উদ্যাপন
ঐতিহ্যের ১৭৫
৮৩৭ সাল। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের বয়স দুই। সবে দু’বছর আগে ইংরেজি শিক্ষার বিস্তারকে সরকারি নীতিরূপে গ্রহণ করা হয়েছে। ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় তখনও বিদ্যাসাগর নামে পরিচিত হননি। সদ্যপ্রয়াত দুই সমাজসংস্কারক ডিরোজিও এবং রামমোহনের প্রভাব তখন এ দেশে যথেষ্ট।
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের ওই সময়ে শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে এসেছিল জোয়ার। এরই টানে নেমে পড়েন সদ্য বিলেত থেকে আসা এমিলি ইডেন। ‘নেটিভ’ শিশুদের পড়াশোনার জন্য এমিলি জায়গা খুঁজছিলেন। কলকাতার উপকণ্ঠে ব্যারাকপুরের একটি পার্ক তাঁর নজরে আসে। প্রথমে অস্থায়ী ভাবে দু’কামরার ঘরে শুরু হয় ‘ভাইস রিগ্যালস্ পার্ক স্কুল’-এর ক্লাস। পরে এটি ‘ভাইস রিগ্যালস্’ নামে পরিচিত হয়।
১৮৩৬ সালে লর্ড অকল্যান্ড গভর্নর জেনারেল হয়ে ভারতে পা রাখেন। কলকাতা তখন ভারতের রাজধানী। অবিবাহিত অকল্যান্ডের ভারতে ভ্রমণসঙ্গী ছিলেন তাঁর দুই বোন এমিলি ও ফানি।
সেই সূত্রেই লর্ড অকল্যান্ডের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ছিল স্কুল পরিচালনায়। ১৮৩৭ থেকে ১৮৫৯ বড়লাটের দরবার তহবিল থেকে স্কুলের খরচ চলত। ১৯১১ পর্যন্ত গভর্নর জেনারেলরাই বার্ষিক গ্রান্ট হিসাবে অর্থসাহায্য দিয়ে যান। রাজধানী দিল্লিতে স্থানান্তরিত হওয়ার পরে ১৯১২ থেকে এই স্কুল অবিভক্ত বাংলার গভর্নরদের প্রত্যক্ষ অধীনে আসে। নাম হয় ‘গভর্নর্স স্কুল’। ১৯২১-এ অবিভক্ত বাংলার ডাইরেক্টরেট অফ পাবলিক ইনস্ট্রাকশন (ডিপিআই)-এর অধীনে আসার পরে নাম হয় ‘ব্যারাকপুর গভর্নমেন্ট হাই স্কুল’। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ডাইরেক্টরেট অফ স্কুল এডুকেশনের অধীন আজকের ‘ব্যারাকপুর রাষ্ট্রীয় উচ্চ বিদ্যালয়’। ১৭৫ বছরের ঐতিহ্যকে সঙ্গে করে একটি স্কুলের পথ চলার ইতিহাস এই।
ইতিহাস বলছে, শুরুর দিকে ছিল ‘জেনারেল স্কলারশিপ এগজামিনেশন’ প্রথা। ইংরেজি শিক্ষার পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়েও পড়ানো হত। পড়াতেন হিন্দু কলেজের শিক্ষকেরা। ছাত্রদের কাগজ ও কলমের খরচ দিত স্কুল। মেধাবীদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হত। নিচু শ্রেণির ক্লাস নিতে পারলে উঁচু শ্রেণির ছাত্ররা পেত জলপানি। ছাত্র ভর্তিতে জাত বা ধর্মকে একেবারেই গুরুত্ব দেওয়া হত না।
সেই সময়ের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এই সিদ্ধান্ত বিরল।
১৯৪২-এ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন মিলিটারি দখলে চলে যায় স্কুল। স্কুল সূত্রে বলা হচ্ছে, সেই সময়ে নষ্ট হয়েছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি। ১৯৪২ থেকে ১৯৪৫ সাময়িক ভাবে স্কুল চলত ১৩ নম্বর রেল গেটের পাশের একটি বাড়িতে। পরে ফিরে আসে আগের জায়গায়। প্রথম তৈরি সেই বাড়িটা আজও আছে। সেখানে এখন চলে প্রশাসনিক কাজকর্ম। পাশেই রয়েছে প্রশস্ত স্কুল ভবন। স্কুলের প্রাক্তনী তালিকায় আছে ডাক্তার ভোলানাথ বসু, ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদের মতো উজ্জ্বল নাম। কবি গোলাম মুস্তাফা এখানে শিক্ষকতা করতেন।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবানন্দ বাগচী বলেন, “প্রতিষ্ঠা দিবস ২রা জানুয়ারি ধরে শুরু হয়েছে ১৭৫ বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠান। সারা বছর ধরে চলছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আন্তঃবিদ্যালয় প্রতিযোগিতা। ৩০ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সমাপ্তি হবে ১৭৫ বর্ষপূর্তির।”




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.