পঞ্জাবে বিধানসভা নির্বাচনের আগে সন্ত্রাসের ছায়া। দিল্লি পুলিশ আজ দাবি করেছে, ভোটের আগে পঞ্জাবে কয়েক জন রাজনৈতিক নেতা এবং তিন ধর্মীয় নেতাকে হত্যার ছক তারা বানচাল করেছে। রাজধানী থেকে দুই যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরা খলিস্তানি জঙ্গি গোষ্ঠী বব্বর খালসা ইন্টারন্যাশনালের সদস্য। পুলিশের দাবি, সংগঠনের প্রধান ওয়াধাওয়া সিংহ এই হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
বব্বর খালসার ফের সক্রিয় হয়ে ওঠার উদাহরণ এক মাস আগেই পাওয়া গিয়েছিল। অক্টোবরেই অম্বালা ক্যান্টনমেন্ট রেল স্টেশনের বাইরে থেকে বিস্ফোরকবোঝাই একটি গাড়ি উদ্ধার করা হয়েছিল। দেওয়ালির আগে দিল্লিতে নাশকতা ঘটানোর উদ্দেশ্যেই ওই বিস্ফোরক পাঠানো হচ্ছিল বলে পুলিশের দাবি। গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী, আইএসআই তথা লস্কর ই তইবা-র প্ররোচনায় বব্বর খালসা পঞ্জাবে নতুন করে নাশকতার ছক কষছে। আগামী বছরের শুরুতে রাজ্যে বিধানসভা ভোটের সময় গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতা, উচ্চ পদস্থ আমলা, ডেরা সচ্চা সউদা, রাষ্ট্রীয় শিখ সঙ্গত ও আরএসএসের
মতো সংগঠনের পদস্থ ব্যক্তিদের উপরে প্রাণঘাতী হামলা হতে পারে। |
এ বার যাদের পুলিশ কাল গ্রেফতার করেছে, তাদের নাম সর্বপ্রীত সিংহ ওরফে প্রিন্স এবং যশবীন্দ্র সিংহ। দু’জনেরই বয়স ত্রিশ। দিল্লির ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (অপরাধদমন) অশোক চাঁদ জানান, পঞ্জাব পুলিশের কাছ থেকে তাঁরা আগেই খবর পেয়েছিলেন, বব্বর খালসার কয়েক জন জঙ্গি রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় নেতাদের হত্যা করার ছক কষছে। গতকাল জানা যায়, শালিমার বাগের সিঙ্ঘলপুরা মার্কেটে এদের এক জন ফোর্ড আইকন-এ চড়ে আসবে। সেইমতো সর্বপ্রীতকে ধরে পুলিশ। পরে পঞ্জাবের আনন্দপুর সাহিব থেকে তারই ছোটবেলার বন্ধু যশবীন্দ্রকে গ্রেফতার করা হয়। সর্বপ্রীতদের কাছ থেকে তিনটি পিস্তল এবং ৪৫টি কার্তুজ পাওয়া গিয়েছে। অশোক দাবি করেছেন, সর্বপ্রীত পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে, রাজনৈতিক নেতারা ছাড়াও তিন ধর্মীয় গুরু বাবা রাম রহিম, বাবা পিয়ারা সিংহ এবং বাবা আশুতোষকে হত্যা করার নির্দেশ ছিল তাঁদের উপরে। অক্টোবরে বিস্ফোরকবোঝাই গাড়ি উদ্ধারের ঘটনার সঙ্গে এদের যোগ ছিল কি না, তা দেখা হচ্ছে।
ডেপুটি পুলিশ কমিশনারের দাবি, স্কুলছুট সর্বপ্রীতের সঙ্গে বব্বর খালসার এক সদস্য কুলবীর সিংহের প্রথম দেখা হয়েছিল ২০০১ সালে, হংকং-এ। গত বছর কুলবীরের সঙ্গে তার ফের দেখা হয়। তখন দলে নেওয়া হয় সর্বপ্রীতকে। বব্বর খালসার প্রধান ওয়াধাওয়া সিংহর সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ ছিল সর্বপ্রীতের। ইতিমধ্যেই দু’বার জাল টাকা, অ্যাসল্ট রাইফেল এবং রকেট লঞ্চার পেয়েছিল সর্বপ্রীত। তৃতীয় বার অস্ত্র আনতে গিয়েই সে পুলিশের জালে ধরা পড়ে।
পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী, ২০০৩ সালেই বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছিল সর্বপ্রীত। একটি খুনের মামলায় ধরা পড়লেও পরে ছাড়া পায়। ২০০৯ সালে মাদক চোরাচালানে নামে সে। পঞ্জাবে তাকে পুলিশ খুঁজছিল বলে সে প্রথমে রাঁচিতে পরে দিল্লিতে ডেরা বাধে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, গত এক দশক ধরেই পঞ্জাবে নতুন করে অশান্তি তৈরির চেষ্টা করছে আইএসআই। বব্বর খালসা, খালিস্তান জিন্দাবাদ ফোর্স, ইন্টারন্যাশনাল শিখ ইউথ ফেডারেশনের জঙ্গিদের সীমান্তপারের শিবিরে প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে। উত্তরপ্রদেশ থেকে নেপালের মধ্যে শিখ জঙ্গিদের যাতায়াতের তথ্য মিলেছে। |