যুক্তি আছে, বলছেন মন্ত্রী
পুর-বিদ্যুতের খরচ রাজ্য মেটাক, দাবি ঘিরে সঙ্কট
য় বাড়ানোর নতুন সূত্র নেই। বিভিন্ন পুরসভা থেকে বকেয়া বিল আদায় করে আর্থিক দুরবস্থা কিছুটা সামাল দেওয়ার কথা ভেবেছিল রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানি। অথচ সে আশা জলে দিয়ে পুরসভাগুলোই এখন দাবি তুলেছে, কলকাতা পুরসভার মতো তাদের বিদ্যুৎ-বিল মেটানোরও দায়িত্ব নিক সরকার।
আর এই কাজিয়ার জেরে মহাকরণের অন্দরে যে শুধু জটিলতা তৈরি হয়েছে তা-ই নয়, সরকারের টাকা নিয়েই সরকারের পাওনা মেটানোর ‘বিষচক্রে’ আটকে পড়তে হচ্ছে রাজ্যকে! বস্তুত পুরসভাগুলির বকেয়া বিদ্যুৎ-বিলের অঙ্ক, এবং তা মেটাতে সরকারি বাজেটে বরাদ্দ রাখার প্রস্তাবকে ঘিরে ফের স্পষ্ট হচ্ছে কোষাগারে ‘বিষচক্রের’ এই ছবি। কলকাতা পুরসভা এখানে উদাহরণ হিসেবে এল কেন?
কলকাতা পুরসভার বিদ্যুৎ-সহ শক্তি (এনার্জি) খরচের ৭৫% মেটাতে রাজ্য বাজেটে ফি বছর ১০০ কোটি (৭৫% বা ১০০ কোটি, যেটা কম, সেটাই ঊর্ধ্বসীমা) টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। এ বার অন্যান্য পুরসভার দাবি: তাদের জন্যও একই ব্যবস্থা চালু করা হোক। শান্তিপুর পুরসভার চেয়ারম্যান তথা স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়ক অজয় দে এই মর্মে পুরমন্ত্রীকে লিখিত প্রস্তাবও দিয়েছেন। তাতে অজয়বাবু প্রশ্ন তুলেছেন, কলকাতা পুরসভার সামনে আয়ের যত পথ আছে, বাকি ১২৬টি পুরসভার তা নেই। তা হলে বাকিদের সঙ্গে ‘বিমাতৃসুলভ’ আচরণ করা হবে কেন?
এবং পুরমন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম মনে করছেন, প্রস্তাবটি ‘যুক্তিসঙ্গত।’ মন্ত্রীর আশ্বাস, আগামী বাজেটে যাতে এই খাতে টাকা বরাদ্দ হয়, সে জন্য অর্থ দফতরের সঙ্গে তিনি কথা বলবেন।
ঘটনা হল, যে বকেয়া শোধ করার লক্ষ্যে পুর-নগরোন্নয়ন দফতর অর্থ দফতরে ‘দরবার’ করার কথা বলছে, সেই টাকা সরকারেরই আর একটি দফতরের প্রাপ্য! বিদ্যুৎ দফতরের। যার মন্ত্রী মণীশ গুপ্ত কবুল করে নিচ্ছেন যে, পুরসভাগুলো দিনের পর দিন বিল বাকি ফেললেও তাঁদের কার্যত কিছুই করার নেই। দফতরের তথ্য বলছে, কলকাতা বাদ দিয়ে বাকি পুরসভাগুলোর কাছে বিদ্যুৎ-বিল বাবদ পাওনা ১৪৬ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা। যেমন আসানসোলের বকেয়া ৩২ কোটি ১১ লক্ষ, বাঁকুড়ার ১০ কোটি ৭ লক্ষ, মেদিনীপুরের ৯ কোটি ৮৫ লক্ষ, কৃষ্ণনগরের ৭ কোটি ৯২ লক্ষ, পুরুলিয়ার ৬ কোটি ১৯ লক্ষ। বিদ্যুৎমন্ত্রীর কথায়, “মাঝে মাঝে কিছু শোধ হয়। আবার পড়ে থাকে।”
বকেয়া আদায়ের জন্য সরকার কি আইনি পথে কড়া হতে পারে না?
মণীশবাবু বলছেন, “লাইন কেটে দেওয়াটা একটা উপায় হতে পারে। কিন্তু পুরসভার লাইন কাটা হবে কী করে? পুরসভা মারফত তো পুর-পরিষেবা পরিচালিত হয়। তাই সংযোগ কাটলে সাধারণ মানুষের উপরে প্রভাব পড়বে। বিদ্যুতের অভাবে জল সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কাজেই ওই পথে যাওয়া যাবে না।” বিদ্যুৎ দফতরের এক শীর্ষ কর্তার মতে, “গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আইন করে এই কাজ করা কঠিন।”
বিদুৎ ব্যবহার করব, অথচ বিল দেব না, পুরসভাগুলোর এই দাবি কি যৌক্তিক?
অজয়বাবুর যুক্তি, “রাজ্যের পুর-আইনে পরিষ্কার বলা আছে, পুরসভার সম্পত্তি বা জমিতে কোনও রকম মেরামতি, খুঁটি পোঁতা ইত্যাদি কাজ করলে বিদ্যুৎ সংস্থাকে ‘চার্জ’ দিতে হবে। বণ্টন সংস্থা কখনওই তা দেয় না। উপরন্তু সম্পত্তি-কর বাবদ পুরসভাগুলোর বহু টাকা প্রাপ্য। তার কিছুটা মিললেও বকেয়া বিল মেটানো যেত। কিন্তু বকেয়া সম্পত্তি-করের তালিকা সরকারকে বারবার পাঠিয়েও সুরাহা হয়নি।”
অজয়বাবুর যুক্তি মেনে নিচ্ছেন পুরমন্ত্রী। ফিরহাদের কথায়, “কলকাতা পুরসভাকে যদি একশো কোটি দেওয়া যায়, অন্যদের অল্প হলেও টাকা পাওয়া উচিত। আমি নিজে মনে করি, ওঁদের প্রস্তাব যুক্তিযুক্ত। কিন্তু পুর দফতরের বাজেটে এখনও এমন সংস্থান নেই। এ বছর তো কিছু হবে না। আগামী বাজেটে পুর দফতরের জন্য বরাদ্দের সময়ে যাতে এই দিকটা খেয়াল রাখা হয়, সে ব্যাপারে অর্থ দফতরের সঙ্গে কথা বলব।”
অর্থ দফতরের ভাঁড়ার যে কত ‘বাড়ন্ত’, অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র তা অবশ্য বিলক্ষণ জানেন!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.