|
|
|
|
বাস ধর্মঘট অব্যাহত, যাত্রীদের ভরসা যন্ত্রচালিত ভ্যান-ট্রেকার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বহরমপুর |
বাস ধর্মঘটে মুর্শিদাবাদ জেলার জনজীবন প্রায় অচল, কিন্তু কোনও পক্ষেরই কোনও হেলদোল নেই। বাস মালিক সমিতি ও বাস শ্রমিক সমিতির সঙ্গে গত বুধবার মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকের পরও বাস ধর্মঘট প্রত্যাহার করানো যায়নি। তার তিন দিন পরে সেই ব্যর্থ বৈঠকের কথা তুলেই বাস ধমর্ঘট প্রত্যাহারের দায় সারছে সব পক্ষই।
ফলে দু’দিন ধরে এ জেলায় যাতায়াতের ভরসা বলতে গুটিকতক সরকারি বাস, কয়েকটি ট্রেন, কিছু ট্রেকার এবং ‘লছিমন’ আর ‘লাদেন’ নামের যন্ত্র চালিত ‘অবৈধ’ রিকশাভ্যান। আশ্চর্য এই যে, এই ভ্যান বন্ধ করার দাবিতেই বাস ধর্মঘট, কিন্তু তাই এখন যাত্রীদেরল ভরসা। রয়েছে লরিও। আর তাতেই বাদুড়ঝোলা হয়ে প্রাণ হাতে করে দু’দিন ধরে গন্তব্যে যেতে হয়েছে নিত্যযাত্রীদের। অনেকে যেতেও পারেননি। |
|
পরিবহন ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ায় তার প্রভাব পড়ছে ব্যবসা-বানিজ্যে ও চিকিৎসা পরিষেবাতেও। রোগীরা গ্রাম থেকে জেলাসদরে ও মহকুমাসদরে চিকিৎসা করাতে যেতে পারছেন না। জেলার পরিবহণ আধিকারিক ছুটিতে রয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত পরিবহণ আধিকারিক বিশ্বজিৎ বারিক বলেন, “গত বুধবারের বৈঠকে বাস ধর্মঘট না করার জন্য অনুরোধ করা হয়। তার পরও বাস ধর্মঘট চলছে। ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য আন্দোলনকারীদের কাছে আমরা ফের আবেদন করছি।” তবে তাঁর কথায়, “সপ্তাহ তিনেকের জন্য আরটিও-র দায়িত্বে রয়েছি। ফলে এর বেশি কিছু করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।” রাজ্য তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সহ-সভাপতি শুভাশিস রায় মুর্শিদাবাদ জেলা আরটিও বোর্ডের সরকার মনোনীত সদস্য। শুভাশিসবাবু বলেন, “লছিমন’ ও ‘লাদেন’-এর মতো বেআইনি যানবাহনের সমস্যাটি তৈরি হয়েছে বিগত বাম সরকারের আমলে। তবুও আমরা ওই সব বেআইনি যানবাহন বন্ধ করার জন্য দিন সাতেক সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু ওই সময়টুকু না দিয়ে বাস ধর্মঘট ডেকে দিয়ে জেলার আধ কোটিরও বেশি মানুষকে আন্দোলনকারীরা বিপাকে ফেলে দিয়েছেন।” তিনি বলেন, “বেআইনি যানবাহন বন্ধ করার জন্য দিন সাতেক সময় চাইছি। বাস ধর্মঘট তুলে নিয়ে আমাদের ওই সময়টুকু দেওয়া হোক।” |
|
বাস ধর্মঘট। মুর্শিদাবাদে এ ভাবেই চলছে যাতায়াত। |
এ জেলার বাস মালিকদের সব কটি সমিতি নিয়ে গঠিত ‘মুর্শিদাবাদ জেলা বাস ওনার্স কাউন্সিল’ এবং বাসের সব ক’টি শ্রমিক সংগঠন নিয়ে গঠিত ‘মুর্শিদাবাদ জেলা মোটর শ্রমিক সমন্বয় কমিটি’র পক্ষ থেকে সম্মিলিত ভাবে ওই ধমর্ঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। মুর্শিদাবাদ জেলা বাস ওনার্স কাউন্সিলের সম্পাদক তপনকুমার অধিকারীর সোজা কথা, “আমাদের ৫ দফা দাবি পূরণের ব্যাপারে জেলা প্রশাসন সেই ২০০২ সাল থেকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলেছে। প্রায় এক দশক ধরে তাঁদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি ছাড়া অন্য কিছুই জোটেনি। ফলে আর প্রতিশ্রুতিতে ভুলছি না। প্রতিশ্রুতি কার্যকর হয়েছে দেখার পরই বাস চালানো হবে না। নচেৎ নয়।” মুর্শিদাবাদ জেলা মোটর শ্রমিক সমন্বয় কমিটির পক্ষে জয়দেব মণ্ডল বলেন, “পরিবহণ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত সব উপকরণের দাম কয়েক গুণ বাড়লেও বেশ কয়েক বছর আগে ধার্য করা তালিকা অনুসারে ভাড়া নেওয়া হয়। এ জেলার বিভিন্ন এলাকায় ওই ভাড়াটুকুও আদায় করতে গিয়ে যাত্রীদের হাতে হামেশাই প্রহৃত হতে হচ্ছে বাসের কর্মীদের। প্রশাসন এই ব্যাপারে ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত বাস চালাবেন না শ্রমিকরা।”
মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) নিরঞ্জন কুমার অবশ্য বলেন, “অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, ডোমকল মহকুমার বিভিন্ন থানা এলাকায় বাসকর্মীদের সঙ্গে গণ্ডগোলের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বেআইনি যানবাহন চলাচল বন্ধ করার জন্য কড়া ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সুপার ও মহকুমাশাসকদের লিখিত ভাবে জানিয়েছেন জেলাশাসক নিজে। ফলে ওই নির্দেশ কার্যকর হতে কয়েক দিন সময় দিতে হবে। আন্দোলনকারীরা ওই সময় টুকু না দিয়েই বাস চালানো বন্ধ করে দিয়ে অচলাবস্থা সৃষ্টি করলেন। তাঁদের কাছে ফের একই অনুরোধ করছি।” |
—নিজস্ব চিত্র। |
|
|
|
|
|