|
|
|
|
না ছিল ‘অস্তি’,
না ছিল ‘নাস্তি’ |
যিশু জন্ম নেওয়ার আগের মুহূর্তটি প্রস্তুত ছিল এক মসিহাকে আহ্বানের জন্য,
নিজস্থান-বিচ্যুতির জন্য প্রস্তুত ছিল নির্দিষ্ট তারা। এমন অনেক ‘আগের মুহূর্ত’রা
তৈরি করেছে ইতিহাস, মিথ, শিহরন। কিন্তু ‘আদি’র পূর্বক্ষণ? পথিক গুহ |
হোয়াই ইজ দেয়ার সামথিং রাদার দ্যান নাথিং? গূঢ় একটা প্রশ্ন। পোশাকি একটা নামও আছে এর। প্রাইমরডিয়াল এক্সিস্টেনশিয়াল কোয়েশ্চেন। পি ই কিউ। দার্শনিকদের বিচারে ওর চেয়ে বড় প্রশ্ন আর কিছু হতে পারে না। ওটি মাদার অব অল কোয়েশ্চেনস।
প্রশ্নটি উত্থাপন করেছিলেন দার্শনিক এবং গণিতজ্ঞ গটফ্রিড উইলহেল্ম লিবনিৎজ। ১৬৯৭ খ্রিস্টাব্দে ওই জার্মান পণ্ডিত লিখেছিলেন এক প্রবন্ধ। শিরোনাম ‘বস্তুর চূড়ান্ত উৎস’। লিবনিৎজ যা বলতে চেয়েছিলেন, তা স্পষ্ট। নাথিংনেস বা কোনও কিছু না থাকা বা না ঘটা স্বাভাবিক ব্যাপার। সে তুলনায় কিছু থাকা বা ঘটা অস্বাভাবিক। কিছু না থাকলে বা না ঘটলে কোনও ঝঞ্ঝাট নেই। সুতরাং, কোনও প্রশ্নও নেই। কোথাও কিছু রয়েছে দেখলে যত গোলমাল। সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন ওঠে, তা এল কোথা থেকে। ঘটনার বেলাতেও একই ধাঁধা। কেন তা ঘটল?
ব্রহ্মাণ্ডে সব প্রশ্নই যে হেতু কিছু থাকা বা ঘটা নিয়ে, তাই হোয়াই ইজ দেয়ার সামথিং রাদার দ্যান নাথিং প্রশ্ন হিসেবে সবার সেরা। তা যদি হয়, তা হলে যে জিনিসটির অস্তিত্ব সবচেয়ে বড় ধাঁধা, তা হল এই ব্রহ্মাণ্ড। কেন রয়েছে এই বিশ্ব? কোথা থেকে এল এই প্র-কা-ণ্ড জিনিসটি?
প্রশ্নটা যেমন বড়, তেমন পুরনো। মানুষ এ প্রশ্নে মাথা চুলকেছে হাজার হাজার বছর ধরে। এবং তার পর মনে মনে গড়ে তুলেছে উত্তর। সেই জবাবের সূত্রে এসেছে ধর্মবিশ্বাস। ব্রহ্মাণ্ডের জন্মের ধর্মীয় ব্যাখ্যা। বিজ্ঞান অনেক দিন আগে অগ্রাহ্য করেছে সেই ব্যাখ্যা। খুঁজেছে রহস্যের নিজস্ব সমাধান। |
|
সে সমাধানের জন্মকাল ১৯২০-র দশক। আলবার্ট আইনস্টাইন, আলেকজান্ডার ফ্রিডমান এবং জর্জ লেমাইত্রে এই তিন বিজ্ঞানীর গবেষণায় গড়ে ওঠে আধুনিক বিশ্বতত্ত্ব। দেখা যায়, ব্রহ্মাণ্ডের অতীতের দিকে পিছিয়ে গেলে ১,৪০০ কোটি বছর আগে এই বিশ্বের এমন একটা দশায় উপস্থিত হতে হয়, যখন পদার্থবিদ্যার নিয়মকানুন আর খাটে না। মানে, নিয়মগুলি প্রয়োগ করতে গেলে অদ্ভুতুরে ফলাফল দেখা যায়। ব্রহ্মাণ্ডের সেই দশাকে বিজ্ঞানীরা বলেন ‘সিংগুলারিটি’। আর মনে করেন ওই অবস্থা থেকে এই বিশ্বের জন্ম। জন্ম এক মহাবিস্ফোরণের ফলে। যে বিস্ফোরণের নাম ‘বিগ ব্যাং’। হোয়াই ইজ দেয়ার সামথিং রাদার দ্যান নাথিং? এই ব্রহ্মাণ্ড এল কোথা থেকে? উত্তর: বিগ ব্যাং।
