কেক-পুডিং
X-মাস ফুডিং
তার পর সে এল। ভোরের কুয়াশায় ঘন হয়ে, ঝিলপাড়ের পথভোলা পরিযায়ী পাখি সেজে, পথবাসীদের ইটকাঠের ফায়ারপ্লেস-এর আঁচে। শীতকাল। রোদজ্বলজ্বল বেলাটা এখন একটা গয়নাবাক্সের ডালার মতো ধড়াম করে বন্ধ হয়ে যায়, আর চার ধার হঠাৎ করে কনকনে একটা সন্ধ্যেতে ডুবে যায়। তখন একটা দু’টো করে আলো জ্বলে ওঠে। তারার মতো দেখতে আলো, লাইট দেওয়া স্লেজ গাড়ি, তুলোয় বানানো নকল বরফ, রংচঙে শিকলি। ওই তো বড়দিন। ব্যস, সব মন খারাপ যেই না মুছে গেল, পেটে দাউদাউ জ্বলে উঠল ক্ষুধার রাজ্য।
অতঃপর নিউ মার্কেটে ঢুকি। ঠাকুরদার বাবার আমলের গ্র্যান্ডক্লকটার মতো দেখতে বিশাল বেকারি। নাহুম্স। বয়স একশো দশ। ইহুদিদের দোকান, পরিবেশটা ঠিক যেন সেই যিশুর সময়কার বেথলেহেম, সেই খাবার ভর্তি বাজার। রানি এলিজাবেথের মুকুটের মতো দেখতে আকাশি নীল আইসিং কেক, সেঁকা সেঁকা গন্ধওয়ালা হার্ট কেক, জেলির ফোঁটা দেওয়া কুকি। স্পঞ্জের মতো নরম মোটা গদির ওপর পুরু করে ক্রিম মাখানো, স্ট্রবেরি, ব্ল্যাকফরেস্ট বা চকলেট পেস্ট্রি। স্পঞ্জে কোকোটা বেশি ঢালে বোধহয়, ক্রিমটা তেমনি চিনিগোলা। তেতো মিষ্টি জিভে গিয়ে আশ্চর্য ম্যাজিক দেখায়। ও দিকে সময় বুঝে চলে এসেছে সেলোফেনে মোড়া প্লামকেক, ফ্রুটকেক। পুরুষ্টু কেকে চেরি, ফলের টুকরো, খেজুর, তালকুচো গেঁথে রেখেছে। মুখে দিলেই সব একে একে বেরিয়ে পড়ে। প্যাকেট করে বিক্রি করছে ভ্যানিলা চকলেট ফাজ আর চিজ-চকলেট মার্জিপান। সে সব টফির মতো দেখতে শুকনো মেঠাই, কামড়ালে পেস্তা, বাদাম আর আখরোট আলাদা হয়ে যায়। দুধেল রস বেরয়। কী এগুলো, কেমন করে বানায়? হিস্ট্রি আর মিস্ট্রির ওই ভুরভুরে রেশটা নিয়েই নাহুম্স থেকে বেরোই।
আর ইতিহাস থেকে যেন সোজা ভবিষ্যতে এসে পড়ি। রাউডন স্ট্রিটের কেক্স। কেতাদুরস্ত ঝকঝকে শোরুম। কেক শুধু গোল নয়, তেকোনা, চৌকোনা, আর দোতলা, তিনতলা। বাটারস্কচ-এ তৈরি বাড়ি, মৌরিলজেন্সের, চকলেট দানার আসবাব, সান্তা যেন বেরিয়ে আসছে জানলা দিয়ে। থ্রি-ডি কেক যে। হোয়াইট আর ডার্ক চকলেট ঢেলে তৈরি করেছে চকলেট এক্সেল। কত ট্রাফল বল। দুই স্তর সসের ওপর ক্রিমের তৈরি গোলাপ পাপড়ি বিছানো, তার ওপরে ক্যাডবেরির গালচে। সাত-আটটা ফ্লেভার চেয়ে সুফ্লে নিয়ে বসেছে অনেকে। অল্প ধোঁয়া ওঠা, নরম তুলতুলে কেক। রাস্তার ওধারেই কুকি জার। ঘোড়ার খুরের চেহারার খয়েরি কেক। গাছের ডালের মতো ভাঙাচোরা দেখতে, অপূর্ব খেতে। এখানেই অবাক হয়ে দেখলাম প্রায় ভুলতে বসা পুডিং, ব্র্যান্ডি বাটার সস-এ তৈরি।
