উৎসবের মুখে ফিরছেন প্রিয়জনেরা
চার্চের আলো ছড়িয়ে পড়ে ঘরেও। মিহির অগাস্টিন লুইসের ঘরে সন্ধ্যা হলেই সাজিয়ে দেওয়া হচ্ছে বাতিদান। মল্লিকা আব্রাহাম যত্ন করে বহু দূর থেকে নিয়ে আসা মোজা পরিয়ে দিচ্ছেন মায়ের পায়ে।
কৃষ্ণনগরের চারপাশে আরশিপাড়া, ডনবস্কো, অনাদিনগর, নগেন্দ্রনগর, বাগাডাঙা ভেসে যাচ্ছে উৎসবের আলোয়। বড়দিনের মুখে বাড়িতে ফিরছেন প্রিয়জনেরা। কৃষ্ণনগর ক্যাথিড্রাল গির্জার ফাদার রবীন মণ্ডল বলেন, “এই এলাকার খ্রিস্টধর্মাবলম্বীরা সারা বছর ধরে অপেক্ষা করে থাকেন এই দিনটির জন্য। সারা বিশ্বেই এই দিনটি খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের কাছে সব থেকে বড় উৎসবের দিন। এখানে তার সঙ্গে যোগ হয়েছে, প্রিয়জনদের বাড়ি ফেরার আনন্দ। এখানে অনেকেই কর্মসূত্রে বাইরে চলে যেতে বাধ্য হন। তাঁরাই ফিরে আসেন এই দিনটিতে। তাই তাঁদের বাড়ি ভরে যায় এই শুভক্ষণে।”
কেউ কেউ ফেরেন এক বছর পরে। কেউ বা তারও বেশি। কেউ থাকেন বিদেশে। কেউ অন্য রাজ্যে। কেউ ইঞ্জিনিয়ার। কেউ দিনমজুরের কাজ করেন। বড়দিনে গির্জার মাঠে যে মেলা বসে, তাতে পাশাপাশি বিক্রি হয় কেক ও তেলেভাজা। সেই মেলায় কে কোন ধর্মের, সে হিসেবও অবান্তর হয়ে যায়। সব ধর্মেরই মানুষ এক সঙ্গে উদ্যাপন করেন শীতের এই উৎসব। মনিকা দাস যেমন নারকোল নাড়ুর গন্ধেই ফিরে যান তাঁর ছোটবেলায়। এখন স্বামীর সঙ্গে থাকেন সিঙ্গাপুরে। তাঁদের বছর সাতেকের ছেলে দৈবিককে ঘিরেই এখন ভোর থেকে রাত কাটছে দাদু মিহির অগাস্টিন লুইসের। সাত বছর পরে মেয়ে, জামাই, নাতিকে পেয়ে খুশিতে বিভোর তিনি বলেন, “উৎসবের আনন্দ এ বার অনেক বেশি।” কেক থেকে পিঠে তৈরি, সবই নিজের হাতে দেখভাল করছেন তিনি। মনিকাদেবী বলেন, “সিঙ্গাপুরেও বড়দিন পালন করা হয় খুব ভাল ভাবে। কিন্তু সেখানে আমরা তিন জনই তা উপভোগ করি। বারবার বাড়ির কথা মনে পড়ে যায়। এ বার আমরা বাড়ির তৈরি কেক খাব, পিঠে খাব, এটাই তো আনন্দ।”
সাত সমুদ্র পার করে বারমুডা দ্বীপে একটি হোটেলে কাজ করেন অভিজিৎ মণ্ডল। প্রতিবার বড় দিনের উৎসবে কিন্তু তাঁর বাড়ি আসা চাই-ই চাই। তাঁর অপেক্ষায় থাকেন স্ত্রী ও দুই কন্যা। বাড়ি ফিরেই প্রথমে হেঁশেলটা নিজের দখলে করে ফেলেন তিনি। নিত্য নতুন খাবার তৈরি করেন। হই হই করে কেটে যায় দিনগুলো। অভিজিৎবাবু বলেন, “সারা বছর টাকার জন্য এক মনে কাজ করে যাই। কর্মক্ষেত্রে যে রান্না করি, তা-ও যান্ত্রিক ভাবে। কিন্তু নতুন রান্না শিখলেই মনটা আনচান করে ওঠে। কখন বড়দিনে বাড়ি ফিরে সেটা করে খাওয়াব মেয়েদের।” সহাস্যে তিনি বলেন, “আমার কর্মক্ষেত্রে সকলেই জেনে গিয়েছেন যে, বড়দিনে আমি বাড়ি ফিরবই। তখন ওখানে বহু লোক ভিড় করেন। কিন্তু আমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।” কিন্তু সবাই সেই ছুটি পান না। তবু তাঁদের বাড়ির লোক অপেক্ষায় থাকেন। বিশ্বাস করতে চান না, অন্তত দু’টো দিনের জন্য তাঁরা আসবেন না। যেমন কর্মসূত্রে সৌদি আরবে বসবাসকারী সুদীপ মণ্ডলের স্ত্রী স্বপ্নাদেবী বলেন, “আট বছর হল বিয়ে হয়েছে, এক বারও বড়দিন আমরা এক সঙ্গে কাটাতে পারিনি। তবু প্রতিবারই মনে হয়, এ বার বুঝি আসতে পারবে। কিন্তু কোনও বারেই হয় না।”
মনের কোণের এই ফাঁকা জায়গাটা ভরে দেয় মেলা। ফুচকার দোকান থেকে কেকের দোকান, তেলেভাজার দোকান থেকে খেলনার দোকান। সন্ধ্যা থেকেই আলো আর গান। সামনে সাজানো গির্জা। দুর্গা, জগদ্ধাত্রী, সান্তা ক্লস-উৎসবের রঙে একাকার হয়ে যায়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.