|
|
|
|
উৎসবে ফিরল নবাবি মুর্শিদাবাদ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • লালবাগ |
হঠাৎ দেখলে মনে হয়, সময় যেন পিছিয়ে গিয়েছে। ঝাড়বাতিগুলো ফের রঙিন। দেওয়ালের খসে পড়া পলেস্তারার বদলে নতুন রং। বেড়েছে চাকচিক্য। অন্দরমহলের সঙ্গে মানানসই করে বদল ঘটেছে বাহিরেরও। নতুন করে আলো দিয়ে সাজানো হয়েছে গোটা প্রাসাদ, যেন ইতিহাসের পাতা থেকে তুলে আনা হয়েছে অতীত মুর্শিদাবাদকেএভাবেই ‘মুর্শিদাবাদ হেরিটেজ ফেস্টিভ্যাল’-কে কেন্দ্র করে নতুন ভাবে সেজে উঠেছে লালবাগের ভবন। ১৮৭০ সালে রায় বাহাদুর লক্ষীপৎ সিংহ দুগ্গারের প্রতিষ্ঠিত এই ভবনের অন্দরমহল সাজানো হয়েছে সেই সময় কালের আসবাবপত্র দিয়েও।
গত ১৭ ডিসেম্বর থেকে এই ভবনে শুরু হয়েছে ‘মুর্শিদাবাদ হেরিটেজ ফেস্টিভ্যাল’। পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে জনতার দরবারে মুর্শিদাবাদকে পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের প্রচার এবং প্রায় হারিয়ে যাওয়া মুর্শিদাবাদের লোকশিল্পকে আমজনতার সামনে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে শুরু হয়েছে ওই উৎসব। মুর্শিদাবাদ হেরিটেজ ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি, ক্র্যাফটস্ কাউন্সিল অফ ওয়েস্টবেঙ্গল ও রাজ্য পর্যটন দফতর নিগমের সহায়তায় ওই উৎসব চলবে আগামী ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। |
|
মুর্শিদাবাদ হেরিটেজ উৎসব। নিজস্ব চিত্র। |
উৎসব উপলক্ষে এই ভবনে হয়ে গিয়েছে হাতের কাজের বিশেষ কর্মশালাও। ক্র্যাফটস্ কাউন্সিল অফ ওয়েস্টবেঙ্গলের অধিকর্তা (অপারেশনস) রুবি পালচৌধুরী বলেন, “ওই কর্মশালায় শোলা, কাঁথা, রিপু শিল্প, কাঠ, অলঙ্কার শিল্প হাতে-কলমে শেখানোর পাশাপাশি বাণিজ্যিক দিক নিয়েও শিল্পীদের প্রশিক্ষিত করা হয়েছে।”
শোলা শিল্পী বীরভূমের অনন্ত মালাকার শোলায় পুরনো পদ্ধতিতে কিভাবে শিল্পসুষমা ফুটিয়ে তোলা যায়, তার টেকনিক্যাল দিক গুলো তুলে ধরেন। কাঁথা শিল্পের বাণিজ্যিক দিক নিয়ে আলোচনা করার জন্য ওডিশা থেকে আসেন অনুপম মণ্ডল। কলাভবনের ছাত্রী প্রিয়া মেহরা-সহ দিল্লির দুজন ‘রফুগর’ রিপু শিল্প নিয়ে প্রশিক্ষণ দেন। এ ছাড়াও পিতল কিংবা রুপোর সঙ্গে মুক্ত দিয়ে কী ভাবে সোনার বিকল্প অলঙ্কার শিল্প গড়ে তোলা যায়, তা হাতে-কলমে শেখান হাওড়ার মানস গড়াই। উৎসবে বিভিন্ন ক্ষুদ্র-কুটির শিল্পের ৫২টি স্টল হয়েছে, যার অধিকাংশই মুর্শিদাবাদের। এর পাশাপাশি মেদিনীপুরের থেকে মাদুর ও পটশিল্প, বর্ধমানের শোলা, হাওড়ার ঝিনুক-সহ দক্ষিণ দিনাজপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগণার শিল্পীরাও এখানে এসেছেন। তাঁত-জামদানি-খাদি শিল্পের সঙ্গে পাটজাত দ্রব্যেরও স্টল রয়েছে।
মুর্শিদাবাদ হেরিটেজ ডেভলপমেন্ট সোসাইটি’র সহ-সভাপতি সঞ্জয় দুগ্গার বলেন, “নবাবি আমলের ইতিহাস ছাড়াও মুর্শিদাবাদে কাওয়ালি গানের ঘরানা উৎসবে তা পরিবেশিত হবে।” জেলার সংস্কৃতির অঙ্গ হিসেবে ঘোড়া নাচ, বাউল, হাত পুতুল, আলকাপ, রায়বেঁসে, ঢাক বাদ্য, আদিবাসী নৃত্য, কাওয়ালি, অগ্নিনৃত্যের অনুষ্ঠান রয়েছে। ২৬ ডিসেম্বর দুপুরে রয়েছে ভাগীরথী পাড় বরাবর নৌকা বাইচ, ভাটিয়ালি গানের তালে নদীর উপরে নৌকা নিয়ে ভেসে যাওয়া, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে বজরায় ভাসিয়ে দেওয়া। এর পরে ভাগীরথীর স্মরণে স্তব করে হাজারদুয়ারি প্রাসাদের সামনে শিল্পী অলকানন্দা রায় ও তার দলের নৃত্য। মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) অজয় ঘোষ বলেন, “পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে মুর্শিদাবাদকে আরও বেশি করে সাধারণের কাছে তুলে ধরার পাশাপাশি ইতিহাস ও সংস্কৃতির মিশেল ঘটিয়ে হেরিটেজ উৎসব আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, তাতে জেলাপ্রশাসনের সহায়তা রয়েছে। আমরা চাই উৎসবকে সামনে রেখে জেলার পর্যটন শিল্পকে সাধারণের মানুষের কাছে পরিচিত ও আকর্ষণীয় করে তুলতে।” |
|
|
|
|
|