আগুন নিয়ে খেলা
দু’পা অন্তর মার্কেট কমপ্লেক্স। বাদবাকিটা সব্জিবাজার। দুপুরে ঘণ্টা দুই ছাড়া পাইকারি আর খুচরো ক্রেতাদের ভিড়। কিন্তু আগুন লাগলে চটজলদি নেভানোর কোনও ব্যবস্থা নেই। দমকলের গাড়ি ঢোকার পথও বন্ধ। পুরসভার মাকের্ট কমপ্লেক্সগুলির অবস্থাও তথৈবচ। জলের ব্যবস্থা বলতে শুধুই শৌচাগার অথবা পানীয় জলের সরু ট্যাপ কল। এক একটি মার্কেট কমপ্লেক্সে দু’টি করে মগ আর বালতিই ভরসা। নেই অগ্নি নির্বাপক সিলিন্ডার। আমরি-কাণ্ডের পর থেকে দমকল দফতরের পথ চেয়ে বসে আছেন মার্কেট কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। কিন্তু কোনও সহযোগিতা এখনও পাচ্ছেন না তাঁরা।
মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগী জানান, “প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, নার্সিংহোম, মার্কেট কমপ্লেক্স ইত্যাদি বহু ক্ষেত্রেই আগুন-বিধি সংক্রান্ত পরিকাঠামো নেই। বহুতল বাড়ির প্রতিটি তলায় জলের লাইন, অগ্নি নির্বাপক সিলিন্ডার রাখতে হবে। তা নিয়মিত ‘রিফিল’ও করতে হবে। বিদ্যুতের তারের সংস্কার করতে হবে।” আরামবাগ দমকল স্টেশন অফিসার সুনীতরঞ্জন চক্রবর্তী জানান, “আমাদের লোকবল কম। মহকুমাশাসকের নির্দেশ অনুযায়ী বিভিন্ন ক্ষেত্রে একে একে যাব।”
আরামবাগ পুরসভার নিজস্ব মার্কেট কমপ্লেক্স আছে ৪টি। সব্জি বাজার ১টি। এ ছাড়াও, পি সি সেন রোড, লিঙ্ক রোড, কোর্ট রোড, মিঞা পাড়া, ব্লক পাড়া, ৩ নম্বর ওয়ার্ড, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ছোট বড় মিলিয়ে মার্কেট কমপ্লেক্সের সংখ্যা প্রায় ৫০। শহরের সবচেয়ে পুরনো এবং বড় সব্জি বাজারটির মালিকানা দৌলতপুরের জমিদার হালদার পরিবারের। আয়তন প্রায় ৬ কাঠা। ‘দেবোত্তর সম্পত্তি’ হিসেবে চিহ্নিত ওই জমিতে ব্যবসা করেন প্রায় ৯০ জন। আগুন লাগলেই নিমেষে ধ্বংস হয়ে যাবে গোটা বাজার। মাছের বাজার খোলা জায়গায় থাকলেও আড়াল করেছে সব্জির গুদাম।
বাজারের তত্ত্বাবধায়ক বৃদ্ধ মদন হালদার বলেন, “একটা সিলিন্ডার তা-ও রাখা ছিল। এখন সেটা কোথায়, খুঁজে দেখতে হবে। বাজারটির সংস্কারের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ঋণের আবেদন করেছি। পাওয়া যায়নি। এখানে ব্যবসায়ী-পিছু দিনে সাড়ে ৩ টাকা করে ভাড়া পাই। তা দিয়ে এত বড় বাজারটির সংস্কার করা সম্ভব নয়।” ওই বাজারের সব্জি ব্যবসায়ী শঙ্কর রায়, পাইকারি ক্রেতা জয়দেব চক্রবর্তীর বক্তব্য, “প্রাচীন এই সব্জি বাজারটির উপরে আরামবাগ মহকুমার সব্জি বিক্রেতারা অনেকটাই নির্ভর করেন। বাজার কর্তৃপক্ষ বলছে, অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে কিছু করতে পারবে না। বাজার বন্ধ হলে হয়ে যাক। তা হলে আমাদের কী হবে?”
বেসরকারি মার্কেট কমপ্লেক্সেগুলির জেনারেটর ঘর রয়েছে সিঁড়ির নিচে, অথবা করিডরে। ঝুলছে বিদ্যুতের ছেঁড়া তার। বসন্তপুর রোডে একটি মার্কেট কমপ্লেক্সে এক একটি সারিতে ৪৮টি করে দোকান। দু’টি সারির মধ্যে নূন্যতম দাঁড়াবার জায়গাটুকু নেই। মিঞা পাড়ার একটি মার্কেট কমপ্লেক্সের মালিক নিজাম চৌধুরী এবং পি সি সেন রোডের একটি মার্কেট কমপ্লেক্সের মালিক ফাল্গুনী নন্দীর বক্তব্য, “আগুন-সংক্রান্ত কোনও পরিকাঠামোই নেই। আমরা সাগ্রহে প্রশাসনের প্রাথমিক নির্দেশের অপেক্ষা করছি।” মার্কেট কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ী সংগঠনের সম্পাদক মহাদেব সরকার বলেন, “বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে ব্যবসা করতে হচ্ছে। আগুন লাগলে না আছে জল, না আছে অন্য ব্যবস্থা। জলের লাইন দীর্ঘ দিন খারাপ, মেরামত হয়নি।” কার্যত, আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। মার্কেট কমপ্লেক্স মালিকদের সংগঠনের সদস্য সজল কুণ্ডুও এ কথা স্বীকার করে বলেন, “প্রশাসন নড়ে চড়ে বসেছে। আমরাও উদ্যোগ নিয়েছি। মার্কেট কমপ্লেক্সে কালই সিলিন্ডার বসানো হবে। জলের লাইন ও মেরামত হচ্ছে। ”
আরামবাগ পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান দীপক সরকার বলেন, “আমরা এ সব নিয়ে সজাগ ছিলাম না। ত্রুটি দূর করতে বেশ কিছু পরিকল্পনা নিচ্ছি।” মহকুমাশাসক জানান, গত বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট পক্ষকে নিয়ে বৈঠক হয়েছিল। সেখানে ঠিক হয়েছে, ১৩ জানুয়ারির মধ্যে দমকল সমস্ত ক্ষেত্রগুলি খতিয়ে দেখবে। প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবে। সকলকেই দমকলের থেকে প্রয়োজনীয় শংসাপত্র নিতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.