খুশিতে বাঁচুন
ভরসা রাখুন লাঠি আর টুলে
ত্বিক রোশন বা করিশমা কপূরের মতো আকর্ষণীয় শরীর হোক এমন সাধ অনেকেরই আছে। কিন্তু সাধ্যের অতীত জিমের খরচ। নিদেনপক্ষে খান কয়েক ডাম্বল-বারবেল কিনে বাড়িতে হোম-জিম বানাতে গিয়েও বার কয়েক ভাবতে হচ্ছে। ট্যাঁকের জোর নেই বলে শরীরচর্চা হবে না বলে যাঁরা হতাশায় ভুগছেন তাঁদের বলি, বিদ্যুৎ না থাকলে গরমে তো হাতপাখা দিয়েই কাজ চালাই। তা হলে জিম বা অত্যাধুনিক সরঞ্জাম না থাকলে ঘরের কোনায় পড়ে থাকা লাঠি আর বসার টুল দিয়েই বা শরীরচর্চা শুরু করব না কেন? আসুন একটু বুদ্ধি খাটাই। আসুন ট্যাঁকের হতাশা ঝেড়ে ফেলে লাঠি আর টুল দিয়েই শরীর তৈরি শুরু করি।
শরীরচর্চা করতে গিয়ে আমরা সাধারণত দু’টি বিষয়ে নজর দিই। এক, কার্ডিওভাসকুলার ওয়ার্কআউটমানে হাঁটা, জগিং ইত্যাদি। দুই, রেজিস্ট্যান্স ট্রেনিং বা শক্তি বাড়ানোর ওয়ার্কআউট যেমন, পুশ আপ, স্কোয়াট ইত্যাদি।
ভাবছেন লাঠি আর বসার টুল নিয়ে কী ভাবে কার্ডিও বা শক্তি বাড়ানোর ওয়ার্কআউট করা যায়? কৌতূহল আর না বাড়িয়ে সোজা ওয়ার্কআউটে ঢুকে পড়ি।
পুরুষ বা মহিলা, যাঁদের বয়স ২০-৪৫-এর ঘরে, অনায়াসেই করতে পারেন নীচের দু’টি কার্ডিও ওয়ার্কআউট।

১) জাম্পিং জ্যাক: ঘরের মেঝেতে একটি নরম কাপড় অথবা পাপোষ পেতে নিন। এ বার হাতে নিন লাঠি। অল্প লাফিয়ে পা দু’টি পাশাপাশি জড়ান, এক বা দেড় ফুট। একেই বলে জাম্পিং জ্যাক। একই সঙ্গে লাঠি-সহ হাত তুলুন ঠিক মাথার উপরে। আবার অল্প লাফিয়ে হাত নামিয়ে শুরুর জায়গায় ফিরুন। প্রথম তিন সপ্তাহ ৩০ সেকেন্ড ধরে এই কাজ করুন। তার পরে এক মিনিট পর্যন্ত করবেন। প্রতি বার করার পরে এক মিনিট মতো বিশ্রাম নিন। ৩-৪ বার এই ব্যায়াম করুন। লাফিয়ে মেঝেতে নামার সময় নজর দিন যাতে পায়ের আওয়াজ কম হয়। অর্থাৎ ‘সফ্ট’ ল্যান্ডিং হয়।

২) মাউন্টেন ক্লাইম্বার: প্রথমেই দেখে নিন আপনার টুলটির উচ্চতা ১২-১৪ ইঞ্চির মধ্যে কি না। এ বার টুলের উপরে পুশআপ দেওয়ার ভঙ্গিতে দু’হাত উপুর হয়ে ভর দিন। দু’পা মেঝেতে। এ বারে পাহাড়ের গা বেয়ে ওঠার দৃশ্য মনে মনে কল্পনা করুন। পাহাড়ে যে ভাবে ‘ক্রল’ করে এগোয়, তেমনই টুলে হাতের ভর দিয়ে একটা হাঁটু ভাঁজ করে বুকের কাছে আনুন। মুহূর্তে সেটা সোজা করে অন্য হাঁটু এ বার বুকের কাছে আনুন। এই প্রক্রিয়াটি ৩০ সেকেন্ড মতো চালিয়ে যান। সপ্তাহ তিনেক বাদে এক মিনিট ধরে করুন। প্রতি বার করার পরে এক মিনিট বিশ্রাম নিন। ব্যায়ামটি ৩-৪ বার করুন। বিরতিমূলক এই কার্ডিওতে হার্টরেট বেশ উঁচুতে ওঠে। শরীর ছোট ছোট ‘স্পেল’-এ ধকল নিতে শেখে। শরীরের বিপাকের হার বাড়িয়ে মেদ কমাতে সাহায্য করে।

দু’টি ব্যায়ামে একটি চ্যালেঞ্জ আছে। হাঁটা বা জগিংয়ের মতো একঘেয়ে নয়। তা হলে আজই হাতে তুলে নিন লাঠি আর মজা করে সপ্তাহে ৩-৪ দিন করুন জাম্পিং জ্যাক এবং মাউন্টেন ক্লাইম্বার।
এ বারে আসি শক্তি বাড়ানোর ব্যায়ামে। প্রথমেই বলি লাঠি আর টুল হয়তো আপনাকে ঋত্বিকের মতো পেশি দেবে না। কিন্তু সুস্থ, টানটান এবং মেদহীন শরীর তৈরি হবে। সুতরাং অবহেলা না করে হাতে তুলে নিন লাঠিটি।

