প্রসঙ্গ ফসলের দাম
৪ জানুয়ারি গ্রাম বাংলায় বনধ ডাকল বাম কৃষকরা
বিধানসভার ভোটে গ্রাম বাংলাও মুখ ফিরিয়েছিল বামেদের থেকে। গত সাত মাস গ্রামে তেমন কোনও আন্দোলনেই নামতে পারেনি বামেরা। পঞ্চায়েত ভোটে আগে কৃষক-সমর্থন ফিরে পেতে এ বার ধান-সহ ফসলের দাম নিয়ে আন্দোলনে নামছে তারা। সিপিএম, সিপিআই, আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লক চার বাম দলের দলের কৃষক সংগঠন আগামী ২৫-৩০ ডিসেম্বর জেলায় জেলায় ‘প্রতীকী’ পথ অবরোধ করবে। এর পর ৪ জানুয়ারি গ্রাম বাংলায় এক দিনের বনধ ডাকা হয়েছে।
শুক্রবার সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা কৃষক সভার রাজ্য সভাপতি মদন ঘোষ বলেন, “ওই দিন গ্রামে সব কাজ বনধ থাকবে। বনধ থাকবে দোকান-বাজার ও পঞ্চায়েত অফিস। বিডিও-অফিস বনধ করা হবে কিনা, তা নিয়ে প্রত্যেক জেলায় স্থানীয় স্তরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” তাঁর অভিযোগ, ফসলের দাম না পেয়ে এ পর্যন্ত ৮ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুও এ দিন বলেছেন, “রাজ্য সরকার যদি সহায়ক মূল্যে (১,০৮০ টাকা প্রতি কুইন্টাল) চাল কেনে তাহলেই একমাত্র কৃষকদের আত্মহত্যা আটকানো সম্ভব।” অর্থাৎ নিজেদের আন্দোলনের পাশাপাশি রাজ্য সরকারের উপরেও ‘চাপ’ সৃষ্টির পথ নিচ্ছে বামেরা।
রাজ্য সরকার স্বভাবতই বামেদের অভিযোগ মানতে নারাজ। খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পঞ্চায়েত ভোটে বামেরা ধুয়েমুছে সাফ হয়ে যাবে বলেই মিথ্যা অভিযোগ তুলে গ্রামে বনধ ডেকেছে। তবে তা সফল হবে না।” খাদ্যমন্ত্রীর পাল্টা দাবি, কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে ধান কেনার জন্য রাজ্য সরকার সব রকম ব্যবস্থা নিয়েছে।
মদনবাবু অভিযোগ, “কৃষকরা ধানের দাম পাচ্ছে না। ধানকল মালিকরা সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধান কিনছে না।” ধান বিক্রি করলে চাষিদের চেকে টাকা দেওয়ার রাজ্য সরকারি সিদ্ধান্তেরও বিরোধিতা করে মদনবাবু বলেন, “বেশির ভাগ কৃষকেরই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই। দু’বস্তা ধান বিক্রির জন্য কৃষক কেন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে যাবে? যেখানে গ্রামে বেশির ভাগ ব্যাঙ্ক ‘জিরো ব্যালেন্সে’ অ্যাকাউন্ট খুলতেই চাইছে না!” আলু-সহ বিভিন্ন সব্জির দাম পড়ে যাওয়া নিয়ে চাষিরা গভীর সঙ্কটে বলে অভিযোগ করেন ফরওয়ার্ড ব্লকের অগ্রগামী কিষাণ সভার নেতা হাফিজ আলম সৈরানি। তিনি বলেন, “কৃষকরা চাষের খরচ তুলতে পারছে না। হাজার হাজার আলু চাষি পথে বসবে।”
খাদ্যমন্ত্রীর অবশ্য পাল্টা দাবি, “চেকে পেমেন্টের মাধ্যমে কৃষকরা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন। আগে লাভের গুড় খেয়ে যেত ফড়েরা। এখন তা হচ্ছে না।” মন্ত্রী আরও বলেন, “ধান কলের মালিকরা ছাড়াও রাজ্য সরকারের সংস্থা ইসিএসসি, কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থা ন্যাফেড, এমসিসিএফের মাধ্যমে ধান কেনা হচ্ছে। এ ছাড়া, এফসিআই-ও ধান কিনবে। এর পরেও যদি কোনও বিধায়ক মনে করেন, তাঁর এলাকায় কৃষকরা ধান বিক্রি করতে পারছেন না, তা হলে তিনি যেন সরাসরি খাদ্য দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। খাদ্য দফতরের কর্মীরা গিয়ে শিবির করে ধান কিনবে।” খাদ্যমন্ত্রীর আরও বক্তব্য, “হিসাব করে দেখা গিয়েছে, মাত্র ১৫% মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই। তারা বিডিও-অফিসে গেলেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য সাহায্য পাবে।”
বিধানসভা ভোটে বিপর্যয়ের পরে গ্রামাঞ্চলের বেশির ভাগ বাম নেতাই ‘ঘরে বসে’ গিয়েছিলেন। কৃষক সভার রাজ্য সম্পাদক তথা সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য তরুণ রায়ের মতো অনেক নেতা আবার ‘পলাতক’। এই অবস্থায় কৃষক স্বার্থে আন্দোলনের ডাক শেষ পর্যন্ত কতটা ‘সফল’ হবে, তা নিয়ে নেতাদেরও সন্দেহ রয়েছে। তাই এই আন্দোলনে দলীয় কর্মীদের সঙ্গেই সাধারণ চাষি ও খেতমজুরদেরও সামিল করতে চায় বামেরা। আরএসপির কৃষক নেতা চন্দ্রশেখর দেবনাথ বলেন, “আমরা কৃষকদের বলছি, আমাদের দলে যোগ দিতে হবে না। নিজেদের স্বার্থে পথে নামুন।”
এর আগে গ্রামের কৃষকরা ‘জেল ভরো’ আন্দোলন করেছে বলে বাম নেতাদের দাবি। কিন্তু রাজ্য সরকারের কোনও টনক নড়েনি বলে তাঁদের অভিযোগ। মদনবাবু বলেন, “মাত্র ১ হাজার কোটি টাকা কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে। অথচ, এই সময়ের মধ্যে ১৬ হাজার কোটি টাকা দেওয়ার কথা। ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজ্য সরকার মাত্র ৭৩০ মেট্রিক টন ধান কিনেছে। যা লক্ষ্যমাত্রার ধারে কাছেও নয়!” জবাবে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত খাদ্য দফতর লেভি হিসাবে ১ লক্ষ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করেছে। যা গত বারের তুলনায় বেশি। এছাড়া এফসিআই-সহ বিভিন্ন সংস্থাও ধান সংগ্রহে নেমেছে। অসত্য তথ্য নিয়ে ওঁরা পথে নামছেন!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.