এ বার ফিরি বর্তমানে। সান্তার আসার সময় এলেই ভিড় জমে পাঁচতারাগুলোয়। হোটেল হিন্দুস্তান ইন্টারন্যাশনাল-এর দ্য পেস্ট্রি শপ-এ থিকথিক করে বিদেশের মিষ্টি নোনতা। যেমন গাজর দেওয়া লালচে কেক, পাক্কা ব্রিটিশ ফ্রুট কেক, এলাচদানা দেওয়া মাফিন কেক। ডিজার্টের মধ্যে থাকে নরওয়ের কেক স্ট্রবেরিভরা শার্লট, ওপরের সস দেখলে বড় লোভ হয়। সেখানে সান্তা, গ্রামবালিকা, সব বাদাম আর চকলেট দিয়ে তৈরি। সে সব নিখুঁত স্থাপত্য ভাঙতে কষ্ট হয় ঠিক, কিন্তু গালে দিলেই সব দুঃখ ফুরিয়ে আহ্লাদে গড়াগড়ি। চায়ের সঙ্গী নোনতা টায়ে ক্রোয়াসঁ, মেক্সিকোর ভেজিটেবল রুলাড, পাফ আর মেডিটেরিয়ান মিট বল। রাজারহাট সুইসোতেল-এ এ সময় আবার বেশি অর্ডার আসে ক্রিমে ভাসা ব্লুবেরি চিজ কেক আর মিরানগিউ পেস্ট্রির।
পার্ক স্ট্রিটের সাহেবপাড়ার ফ্লুরি’জও বহু পুরনো কেকতীর্থ, কিন্তু সাজগোজে একেবারে নতুন। শুকনো ফলে প্রচুর মশলা মিশিয়ে ক্রিসমাসের প্লাম কেক তৈরি হয় এখানে। ওপরে মার্জিপানের চাদর বিছিয়ে দেওয়া। পুডিংও তাই, কোনওটা তলতলে, কোনওটা থকথকে, আবার কোনওটা আঁটো, কামড়ে খেতে হয়। খেজুর, আখরোট ঠেসে বানানো হয় ক্রিসমাস ডান্ডি কেক। গাতো নোয়েল কেকের মধ্যে সস ভরে গাছের ডালের মতো আকার দেওয়া হয়। ওটাই বিদেশি উপন্যাসের বহুখ্যাত ইউল লগ কেক। চোখ টানে মায়াবি নীল রঙের ফিগ অ্যান্ড ব্ল্যাককারান্ট কেক। ছোটদের জন্য রয়েছে গলানো শুগার দিয়ে তৈরি স্নোম্যান। বড় বড় পাঁউরুটিও কেনাও নাকি এ সময়ের খ্রিস্টান রীতি। তার জন্য রয়েছে ফল দেওয়া গারল্যান্ড ও স্টোলেন ব্রেড (বেকারির পাউরুটির মতো দেখতে, ফলের ছোট্ট ছোট্ট টুকরো দেওয়া)। মুজও নিতে পারেন। ঘন ক্রিমের লেই, পাতলা কাচের গ্লাসে ভরে দেয়, সঙ্গে কী সুন্দর একটা চামচে, আইসক্রিমের থেকে ঢের ভাল খেতে।
উপহার দেওয়ার জন্য সুদৃশ্য মোড়ক কত। তাতে ড্রাই পেস্ট্রি, কাপকেক, বিদেশি পিঠে টার্ট, আদা দেওয়া কুকিজ, ট্রাফল বল, মঁব্লাঁ আর অরিজিনাল চকলেট। ইয়াম্মোটা, শক্ত, একেবারে অচেনা স্বাদ। জাভা, ইকুয়েডর, ঘানা থেকে আনানো হয়। লিকুইড চকলেটও রয়েছে অবশ্য, ও সবে রাম, ব্র্যান্ডি, হুইস্কি মেশানো থাকে। অল্প ঝাঁঝ হয়। আর খুঁজলে পাবেন সান্তার স্টকিংস। মোজার মধ্যে রাশি রাশি সুস্বাদু উপহার। বিদেশি লজেন্স, চকোবল আর শুকনো পাই ভরা।
