লটারির অপেক্ষায় না থেকে, পঞ্চম শ্রেণিতে আবেদনকারী সব ছাত্রছাত্রীর ভর্তির দাবিতে দু’টি স্কুলে বিক্ষোভ দেখালেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শুক্রবার মালদহের রতুয়া থানার পিরগঞ্জের মহানন্দা উচ্চতর হাই স্কুলে শিক্ষকদের তালাবন্দি করে রাখেন গ্রামবাসীরা। মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার বেগুনবাড়ি হাইস্কুলে বিক্ষোভকারীদের ছোড়া ইটে জখম হয়েছেন প্রধান শিক্ষক। মালদহের স্কুলটিতে অতিরিক্ত বিভাগ চালু করে পিরগঞ্জ পঞ্চায়েতের ৪৭৭ জন ছাত্রছাত্রীকে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি নেওয়ার ‘মুচলেকা’ দিয়ে ঘেরাও-মুক্ত হন প্রধান শিক্ষক স্বপন চক্রবর্তী। মুর্শিদাবাদের স্কুলটি এ দিনের মতো লটারিই বন্ধ করে দিয়েছে। পিরগঞ্জেও এই দিন অভিভাবকদের বিক্ষোভ ও পথ অবরোধের জেরে পঞ্চম শ্রেণির ভর্তি প্রক্রিয়া ভণ্ডুল হয়ে যায়। বিক্ষোভে স্থানীয় কংগ্রেস নেতারাও সামিল হন। মালদহ-রতুয়া রাজ্য সড়ক এ দিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত অবরোধ করে রাখেন তাঁরা। বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। প্রধান শিক্ষক স্বপনবাবু বলেন, “বিক্ষোভকারীরা আমাদের ঘেরাও করে মারতে এসেছিলেন। স্কুলের দরজা-জানালা ভাঙতে গিয়েছিলেন তাঁরা। বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত সেকশন খুলে ও পার্শ্ব শিক্ষক নিয়োগ করে এলাকার ৪৭৭ জন ছাত্রকে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে কোনও রকমে রেহাই পেয়েছি।” |
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, পিরগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতে একটিই মাত্র স্কুল হচ্ছে মহানন্দা উচ্চতর হাই স্কুল। ওই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য ওই এলাকার ৫৮৪ জন অভিভাবক ১০ টাকা করে জমা দিয়ে আবেদনপত্র কেনেন। ২১ ডিসেম্বর লটারিতে মাত্র ২০০ ছাত্রছাত্রী পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ পায়। তার পরেই এলাকায় ব্যাপক অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। এ দিন লটারিতে যাদের নাম উঠেছে তাদের ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হতেই গ্রামের অন্য অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। যে ছাত্রছাত্রীরা ভর্তির সুযোগ পেয়েছে, তাদের অভিভাবকদের স্কুল চত্বর থেকে তাড়িয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। তার পরে স্কুলের শিক্ষকদের তালা দিয়ে আটকে পথ অবরোধ শুরু হয়। পিরগঞ্জ অঞ্চলের কংগ্রেস সভাপতি সফিউল আলম বলেন, “অঞ্চলে একটি মাত্র হাই স্কুল। এ বার এলাকার ৯টি সরকারি প্রাথমিক, ৬টি নার্সারি স্কুল থেকে ৪৭৭ জন ছাত্রছাত্রী চতুর্থ শ্রেণিতে পাশ করেছে। লটারিতে প্রায় ২০০ ছাত্রছাত্রী পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ পায়। আমরা সরকারের ভর্তির কালা কানুন মানি না। এলাকার সব ছাত্রছাত্রীকে ভর্তির দাবিতে স্কুলে তালা মেরে অবরোধ করতে বাধ্য হয়েছি।”
বেগুনবাড়ির স্কুলটি রাজ্য সড়কের পাশে। কাছাকাছি অন্য স্কুলটি রাজ্য সড়ক থেকে বেশ কয়েক কিলোমিটার ভিতরের ন’পুকুরে। বেগুনবাড়ি, স্বরূপপুরের বাসিন্দারা তাই চান, সন্তানদের বেগুনবাড়ির স্কুলেই ভর্তি করাতে। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, “১০৮০ জন ভর্তির আবেদন করেছেন। আসন ৫০০। বিক্ষোভকারীদের ছোড়া ইট আমার মাথায় লেগেছে।” পরিচালন সমিতির সহ-সভাপতি সৈয়দ মল্লিকের কথায়, “অভিভাবকদের দাবি, লটারির উপরে নির্ভর করে থাকলে ভাল ছেলেরাও স্থানীয় স্কুলে পড়তে পারবে না। আমরা বিক্ষোভের জেরে এই দিন লটারিই বন্ধ করে দিয়েছি।” |