|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ২... |
|
নতুন করে কবে আর ভাবা হবে |
ইন্দ্রজিৎ চৌধুরী |
কালীঘাট পেন্টিংস, সুহাসিনী সিংহ ও সি পাণ্ডা সম্পাদিত। ভি অ্যান্ড এ ও মাপিন, ৯৯৫.০০ |
জার্নাল অব ইন্ডিয়ান আর্ট-এ ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্যকে (১৮৮৬) সূচনা ধরলে কালীঘাট পট নিয়ে আলোচনার বয়স হল ১২৫। দুঃখের বিষয়, যে কলকাতায় এর সৃষ্টি, সেখানকার সব সংগ্রহশালা মিলিয়েও এই পটের সংখ্যা নগণ্য। লন্ডনের ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড অ্যালবার্ট (ভি অ্যান্ড এ) মিউজিয়মে রক্ষিত আছে সব থেকে বড় সংগ্রহটি। এই সংগ্রহ থেকেই কিছু পট এই প্রথম প্রদর্শিত হল ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে (ভি এম এইচ), সঙ্গে ছিল ভি এম এইচ-এর ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রহটিও। একশো পটের এই প্রদর্শনী উপলক্ষেই প্রকাশিত হয়েছে আলোচ্য বইটি।
মূলত চেস্টার হারভিৎজ-এর বিপুল ও অনবদ্য সংগ্রহের (এখন পিবডি এসেক্স মিউজিয়মে রক্ষিত) ভিত্তিতে ১৯৯৯-এ লেখা জ্যোতীন্দ্র জৈন-এর বইটিতে কালীঘাট পটুয়াদের সঙ্গে বাংলার গ্রাম-গ্রামান্তরে ভ্রাম্যমাণ পটুয়া, প্রতিমা-নির্মাতা কুমোর, এবং সূত্রধর শিল্পীদের যোগসূত্র প্রথম সবিস্তারে আলোচিত হয়। কুমোররা প্রতিমার চালচিত্র আঁকতেন, লক্ষ্মীসরা আঁকতেন। বস্তুত লক্ষ্মীসরার সঙ্গে কালীঘাট পটের রেখার যোগ যথেষ্ট। আর সূত্রধর শিল্পীরা (এখন অধিকাংশ বইতেই তাঁদের ‘কার্পেন্টার’ বলা হয়, এখানেও তাই আছে) রথের গায়ে প্রচুর ছবি এঁকেছেন। ফলে গ্রামের পটুয়ারাই কালীঘাটে এসে রীতি বদলে পট এঁকেছেন এর বাইরে নতুন কথা কী বলা যায়, ভাবা দরকার।
প্রদর্শনীর সব ছবি এবং তার বিবরণ ছাড়া বইটিতে চারটি নিবন্ধ আছে। প্রদর্শনীর কিউরেটর তথা ভি অ্যান্ড এ-র সহকারী কিউরেটর সুহাসিনী সিংহ লিখেছেন তাঁদের সংগ্রহের কালীঘাট পট নিয়ে, ভি এম এইচ-এর এডুকেশন অফিসার পিয়াসী ভরসা এখানকার সংগ্রহের বিবরণ দিয়েছেন, জ্যোতীন্দ্র জৈন আলোচনা করেছেন কালাম পটুয়াকে নিয়ে, আর আছে পটের রঙের প্রথম বিশ্লেষণ। সুহাসিনী প্রাথমিক পরিচিতির থেকে বেশি গভীরে যাননি। বস্তুত আর্চারের ক্যাটালগের চল্লিশ বছর পর এত সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে মন ভরে না। কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করি। মহরম সংক্রান্ত অন্তত একটি পট (বুরাক) ভি অ্যান্ড এ-তে আছে, আছে হারভিৎজ, ব্রিটিশ লাইব্রেরির মতো অন্যান্য সংগ্রহেও। এত গুরুত্বপূর্ণ পটটি অবশ্য এই প্রদর্শনীতে আসেনি। কালীমন্দিরের পাশে কি এ পট বিক্রি হত? গাজির পটের ধারার সঙ্গে কি এর কোনও যোগ আছে? দ্বিতীয়ত, পোস্টকার্ড আকারের পটই বা কেন এত আঁকা হয়েছিল? এমন কয়েকটি পট প্রদর্শনীতে ছিল। শুধু ভি অ্যান্ড এ নয়, ভারত কলাভবনেও এমন ছবি আছে। অর্থাৎ কোনও একটি নির্দিষ্ট অর্ডারে এগুলি আঁকা হয়নি, আর্চার যেমন ভেবেছিলেন। এটাকে শুধু ‘মিস্ট্রি’ বলে এড়িয়ে গেলে চলবে কি? (পৃ ৯৫) ত্রৈলোক্যনাথ পুরীর মন্দিরের সামনে বিক্রি হওয়া জগন্নাথ পটের সঙ্গে কালীঘাট পটের তুলনা করেছিলেন। এই ধরনের বিষয় কবে সবিস্তারে আলোচিত হবে?
পিয়াসী যত্ন করে ভি এম এইচ সংগ্রহের পটের খুঁটিনাটি তুলে ধরেছেন এ দেশের সংগ্রহগুলির এমন বিবরণ একত্র করতে পারলেও অনেক কাজ হয়। মুর্শিদাবাদের কালাম এ কালের ‘কালীঘাট’ পটুয়া পুরনো পট নকল করতে করতে তৈরি করেছেন নিজস্ব আঙ্গিক, তাঁকে নিয়ে জ্যোতীন্দ্র জৈনের লেখাটি কালীঘাট পটের ভবিষ্যৎ ভাবতে আগ্রহী করে। |
|
|
|
|
|