|
|
|
|
|
শীতের ফ্যাশন-ফিউশন |
শীতের দিনে শাড়ি পরলেই কি শাল নিতে হবে? তা কেন? আচকান, জোব্বা, চায়না-কোটের সঙ্গেও
তো শাড়ি দিব্যি সুন্দর দেখায়। মানিয়ে যায় শার্টও। এক বার পরেই দেখুন না! যাজ্ঞসেনী |
ডিসেম্বর দেখলেই বাকি দুনিয়া খুব আহ্লাদিত হয়ে ওঠে। উৎসবের মাস, ফেস্টিভ সিজন। কিন্তু ভেবে দেখতে গেলে ওদের বাজি মাত্র আড়াই খানা দিন। বড়দিন, থার্টি ফার্স্ট আর বড়দিনের আগের আধখানা সন্ধ্যে। আসল উৎসব তো এখানে। আন্তর্জাতিক পার্বণে তো আছিই। তা বাদ দিলেও নভেম্বর থেকে জানুয়ারি, গায়ে গায়ে বিয়ের দিন। তার পর সরস্বতী পুজো ইত্যাদি মিলিয়ে দিলে তো হয়েই গেল। অর্থাৎ শীতে শুধু ডেনিম-টি আর জ্যাকেট চাপালে, এ তল্লাটে অন্তত জমবে না। পুজো-পার্বণ, বিয়েবাড়িতে ওই পশ্চিমি পোশাক দৃষ্টিকটু কি না, সে প্রসঙ্গটি কিঞ্চিৎ বিতর্কিত। তবে, ওতে সাজ-সাজ ঝলমলে মোটে লাগে না, এবং সেটাই অধিক চিন্তার বিষয়। সাজতে গেলেই জমকালো একটা শাড়ি পরতে হয় যে! গড়পড়তা কুড়ি-ত্রিশের সেখানেই একটু সমস্যা হয়, হ্যাঁ চোখ জুড়ানো সাজ বটে, কিন্তু শীত মিটল কই? শাল-চাদরে সবটাই ঢেকে গেল যে! ও দিকে এ সব চাপিয়ে বয়সটা একটু বাড়তির দিকে মনে হচ্ছে না?
না, মোটেও হচ্ছে না। শাড়ির সঙ্গে ঠিক ভাবে শাল জড়াতে পারলে, বা এক দিকে আলগোছে ফেলে রাখলে, কখনওই সাজ কমে না। তবে, ওই বিশেষ কায়দায় যদি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ না করেন, তা হলে অন্য অনেক ফ্যাশনসম্মত পদ্ধতি আছে।
|
উৎসব-অনুষ্ঠানে |
শীতের বিয়েতে জারদৌসি, চান্দেরি, বেনারসি সিল্ক পরলে ব্রোকেডের ফুলহাতা জ্যাকেট পরতে পারেন। ব্লাউজের বদলে এই জ্যাকেট ব্যবহার করতে হবে, তাই খেয়াল রাখবেন, ওই জ্যাকেট যেন একেবারে আপনার মাপ মতো হয়। পরার পর, সামান্য বেশি ঢলা থাকলেও খুবই খারাপ দেখাবে। জ্যাকেট হবে কোমর পর্যন্ত। করসেটের দৈর্ঘ্যের। আর জ্যাকেটের নেকলাইনে (গলার কাটটিতে) একটু বিচক্ষণতা প্রয়োজন। যেমন ধরুন হাই কলার ও ‘ভি’ আকৃতিতে গভীর ভাবে চেরা নেকলাইন। খাদির শাড়ির সঙ্গে নেহরু জ্যাকেট ভাল মানাবে।
শাড়ির জ্যাকেট সঙ্গে ছাড়াও আচকান, চায়না-কোট, জোব্বা ইত্যাদিও বাছাই করতেই পারেন। অধুনা র্যাম্পবালিকা নয়, এই সাজের অনুপ্রেরণা রবি ঠাকুরের বউদিদি। সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের স্ত্রী জ্ঞানদানন্দিনী দেবী। পার্সি ঢঙে শাড়ি পরার সঙ্গে এমন অনেক অভিনব কায়দাই প্রচলন করেছিলেন তিনি। শাড়ির সঙ্গে হ্যাট পর্যন্ত অবলীলায় পরেছেন। তাই কুচোদের সঙ্গে স্পোর্টস বা পিকনিকে শাড়ি পরে গেলে টুপি বা হ্যাট পরতে ইতস্তত করার কোনও কারণ নেই।