১) লাঠি নিয়ে ওভারহেড স্কোয়াট: লাঠিটি দু’হাতে ধরে সোজা মাথার ঠিক উপরে ধরুন। হাত টানটান। এ বারে স্কোয়াট করুন, যাকে চলতি কথায় বলেন বৈঠক। তবে যখন বসছেন খেয়াল রাখবেন হাঁটু ৯০ ডিগ্রির বেশি যেন ভাঁজ না হয়। সহজ কথায় হাঁটু মাটির সঙ্গে সমান্তরাল হলেই আবার উঠে দাঁড়ান। মোট দশ বার করুন। ৪০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট মতো বিশ্রাম নিন। এ ভাবে তিন বার করুন। লাঠি দিয়ে এই ওভারহেড স্কোয়াট খুব কাজে দেয়। জীবনের সাধারণ কাজকর্মের সঙ্গে মিল আছে এই ব্যায়ামের। বিশেষত যাঁদের বুকের অংশের মেরুদণ্ডের এবং কাঁধের নমনীয়তা কম তাঁদের জন্য এই ব্যায়াম জরুরি। সঙ্গে যোগ করুন হাঁটুর ‘স্টেবিলিটি’। হাঁটুর বাত ঠেকিয়ে রাখতে এই ব্যায়ামের জুড়ি নেই।
 
২) লাঠি দিয়ে স্ট্যান্ডিং রো: এই ব্যায়ামের জন্য এক জন সঙ্গী লাগবে। সঙ্গীর কাজ হল লাঠিটা টেনে রাখা, মানে বাধার সৃষ্টি করা। আপনি দু’ হাতে ছবির মতো লাঠিটি নিজের দিকে টেনে আনবেন। আপনি যখন টানবেন তখন সঙ্গী যেন আস্তে আস্তে ঢিলে দেন। এ ভাবে দশ বার টানুন আর ছাড়ুন। মিনিট খানেক বিশ্রাম নিয়ে তিন বার করুন। অনেকেরই জীবনযাত্রার কারণে পিঠের উপরের অংশ অনেকটা গোলাকার হয়ে যায়। বুকের মাংসপেশির সংকোচন আর ট্র্যাপিজিয়াম মাংসপেশির দুর্বলতায় ‘পসচার’ নষ্ট হয়ে যায়। এই স্ট্যান্ডিং রো করলে ট্র্যাপিজিয়াম, ল্যাটিসিমাস ডর্মি শক্তিশালী হবে। আপনার ‘পসচার’ ভাল হবে। দৈনন্দিন জীবনে আমরা স্যুটকেশ টানি, দরজা টেনে খুলি। এই ব্যায়ামে এই সব কাজেও সুবিধা হবে।

৩) লাঠি নিয়ে স্টেপআপ এবং ট্যুইস্ট: টুলের উপর এক পায়ে উঠে দাঁড়ান। সঙ্গে সঙ্গে অন্য হাঁটুটি ভাঁজ করে ছবির মতো কোমরের উপরে তুলুন। হাতে ধরে থাকা লাঠিটি বুকের সামনে থেকে ঘুরিয়ে ওই ভাঁজ হওয়া হাঁটুর দিকে নিয়ে যান। এ ভাবে বাঁ পায়ে দশ বার উঠুন আর লাঠিটা ভাঁজ হওয়া হাঁটুর দিকে ঘোরান। আবার ডান পায়ে দশ বার। বিশ্রামের সময় ঠিক আগের ব্যায়ামের মতো। স্টেপআপেও দারুণ কাজ হয়। একই সঙ্গে আপনার সিঁড়ি ভাঙার বা কোনও উঁচু জায়গায় চড়ার অভ্যাসও হয়ে গেল। কোয়াড্রিসেপ মাংসপেশির জোর বাড়িয়ে হাঁটুর ‘স্টেবিলিটি’ আনে। নিতম্বের প্লুটিয়াম মাংসপেশির কার্যক্ষমতা বাড়ে। আর লাঠি নিয়ে যখন ট্যুইস্ট করছেন তখন পেটের পাশের ‘অবলিক’ মাংসপেশি শক্তিশালী হচ্ছে। সব মিলিয়ে খাসা একটা প্যাকেজ।


৪) বার্ডডগ হোল্ড: এটি লাঠি দিয়ে পেটের আর কোমরের গভীরের মাংসপেশির শক্তি বাড়ানোরে ব্যায়াম। হামাগুড়ি দেওয়ার ভঙ্গিতে বসে বাঁ হাত সামনে প্রসারিত করুন। সঙ্গে সঙ্গে ডান পাটি ছবির মতো পিছন দিকে টানটান সোজা করুন। লাঠিটা রাখুন ঠিক পিঠের উপর। লক্ষ্য রাখুন, লাঠি যেন মাথা, পিঠের উপরের অংশ আর কোমর স্পর্শ করে থাকে। এর মানে মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক ‘কার্ভ’ বজায় আছে। ২০-৩০ সেকেন্ড এই অবস্থায় থাকা যথেষ্ট। তার পরে হাত ও পা পাল্টে নিন। সামান্য বিশ্রাম নিয়ে ৩-৪ বার করুন। পেটের ও কোমরের গভীরের মাংসপেশি এই ব্যায়ামে শক্তিশালী হয়। পেটটা টানটান হবে। দূরে থাকবে কোমরের ব্যথা।

উপরের ব্যায়ামগুলি হেসেখেলে এক দিন অন্তর এক দিন, সপ্তাহে তিন দিন করুন।

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য

 



অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.