|
|
|
|
চার মাস পার |
খোঁজ মেলেনি কেশপুরের সেই দুই চাদর বিক্রেতার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
পরিজনের খোঁজ মিলবে, এই আশাতেই বসে রয়েছে দুই পরিবার। এ দিকে দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেল চার মাস। নানা জায়গায় হন্যে হয়ে ঘুরেও ‘খোঁজ’ পাননি দুই পরিবারের সদস্যরা। পুলিশ-প্রশাসনের কাছে গিয়েছেন। শাসকদলের নেতাদের কাছেও দরবার করেছেন। মামলা রুজু হয়েছে। পুলিশও নানা জায়গায় খোঁজখবর করেছে। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত আলোর দেখা মেলেনি। কী ভাবে নিখোঁজ হলেন দু’জন, অপহরণ হলে কারা তার পিছনে--সবই অস্পষ্ট।
চাদর ফেরি করতে বিনপুরে গিয়ে চলতি বছরের ২৩ অগস্ট থেকে নিখোঁজ কেশপুরের উঁচাহার গ্রামের দুই বাসিন্দা--শেখ মেকাইল ও আজফার আলি মল্লিক। ওই দিন বেশ কয়েক জন মিলেই কেশপুর থেকে বিনপুরে চাদর ফেরি করতে গিয়েছিলেন মেকাইলরা। বাকিরা ফিরে এলেও এই দু’জনের আর খোঁজ মেলেনি। তার পর থেকেই উদ্বেগের দিনযাপন দুই পরিবারের। দিন কাটছে চরম অনিশ্চয়তায়। হারানো পরিজনের কথা মনে পড়লেই চোখের কোণ জলে ভাসছে। গরিব ফেরিওয়ালাদের কারা অপহরণ করবে, তাদের উদ্দেশ্যই বা কী হতে পারে---তাও বুঝতে পারছেন না উঁচাহারের মানুষ। |
আজফার আলি মল্লিক |
শেখ মেকাইল |
|
মেকাইল যৌথ পরিবারের সদস্য। চার ভাই। বাড়িতে বাবা-মা ছাড়াও রয়েছেন স্ত্রী। রয়েছে নাবালক যমজ মেয়ে। মেকাইলের দাদা শেখ ইস্রাফিল বলেন, “ভাইয়ের খোঁজ পেতে কত জায়গায় দরবার করেছি। পুলিশের কাছে গিয়েছি। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত তো কিছুই হল না। বাড়ির কারও মন ভাল নেই।” তাঁর কথায়, “অনেক আশা নিয়ে পুলিশের কাছে গিয়েছিলাম। ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর--সর্বত্র গিয়েছি। কিন্তু, পুলিশও ভাইয়ের ব্যাপারে কিছু বলতে পারছে না।” আজফাররা দু’ভাই। বাবা-মা ছাড়াও স্ত্রী-সন্তান রয়েছে। নিখোঁজের ঘটনা যখন ঘটে, তখন আজফারের স্ত্রী ছিলেন গর্ভবতী। দেড় মাস আগে এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। স্বামীর কথা ভাবতে ভাবতে মাঝেমধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। আজফারের মা রহিমা বেগমের কথায়, “জানি না কী ভাবে সংসার চলবে। দেখতে দেখতে চার মাস পেরিয়ে গেল। এখনও ছেলের খোঁজ নেই। প্রতিটা দিনই দুশ্চিন্তায় কাটছে। কত জায়গায় গিয়েছি। কেউই ওর কোনও খোঁজ দিতে পারছে না।” বাবা নিখোঁজ, এখনও তাই নবজাতকের নামও ঠিক করে উঠতে পারেননি পরিবারের সদস্যরা। এক সময়ে জঙ্গলমহল জুড়ে যে টানা অশান্তি, খুন-নাশকতা চলেছেতার পিছনে মাওবাদীদেরই হাত ছিল বলে পুলিশের দাবি। কিন্তু, এই দুই ফেরিওয়ালা কী ভাবে নিখোঁজ হলেন, কারাই বা তাদের অপহরণ করবে---সে নিয়ে ধন্দে পুলিশও। ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার সুপার গৌরব শর্মার বক্তব্য, “দু’জনের খোঁজে নানা জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়েছে। কিন্তু, এখনও খোঁজ মেলেনি।” দুই পরিবারের সদস্যরা পুলিশ-প্রশাসনের পাশাপাশি ‘শাসকদল’ তৃণমূলেরও দ্বারস্থ হয়েছিল। তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি দীনেন রায় নিজে পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলেছেন। তাঁর এখনও বিশ্বাস, “পুলিশ নিশ্চয়ই সব রকম ভাবে চেষ্টা করছে।” |
|
|
|
|
|