উত্তরটা কি মানা যায়? নাহ্। মানা যায় না নানা কারণে। এক, কারণ বিনে কার্য হয় না। তো ১,৪০০ কোটি বছর (আধুনিক হিসেব ১,৩৭০ কোটি বছর) আগে হঠাৎ বিগ ব্যাং হল কেন? দুই, দেখা যাচ্ছে, ব্রহ্মাণ্ডের আজকের যা চেহারা, তার বীজ লুকিয়ে আছে ওই সিংগুলারিটি বা বিগ ব্যাং-এর মধ্যে। আজকের বিশ্ব কেন এ রকম, কেন অন্য রকম নয়, তা অজানা থাকবে ওই সিংগুলারিটি বা বিগ ব্যাং ভাল করে না বুঝলে। ওগুলো বুঝতে হলে জানতে হবে ওগুলো কেন ঘটল? সোজা কথা, সিংগুলারিটি বা বিগ ব্যাং-এর আগে কী ছিল? পদার্থবিজ্ঞানীরা ইদানীং রীতিমত মাথা ঘামাচ্ছেন প্রশ্নটা নিয়ে। পেশ করছেন তত্ত্ব।
বছর পাঁচেক আগে দুই বিজ্ঞানী, নিল টুরোক ও পল স্টেইনার্ড এমনই এক তত্ত্ব পেশ করেছেন। সাইক্লিক ইউনিভার্স। বাংলায় যা দাঁড়ায় চক্রাকার বা পৌনঃপুনিক ব্রহ্মাণ্ড। টুরোক এবং স্টেইনার্ড কাজে লাগিয়েছেন পদার্থবিদ্যার আধুনিক আইডিয়া স্ট্রিং থিয়োরি। যে তত্ত্ব অনুযায়ী, পদার্থের ক্ষুদ্রতম উপাদান কোনও কণা নয়, সুতোর মতো এক জিনিস। সে তত্ত্ব কাজে লাগিয়ে টুরোক ও স্টেইনার্ড পৌঁছেছেন পৌনঃপুনিক বিশ্বের ধারণায়। ওঁদের মতে বিগ ব্যাং একটা নয়, হয়েছে একের পর এক। এবং ব্রহ্মাণ্ডের জন্ম হয়েছে বার বার।
একই উপলব্ধিতে পৌঁছেছেন আরও এক দল বিজ্ঞানী। যাঁদের নেতা এক ভারতীয় বংশোদ্ভুত গবেষক। অভয় আস্থেকর। এখন আমেরিকায় পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক। ওঁর সঙ্গে গবেষণা করছেন পরমপ্রীত সিংহ, টমাস পাওলোস্কি এবং মার্টিন বোজোয়াল্ড। যে বিগ ব্যাং-এ এই ব্রহ্মাণ্ডের জন্ম, ঠিক সেই বিস্ফোরণের মুহূর্তে কী কী ঘটেছিল, তা বোঝার জন্য কম্পিউটারে সিমুলেশন স্টাডি করেছিলেন ওঁরা। গাণিতিক ফর্মুলা প্রয়োগ করে কম্পিউটারে দেখেছিলেন সময়ের দিক থেকে ক্রমাগত পিছোলে ব্রহ্মাণ্ডের কী কী দশা হয়। দেখতে বসে ওঁরা অবাক। কারণ, বিগ ব্যাং-এর মুহূর্তেরও পিছনে গেলে, মানে সিংগুলারিটির আগে আর একটা ধাক্কা বা বিস্ফোরণ লক্ষ করা যাচ্ছে।
সময় পিছোলে যা বিস্ফোরণ, এগোলে তা-ই কিন্তু সংকোচন। সুতরাং, কম্পিউটার স্টিমুলেশন থেকে বোঝা যাচ্ছে, এই ব্রহ্মাণ্ডের আগে একটা ব্রহ্মাণ্ড ছিল। তা আয়তনে বাড়ছিল এই বিশ্বের মতনই। তার পর গ্র্যাভিটির কারণে তার গ্যালাক্সিগুলো একে অন্যকে কাছে টেনে এনেছিল। আয়তনে সংকুচিত হতে হতে তা পরিণত হয়েছিল একটা বিন্দুতে। তার দশা তখন সিংগুলারিটি। এবং তার বিস্ফোরণে আজকের এই ব্রহ্মাণ্ড। |
|
|
|
|
|