আলু চাষির মৃত্যুর কারণ নিয়ে রাজ্যে কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায়ের মন্তব্যকে ঘিরে সমালোচনা শুরু হয়েছে। ঋণের দায়ের চাষিদের আত্মহত্যার ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর গত বৃহস্পতিবার অরূপবাবু বলেছিলেন, ধূপগুড়ির চাষির আত্মহত্যার কারণ আলু চাষে ক্ষতির ফলে নয়। ওই চাষি আলু ফলিয়ে তা ৮ লক্ষ টাকায় বিক্রি করেন ও ৫০ হাজার টাকা ঋণ শোধ করেন। এমনকি, মৃত কৃষকের দুই ছেলে চাকরি করছে। তাঁর ৫ বিঘা জমি রয়েছে বলে যুগ্ম বিডিও তাঁকে জানিয়েছেন। শুক্রবার সকালে মন্ত্রীর বক্তব্য খবরের কাগজে প্রকাশিত হবার পর আত্মঘাতী কৃষক রবিন বর্মনের গ্রাম-সহ ধূপগুড়িতে মন্ত্রীর সমালোচনা শুরু হয়। এলাকার সিপিএম বিধায়ক মমতা রায় বলেন, “ঠাণ্ডা ঘরে বসে সরকার চালালে এই সমস্ত ভুল রিপোর্ট মন্ত্রীর কাছে যাবে। ধূপগুড়িতে আলু কী দামে বিক্রি হচ্ছে সেই সম্পর্কে মন্ত্রীর কোনও ধ্যান ধারণা নেই। মন্ত্রী যা বলেছেন তা এক আনা সত্য নয়। এই মিথ্যার প্রতিবাদে আমরা বিধানসভায় ওয়াক আউট করেছি।” মৃত রবিনবাবুর বড় ছেলে রামচন্দ্রের কথায়, “দুদিন বাদে বাবার শ্রাদ্ধ। বাড়িতে কোনও টাকা নেই। ভিক্ষা করে টাকা তুলছি। এভাবে আমাদের নিয়ে মিথ্যা কথা বলার মানে কী তা বুঝছি না।” তৃণমূলের নেতারা এদিন অবশ্য কৃষি বিপণন মন্ত্রীর প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান। দলে স্থানীয় নেতা অশোক বর্মনের কথায়, “আলু চাষির আত্মহত্যা বিক্ষিপ্ত ঘটনা। আমাদের কয়েক দিনের সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি নিশ্চয়ই দেখবেন।” সিপিএমের কৃষক সংগঠন মন্ত্রী বিবৃতি মিথ্যা বলে দাবি করে ধূপগুড়ির গ্রামে ব্যাপক প্রচার চালাবে বলে ঠিক করেছে। কৃষক সভার জেলার নেতা সুভাষ রায় বলেন, “ঋণ করে আলু চাষ করে দাম পড়ে যাওয়ায় ফলে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে ওই কৃষক আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন। ধূপগুড়িতে আলুর দাম কতটা তলানিতে ঠেকেছে তা এখানকার কৃষক ও ব্যবসায়ীরা জানেন। রাজ্য সরকার কতটা কৃষক বিরোধী তা মন্ত্রীর বক্তব্যে স্পষ্ট।” এ দিন গ্রামবাসীরা মৃত ওই কৃষকের একটি ঘর মেরামতি করে দেন। একটি ঘরের জরাজীর্ণ দরমার বেড়া খুলে গ্রামবাসীরা নিজেদের বাড়ি থেকে বাঁশ ও পাটকাঠি দিয়ে বেড়া তৈরি করেন। মৃতের প্রতিবেশী, কৃষক দীনবন্ধু বর্মণ বলেন, “রবিনের দুই ছেলে বাবার সঙ্গে জমিতে চাষ করত। ওই পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ। প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় ওই ঘরে রাত কাটাতে ওদের কষ্ট হচ্ছে। আমরা সকলে মিলে ঘরের বেড়া করে দিয়েছি।” গ্রামের বাসিন্দা ভ্যান রিকশা চালক অনেশ্বর বর্মণ বলেন, “রবিন বাবু সম্পর্কে যা বলা হচ্ছে তা মানা যায় না। ৮ লক্ষ টাকায় আলু বিক্রি করার কথা মন্ত্রী বলেছেন তা ডাহা মিথ্যা। মন্ত্রীকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে। যা হাল হয়েছে তাতে আলু বিক্রি করে হিমঘরের খরচ উঠবে না।” |