের ছোঁড়া ইটের আঘাতে দুই পুলিশ কর্মী-সহ ৩ জন জখম হন। শুক্রবার দুপুরে কুশমন্ডি থানার ঝাপরাগাছি এলাকায় সিপিএমের সারা ভারত কৃষক সভার নেতৃত্বে চাষিরা ধান কেনার দাবিতে এক ঘন্টা পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। সিপিএমের জেলা সম্পাদক তথা জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক মানবেশ চৌধুরি বলেন, “কৃষকের কাছ থেকে ন্যায্য দামে ধান কেনার দাবিতে আগামী ৩০ ডিসেম্বর জেলা জুড়ে কৃষক সভার ডাকে পথ অবরোধ হবে।” দক্ষিণ দিনাজপুরে প্রায় ৪০ টি চালকল। তার মধ্যে মাত্র ১২টি চালকল সক্রিয়। তাদের দিয়ে জেলা খাদ্য দফতর সহায়ক মূল্যে চাষিদের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্লকে ঘুরে ধান কিনছে। জেলা খাদ্য নিয়ামক ভাস্কর হালদার বলেন, “এলাকার পঞ্চায়েত প্রধানদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্লকের কোন জায়গায় ধান কেনার শিবির হবে, তা ঠিক হচ্ছে। প্রশাসনের তরফে ধান কেনা হচ্ছে বলে খোলা বাজারে ধানের দাম তেমন নামতে পারেনি। তবে এক সঙ্গে সব জায়গায় শিবির করে ধান কেনার মত পরিকাঠামো নেই।” কৃষি দফতরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর জেলায় প্রায় ৬ লক্ষ টন ধান উৎপাদন হয়েছে। কুইন্টাল প্রতি ১০৮০ টাকা সরকারি সহায়ক দামে খাদ্য দফতর চাষিদের কাছ থেকে ধান কিনবে মাত্র ৭০ টন। বাকি প্রায় ৫ লক্ষ ৩০ হাজার টন ধান বিক্রি নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। জেলার হিলি আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশে ধান-চাল বহির্বাণিজ্যের উপর গত বছর থেকেই কেন্দ্রীয় সরকারের নিষেধাজ্ঞা জারি আছে। পাশাপাশি অভিযোগ উঠেছে, পাইকারদের একাংশ চাষিদের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে সরকারি সহায়ক দামে চালকলগুলিকে ধান বিক্রি করছে। কেননা, বহু ছোট চাষি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে উঠতে পারেননি। জেলা খাদ্য নিয়ামক ভাস্কর হালদার বলেন, “এ রকম অভিযোগ পাইনি। তবে অনেক পাইকারের জমি আছে। তারা চাষ করেন। তারা শিবিরে ধান বিক্রি করতে এলে ফেরানো অসম্ভব।” তবে আপাতত তা হচ্ছে না বলে সমস্যা ঘোরালো হয়ে উঠছে। চাষিদের পুঞ্জীভূত ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে পঞ্চায়েত ভোটের মুখে বিরোধীদের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টার খবরে তৃণমূল শিবিরে তেমন হেলদোল নেই। জেলা তৃণমুল সভাপতি বিপ্লব মিত্র বলেন, “রাজ্য জুড়ে এবার ধানের ফলন খুব বেশি। সরকারি স্তরে সব ধান বাম আমলেও কী কেনা হয়েছিল? চাষিদের ভুল বুঝিয়ে এসব আন্দোলনের মাধ্যমে বামফ্রন্টের ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন সফল হবে না। হিলি দিয়ে বাংলাদেশে ধান-চাল বহির্বাণিজ্য চালুর বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মাধ্যমে দিল্লির সঙ্গে কথাবার্তা শুরু করেছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.