|
শার্টের সঙ্গে শাড়ি! |
আর শীত এলেই দোকানে দোকানে প্রচুর টেলরড ওয়ার্ম শার্ট পাবেন। টেলরড হওয়ার অর্থ, শরীরের সঙ্গে সেঁটে থাকে এই শাট। আর ওয়ার্ম-শার্ট নামেই বুঝতে পারছেন, এগুলি সাধারণ সুতির শার্ট নয়, ফলে শরীরকে যথেষ্ট ওম দিতে সমর্থ।
প্রাদেশিক শাড়ির সঙ্গে, সব ক’টি বোতাম বন্ধ অবস্থায় ব্লাউজের বদলে পরে আয়নায় নিজেকে দেখুন। আপনি নিজেই কথা হারাবেন। যদি আত্মবিশ্বাস থাকে, তবে আরও একটু সাহসী হতে পারেন। চওড়া, ভাল বাক্লওয়ালা চামড়ার বেল্ট কোমর অংশে পরে নিন। আর যদি এই ‘অতি নাটুকে’ সাজে ঈষৎ অস্বস্তি বোধ করেন, তবে শাটের্র ওপর শাড়ি পরলেই চলবে। সে ক্ষেত্রে সিল্ক, জুট বা ওয়ার্ম লিনেনের প্রিন্টেড শার্ট কিনুন। আঁচলে একটি ব্রোচ আটকান। কপালে একটা বড় টিপ আর চোখে ঘন করে কাজল পরুন। অনেকটা কুড়ি-ত্রিশ দশকের চা-বাগানের বাঙালি মেমসাহেবের মতো দেখাবে আপনাকে।
প্রচলিত ব্লাউজ-সোয়েটারের পরিবর্তে একেবারে পশ্চিমি সোয়েটার পরুন। গোল গলা, বড় বড় জেব্রা বা আকর্ষণীয় রঙের স্ট্রাইপসমেত, যেমনটা ট্রাউজার্সের সঙ্গে, টপের ওপর পরেন। শাড়ির রং, ডিজাইনের সঙ্গে মানিয়ে সোয়েটার বাছাই করুন। বেশি শীত পরলে ওভারকোটও পরতে পারেন। তবে এই ধরনের হাই-ফিউশন করতে চাইলে শাড়িটা একেবারে নিখুঁত ভাবে কুঁচি দিয়ে পরবেন।
|
প্রতিদিনের জন্য |
শুধু বিয়েবাড়ি বা বিশেষ দিনের সাজ নয়, শাড়ি আবার অনেক ভারতীয় মেয়েরই রোজের ‘ফর্ম্যাল ওয়্যার’। তাঁদের এতটা অপ্সরা-উর্বশী না সাজলেও চলবে। তাঁরা বরং উজ্জ্বল কোনও সিল্কের শাড়ির সঙ্গে গাঢ় রঙের স্যুট জ্যাকেট পরুন। বা বোতাম লাগানো সোয়েটার। স্যুট জ্যাকেটের সঙ্গে শাড়ি পরার প্রধানত দু’টি পদ্ধতি আছে। জ্যাকেটের বোতাম আটকাবেন না। এ বার বাঁ দিকের অংশটার ওপর দিয়ে আঁচলটা সুন্দর ভাবে প্লিট করে নিন। ডান দিকের অংশটা দেখা যাবে। বুঝতেই পারছেন, এই পদ্ধতিতে স্যুটটি পরলে আপনি কোনও অবস্থাতেই সেটি খুলে রাখতে পারবেন না।
এই সমস্যা এড়াতে আঁচলের ওপর দিয়েও পুরো জ্যাকেটটি পরতে পারেন। তবে আঁচল অংশের প্লিট যেমন সমান ও ছোট ছোট হয়। না হলে জ্যাকেটের মধ্যে ফুলে থাকবে। একেবারেই ভাল দেখাবে না।
শাড়ির সঙ্গে স্কার্ফ বা মাফলার যে খুব বিসদৃশ, সেটাও পুরোটা ঠিক নয়। বরং একটা কায়দা করতে পারেন। কোমরের অংশ কুঁচি করে গুঁজে নিয়ে স্যুট-জ্যাকেট বা ব্লেজারটি পরে নিন। আঁচল অংশটা বেশি লম্বা রাখুন। এ বার সেটা পিঠে না ফেলে ঘাড় দিয়ে ঘুরিয়ে নিয়ে সামনে আনুন। উত্তরীয়ের কায়দায়। স্কার্ফ-মাফলারের অভাব বোধই হবে না। |
|
|
|
|
|