হাসপাতালে বন্ধ হচ্ছে ‘কল বুক’
শিশু-চিকিৎসকদের কাছে জরুরি ডাক যাবে মোবাইলে
রকারি হাসপাতালের শিশু-বিভাগে এ বার চিকিৎসকদের ‘কল বুক’ প্রথা বন্ধ হচ্ছে। পরিবর্তে চালু হবে মোবাইল সার্ভিস। মোবাইলে ফোন বা এসএমএস পাঠিয়ে চিকিৎসককে ডাকা হবে। তিনি তৎক্ষণাৎ না-এলে মোবাইলের রেকর্ড ধরেই তাঁর বিরুদ্ধে কর্তব্যে অবহেলার দায়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চতুর্থ শ্রেণির কর্মীকে খুঁজে বার তাঁর হাতে ‘কল বুক’ পাঠিয়ে চিকিৎসককে ডাকার ব্যবস্থা করা এবং চিকিৎসকের যথাস্থানে পৌঁছনোর মধ্যে যতটা সময় নষ্ট হয়, তার মধ্যেই রুগ্ণ শিশুর শারীরিক অবস্থার অনেকটাই অবনতি হতে পারে বলে স্বাস্থ্যকর্তাদের আশঙ্কা। রাজ্যে শিশু-মৃত্যুর হার কমাতে গঠিত টাস্ক ফোর্স তাই পদ্ধতি বদলের এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
শুধু তা-ই নয়, রাজ্যের হাসপাতালগুলিতে যত শিশুর মৃত্যু হচ্ছে, মৃত্যুর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাদের সকলের বেড-হেড টিকিট স্বাস্থ্য ভবনে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই টিকিটগুলি খতিয়ে দেখে বোঝার চেষ্টা করা হবে, চিকিৎসায় আদৌ গাফিলতি ছিল কি না। কিন্তু ওই বিপুল সংখ্যক বেড-হেড টিকিট খতিয়ে দেখবেন কারা? সে পরিকাঠামোই তো নেই। স্বাস্থ্যকর্তারা জানান, নমুনা-সমীক্ষার পদ্ধতি ধরেই এটা করা হবে। এ জন্য একটি বিশেষ দলও তৈরি করা হচ্ছে।
মাসখানেক আগে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে ওই টাস্ক ফোর্স গঠন করেন। তার পর থেকে মাঝেমধ্যেই রাতবিরেতে বিভিন্ন হাসপাতাল পরিদর্শন করছেন টাস্ক ফোর্সের সদস্যেরা। রাতে হাসপাতালে গিয়ে বহু ক্ষেত্রেই তাঁরা সিনিয়র চিকিৎসকদের দেখা পাননি বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর। দেখা গিয়েছে, প্রায় সর্বত্রই রাতে কাজ করেন শুধু জুনিয়র ডাক্তারেরা। ফলে, রাতে শিশুদের শারীরিক অবস্থার আচমকা অবনতি হলে সমস্যায় পড়তে হয়। এই পরিস্থিতিতে তাঁরা বেশ কিছু নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান, শিশু-চিকিৎসক ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “প্রতিটি হাসপাতালে অন্তত এক জন আরএমও-কে রাতে থাকতে হবে। নবজাতকের ‘অ্যাপগার স্কোর’, অর্থাৎ ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরপরই শারীরিক অবস্থার খুঁটিনাটি নথিবদ্ধ করতে হবে। আর সিজারিয়ান হলে সেখানে অবশ্যই এক জন শিশু-চিকিৎসককে অস্ত্রোপচারের সময়ে থাকতে হবে।”
টাস্ক ফোর্সের সদস্য, তথা জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনের প্রকল্প-অধিকর্তা দিলীপ ঘোষ বলেন, “এখন তো বহু ক্ষেত্রে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও সিজারিয়ান ডেলিভারি হচ্ছে। শিশু-চিকিৎসকের অভাব তো রয়েছেই, পাশাপাশি, বহু জায়গায় শিশু-চিকিৎসক থাকলেও প্রসবের সময়ে তাঁদের দেখা মেলে না। সেই বিষয়টি এ বার নিশ্চিত করা হচ্ছে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, জন্মের পরে প্রথম কয়েক মিনিট শিশুর জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোনও কোনও শিশু জন্মের পরেই কাঁদে না। সে ক্ষেত্রে শিশু-চিকিৎসক যদি খানিকক্ষণ পরে তাকে দেখেন, ততক্ষণে তার ‘ব্রেন ড্যামেজ’ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। তাই যা ব্যবস্থা নেওয়ার, তা তৎক্ষণাৎ নিতে হবে। সমস্ত হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ‘রিসাসিটেশন কিট’ হাতের সামনে মজুত রাখতে হবে। ত্রিদিববাবু বলেন, “এই সব সরঞ্জামের প্রায় কোথাওই কোনও অভাব নেই। কিন্তু বহু জায়গাতেই সেগুলি আলমারিতে তালাবন্ধ থাকে। ফলে দরকারের সময়ে পাওয়া যায় না, কিংবা চাবি খুঁজে বার করতে করতেই অনেকটা দেরি হয়ে হয়ে যায়। শিশু-মৃত্যুর হার কমাতে এই বিষয়টিতে যত্নবান হওয়া খুব জরুরি।”
বর্তমানে রাজ্যে ১১টি ‘সিক নিউবর্ন কেয়ার ইউনিট’ (এসএনসিইউ) রয়েছে। এর পাশাপাশি জেলা স্তরে নবজাতকদের পরিচর্যার মান উন্নত করতে আরও ২০টি এসএনসিইউ-এর পাশাপাশি ৬৯০টি ‘নিউবর্ন কেয়ার কর্নার’, ২৩০টি ‘সিক নিউবর্ন স্টেবিলাইজেশন ইউনিট’ খোলার কথা ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য দফতর। দিলীপবাবু জানান, কলকাতার হাসপাতালগুলির বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে জেলার নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের ব্যবস্থাও চালু হচ্ছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.