এ দেশ ছেড়ে আসতে কারও মন চায়? তবে একা ফিরি না। ফ্লুরি’জ তো দু-দু’টো রেসিপি ধরিয়ে দিল হাতে। আমার জন্য। আর আপনাদের জন্যও।

ক্রিসমাস প্লাম পুডিং
উপকরণ
• কিশমিশ - ১০০ গ্রাম
• কমলালেবুর খোসা - ১০০ গ্রাম
• শুকনো আনারস - ১০০ গ্রাম
• আপেল টুকরো - ৪০ গ্রাম
• ঘন ব্রাউন শুগার - ৮০ গ্রাম
• হোয়াইট বাটার - ১০০ গ্রাম
• ডিম - ২ টো
• দুধ - ৪০ গ্রাম
• অরেঞ্জ জুস - ১৫ মিলিলিটার
• আমন্ড্ পাউডার - ৫ গ্রাম
• পাঁউরুটির গুঁড়ো - ১০০ গ্রাম
• ময়দা - ৮০ গ্রাম
• মৌরি, লবঙ্গ - এক চিমটে
• এলাচগুঁড়ো, আদাগুঁড়ো - এক চিমটে
• বিয়ার - ২০০ থেকে ৭৫০ মিলিলিটার
• ব্র্যান্ডি সস বা রাম বাটার - পরিমাণমত
প্রণালী
• মিক্সিং বোল নিয়ে তাতে কিশমিশ, আনারস আর কমলার খোসা, আপেল মেশান।
• এই সব ফল অন্তত ৭ দিন বিয়ারে চুবিয়ে মিক্সিং বোলে রেখে দিন।
• হোয়াইট বাটার আর চিনি মিশিয়ে ফেটান।
• চিনি গুলে গেলে একে একে ডিমগুলো, দুধ, অরেঞ্জ জুস, লেবুর রস, আমন্ড পাউডার,
পাঁউরুটির গুঁড়ো, ময়দা আর জারানো ফলগুলো দিন।
• এক চিমটে মশলা দিন।
• ছাঁচে গোটা মিশ্রণটা ঢেলে ভেতরের র‌্যাপে মুড়ে ৫-৬ ঘণ্টা ঢাকা রাখুন।
• আভেনটা একটু আগে ১৫০ থেকে ১৬০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় তাতিয়ে নিন।
• তৈরি হলে ঠান্ডা করে চাপা দিন।
• প্রয়োজনমত ৩০-৩৫ মিনিট স্টিম করে নেবেন।
• ব্র্যান্ডি সস বা রাম বাটার ঢেলে, অল্প চিনি ছিটিয়ে পরিবেশন করুন।

রাম অ্যান্ড রেজিন কেক
পরিমাণ: ২ পাউন্ড
প্রস্তুতির সময়: ৯০ মিনিট
উপকরণ
• চিনি - ১২৫ গ্রাম
• মাখন - ১২৫ গ্রাম
• ডিম - ২ গ্রাম
• ময়দা - ১২৫ গ্রাম
• বেকিং পাউডার - ৫ গ্রাম
• ভ্যানিলা এসেন্স - ২ মিলিলিটার
• কিশমিশ ৫০০ গ্রাম
• রাম - ৫০ মিলিলিটার
প্রণালী
• মিক্সিং বোলে মাখন আর চিনি মিশিয়ে লেই বানিয়ে ফেলুন।
• ডিমের তরল অংশটা ফোঁটা ফোঁটা করে মেশান, যত ক্ষণ না ফুলো ও ফেনা হচ্ছে।
• ময়দায় মুড়ে নিন। রামে ভিজিয়ে রাখা কিশমিশ দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিন।
• কেক তৈরির ছাঁচে, মিশ্রণটি ঢেলে, ভেতরের কাগজ দিয়ে পুরোটা মুড়ে নিন।
• ১৮০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে ৪৫ মিনিট ধরে বেক করুন।

ছবি: শুভেন্দু চাকী
সৌজন্য: ফ্লুরিজ



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.