জেলায় ডাক্তার পাঠাতে ‘দৃষ্টান্ত’ এইমস-পিজিআই
জেলায় ডাক্তারের ঘাটতি মেটাতে এ বার দিল্লি ও চণ্ডীগড়ের দুই নামী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের দেখানো পথ ধরতে চাইছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্স (এইমস) এবং চণ্ডীগড়ের পোস্ট গ্রাজুয়েট ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (পিজিআইএমআর)-এর উদাহরণ টেনে এ রাজ্যের স্বাস্থ্য-কর্তারা বলছেন, ওই দুই হাসপাতালে কোনও মেডিক্যাল অফিসার নেই, চিকিৎসক-শিক্ষকেরাই রোগী দেখেন। একই ভাবে কলকাতার মেডিক্যাল কলেজগুলোর মেডিক্যাল অফিসারদের (যাঁরা শিক্ষকতার কাজে জড়িত নন) ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে জেলায় পাঠানো যেতেই পারে বলে ওঁরা মনে করছেন।
কিন্তু সে ক্ষেত্রে আউটডোরে পরিষেবা মার খাবে না?
এর উত্তর খুঁজেছে খোদ রাজ্যের স্বাস্থ্য-সচিব সঞ্জয় মিত্রের দেওয়া এক রিপোর্ট। এইমস এবং পিজিআইয়ের আউটডোর কী ভাবে চলছে, তা দেখে এসে তিনি যেটি স্বাস্থ্যভবনে পেশ করেছেন। স্বাস্থ্য-কর্তাদের তিনি বলেছেন, জেলার হাসপাতালে মেডিক্যাল অফিসার কম থাকায় রোগীদের অসুবিধে হয়। অথচ শহরের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে এক সঙ্গে অনেক মেডিক্যাল অফিসার। অভিযোগ, এখানে শিক্ষক-চিকিৎসকদের ঠিকঠাক ব্যবহার করা হচ্ছে না। তাঁরা আউটডোরে রোগী দেখলে মেডিক্যাল অফিসারেরা জেলায় গিয়ে চিকিৎসা করতে পারবেন বলে দফতরের দাবি।
এই যুক্তির সমর্থনে এইমস-পিজিআইয়ের দৃষ্টান্ত দিচ্ছে স্বাস্থ্যভবন। তাদের হিসেবে, এইমসে মেডিক্যাল অফিসার ছাড়াই এক-এক জন শিক্ষক-চিকিৎসক আউটডোরে মাসে গড়ে ১৬০০ রোগী দেখছেন। পিজিআইয়ে ১৩০০। অথচ এসএসকেএমে এক ডাক্তার (শিক্ষক, মেডিক্যাল অফিসার, জুনিয়র ডাক্তার) আউটডোরে মাসে গড়ে ৭৪৫ জন রোগী দেখেন। কলকাতা মেডিক্যালে সংখ্যাটা ৪৪০, আরজিকরে ১ হাজার, এনআরএসে ১১০০ ও ন্যাশনালে সাকুল্যে ৬৭৭। স্বাস্থ্য-কর্তাদের দাবি, এখানে মেডিক্যাল অফিসার বেশি থাকায় সার্বিক ভাবে ডাক্তারপিছু রোগী এইমসের তুলনায় কম। অন্য দিকে ডাক্তারের অভাবে জেলায় সরকারি চিকিৎসা পরিষেবার বেহাল দশা। সঞ্জয়বাবুই বলেন, “কলকাতার লাগোয়া উত্তর ২৪ পরগনায় জেলা হাসপাতালের আউটডোরে এক-এক জনকে মাসে গড়ে প্রায় দু’হাজার রোগী দেখতে হয়। দক্ষিণে এমআর বাঙুরে প্রায় ৮ হাজার! হাওড়ায় তিন হাজার। এ ভাবে চলতে পারে না।” তাই এইমস-পিজিআইয়ের পথ ধরতে চাইছেন সচিব। কিন্তু তাঁর দাওয়াই মানতে সকলে কি রাজি হবেন? না-হলে সরকার কি জোর করবে? রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “জেলায় ডাক্তারের এতই অভাব যে, মেডিক্যাল অফিসারদের জোর করেই পাঠাতে হবে।” দফতর সূত্রের খবর: মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে প্রস্তাবটি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবাদও অবশ্য উঠেছে। মেডিক্যাল কলেজ-কর্তৃপক্ষদের একাংশের দাবি, এখানে এইমসের তুলনায় তিনগুণ রোগী হয়, এবং মেডিক্যাল অফিসার ছাড়া তাঁদের পরিষেবা দেওয়া অসম্ভব। পিজিআইয়ে পড়াশোনা করে আসা কলকাতার এক শিক্ষক-চিকিৎসকের দাবি, “ওখানে শিক্ষক-চিকিৎসকেরা যত রোগী দেখেন, আমরা তার কম দেখি না। আমাদের প্রত্যেকের আউটডোরে নির্দিষ্ট দিনে ডিউটি থাকে।”
পাশাপাশি মেডিক্যাল অফিসারদের অনেকের বক্তব্য, “এইমস বা পিজিআইয়ের মতো পরিকাঠামো এখানে নেই। ওদের সঙ্গে আমাদের মেলালে চলবে না।” স্বাস্থ্য দফতরের প্রস্তাবটিকে ‘অবাস্তব’ বলে অভিহিত করেছে বামপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অফ হেল্থ সার্ভিসেস ডক্টরস।’ তবে তৃণমূলপন্থী ‘প্রগ্রেসিভ সার্ভিস ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন’ জানিয়েছে, এর সমর্থনে তারা ডাক্তারদের সংগঠিত করবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.