ফের ৬ শিশুর মৃত্যু মালদহ সদরে |
পাঁচ ঘন্টায় মালদহ সদর হাসপাতালে ৬ টি শিশুর মৃত্যু হল। ওই ঘটনায় নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে পরিবারে লোকেদের মধ্যে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এর আগে ৯ নভেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সদর হাসপাতালে ১২৭টি শিশুর মৃত্যু হয়। সদর হাসপাতালে শিশু মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ায় ন্যাশনাল কমিশন ফর প্রোটেকশন অফ চাইল্ড রাইটসের নির্দেশে জেলা স্বাস্থ্য দফতর তড়িঘড়ি ১৬ ডিসেম্বর হাসপাতালে সিক নিউবর্ন কেয়ার ইউনিট (এসএনসিইউ) চালু করে। সদর হাসপাতালের সুপার হিমাদ্রি আড়ি বলেন, “হাসপাতালের এসএনসিইউতে ১২টি শিশু রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে বেশি শিশু রাখার ব্যবস্থা থাকলে হয়তো শিশু মৃত্যুর হার কমানো যেতে পারত। যতদিন না পর্যন্ত এসএনসিইউতে বেড বাড়ানো হবে, সদর হাসপাতালে শিশু মৃত্যুর হার কমানো যাবে না। তবে যে ৬টি শিশু মারা গিয়েছে তাদের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। শ্বাসকষ্টজনিত কারণে ওই শিশুগুলি মারা গিয়েছে।” মালদহ সদর হাসপাতালে কয়েক ঘন্টায় ৬ শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় সিপিএমের তরফে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এদিন দলের জেলা সম্মেলনের প্রকাশ্য সভায় সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য শ্যামল চক্রবর্ত্তী বলেন, “মালদহে কয়েক ঘন্টায় ৬টি শিশুর মৃত্যুর জন্যও কী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদেরই দায়ী করবেন?” সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর আরেক সদস্য মহম্মদ সেলিম বলেন, “রাজ্যে একের পর মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। মুখ্যমন্ত্রীর তা নিয়ে কোনও মাথাব্যাথা নেই। উনি বলছেন, উনি এখন ব্যস্ত শিল্প নিয়ে।” বৃহস্পতিবার রাতে রতুয়ার শ্রীপুর থেকে অঞ্জনা মন্ডল প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে মালদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। রাতেই তিনি একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। ৪ ঘন্টা পরেই তাঁর সেই সদ্যোজাত শিশু পুত্রের মৃত্যু হয়। ওই রাতেই গাজলের মর্জিনা বিবি তাঁর ৫ দিনের শিশু কন্যাকে নিয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। ৫ ঘন্টা কাটতে না কাটতেই তাঁর শিশুকন্যা মারা যায়। মজির্না বিবির অভিযোগ, “ঠাণ্ডায় আমি শিশুকন্যা নিয়ে কাঁপছিলাম। সিস্টারদের চিৎকার করে বলছিলাম রুম হিটার দিন। কেউ আমার কোনও কথাই শুনল না। চোখের সামনেই মেয়ে মরে গেল।” বৃহস্পতিবার রাতে ঝাড়খন্ডের সোমা সিংহ ৫ দিনের শিশুকন্যা, হরিশ্চন্দ্রপুর থেকে রাশি দাস তাঁর ১৪ দিনের শিশুপুত্র, মানিকচক থেকে জাহানুর খাতুন ৭৫ দিনের শিশুকন্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। শুক্রবার ভোর হওয়ার আগেই ওই তিনটি শিশুর মৃত্যু হয়। মালদহ সদর হাসপাতালের তিন তলায় শিশু বিভাগ। চারি দিকে কাঁচের জানালা। শিশু বিভাগে মাত্র ৩টি রুম হিটার রয়েছে। শিশু বিভাগে আরও রুম হিটারের ব্যবস্থা করার ব্যাপারে সদর হাসপাতালের সুপার বলেন, “আমরি কাণ্ডের পরে সতর্ক হয়েছি। শিশু বিভাগে আরও রুম হিটার লাগানো যাবে কি না সে ব্যাপারে শিশু বিভাগের প্রধানের সঙ্গে কথা বলার পরেই সিদ্ধান্ত হবে। কেননা, রুম হিটার ও জানালায় পর্দা লাগানো হলে সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে।” |