ভর্ৎসনা বম্বে হাইকোর্টের
‘সস্তা’য় ময়দান চেয়ে বিতর্কে ‘সত্যাগ্রহী’ অণ্ণা
দিল্লিতে অনশনে বসার পরিকল্পনা ছাড়তে হয়েছিল প্রবল ঠান্ডার জন্য। কিন্তু ‘ঘরের মাঠ’ মুম্বইয়েও কল্কে পাবেন না, সম্ভবত ভাবতেও পারেননি অণ্ণা হজারে।
হল যদিও সেটাই।
বাণিজ্যনগরীতে অনশনের জন্য ‘সস্তায়’ বড় মাঠ চাইতে গিয়ে প্রত্যাখ্যাত তো হলেনই, বরং তীব্র ভর্ৎসনা করে তাঁর ‘সত্যাগ্রহের’ নৈতিক ভিত্তি নিয়েই বড়সড় প্রশ্ন তুলে দিল বম্বে হাইকোর্ট। প্রথমে আদালতের বক্তব্য শুনে অণ্ণা ঘোষণা করেছিলেন, তাঁকে জায়গা দেওয়া না-হলে ফের জেলে গিয়েই অনশন করবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অণ্ণা দাবি করেছেন, তাঁর ‘অনভিজ্ঞ’ সমর্থকেরা ‘ভুল করে’ আদালতে এমন আর্জি জানিয়েছিলেন। তার মধ্যেই অণ্ণাকে অনশনে না-বসতে এ দিন ফের অনুরোধ জানিয়েছে কেন্দ্র।
অণ্ণার অনশনের জন্য ‘মুম্বই মেট্রোপলিটন রিজিয়ন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’র (এমএমআরডিএ) মাঠ চাইতে যাওয়া আবেদনকারীদের শুক্রবার হাইকোর্টের দুই বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ সাফ জানিয়েছে, অণ্ণার আন্দোলন তাঁর সমর্থকদের কাছে ‘সত্যাগ্রহ’ হতেই পারে। তবে এমনও বহু নাগরিক রয়েছেন যাঁরা এমন জমায়েতকে ‘বিশৃঙ্খলা’ হিসেবে দেখেন। একই সঙ্গে বিচারপতিরা প্রশ্ন তুলেছেন, সংসদে যখন লোকপাল বিল নিয়েই আলোচনা চলছে, তখন তার বাইরে এই নিয়ে অণ্ণার অনশন ও সভা করার সিদ্ধান্তকে সংবিধান ও সংসদীয় ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করা হিসেবে ধরা হবে না কেন। আদালত এও জানিয়েছে, এই বিষয়ে তারা কোনও সিদ্ধান্ত জানাবে না। কারণ সেটা সংবিধানের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করারই নামান্তর।
অণ্ণা শিবিরের ঘনিষ্ঠ ‘জাগ্রুত নাগরিক মঞ্চ’ এ দিন বম্বে হাইকোর্টে আর্জি জানায়, ২৭ ডিসেম্বর থেকে অণ্ণার অনশনের জন্য তাদের মুম্বই শহরের এমএমআরডিএ মাঠটি বিনামূল্যে বা ‘সস্তায়’ ব্যবহার করতে দিতে মহারাষ্ট্র সরকারকে নির্দেশ দিক আদালত। পাঁচ দিন মাঠটি ব্যবহারের জন্য এমনিতে ১১ লক্ষ টাকা ভাড়া এবং ৮ লক্ষ টাকা নিরাপত্তা খাতে জমা রাখতে হয়। লক্ষাধিক মানুষের জমায়েত সম্ভব ওই মাঠটিতে। আবেদনকারী আইনজীবীর আর্জি ছিল, যেহেতু ‘জাতীয় স্বার্থে’ অণ্ণা ‘লড়ছেন’, তাই অনশন স্থল হিসেবে মাঠটি তাদের বিনামূল্যেই দেওয়া হোক। তা না-হলে সরকার স্বীকৃত কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মাঠের ভাড়ায় যে ছাড় পায়, সেটা অন্তত মঞ্জুর হোক। সেটাও নামঞ্জুর হলে শহরের আজাদ ময়দানের সংরক্ষিত এলাকা অনশনের জন্য খুলে দেওয়ার আর্জিও জানানো হয় বিচারপতিদের।
কিন্তু কোনও আর্জি-যুক্তিই ধোপে টেকেনি। বরং প্রতিটি প্রশ্নেই অণ্ণা শিবিরকে ভর্ৎসনা করে আদালত।
শুনানির প্রথমেই ডিভিশন বেঞ্চের দুই বিচারপতি পি বি মজুমদার এবং মৃদুলা ভাটকর জানান, অণ্ণাকে লোকপাল বিল নিয়ে অনশনের অনুমতি তাঁরা দিতে পারেন না। কারণ তাতে সংসদের কাজকর্মে নাক গলানো ও সংবিধানের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ হবে। বিচারপতি মজুমদার বলেন, “লোকপাল বিল যত ক্ষণ না পাশ হচ্ছে, তত ক্ষণ কেউ জানেন না সেটা ঠিক কেমন হবে। তার আগে ওই বিল নিয়ে কারও কিছু বলার থাকলে নিজের বাড়িতে বসে বলতেই পারেন। কিন্তু নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা যখন বিষয়টি দেখছেন, তখন সংসদের বাইরে এই নিয়ে প্রচারের অনুমতি কেন দেওয়া হবে! সেটা সমান্তরাল জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা, যা অসাংবিধানিক।”
অণ্ণার আন্দোলন স্বতঃস্ফূর্ত না রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, তাও স্পষ্ট নয় বলে জানান বিচারপতিরা। তাঁদের প্রশ্ন, স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের রেশ যদি দেশ জুড়েই থাকে, তবে নয়াদিল্লিতে রামলীলা ময়দানে সভা-অনশনের অনুমতি পাওয়ার পরেও কেন অণ্ণা মুম্বই শহরে মাঠ চাইছেন। আর উদ্যোক্তা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা না-হওয়া সত্ত্বেও কোন আইনে বিনামূল্যে বা কম ভাড়ায় এমএমআরডিএ মাঠ তাদের দেওয়া হবে, সেটাও জানতে চান দুই বিচারপতি।
মহারাষ্ট্র সরকার পক্ষের আইনজীবী জানান, মুম্বইয়ের আজাদ ময়দানের খানিকটা (যেখানে হাজার চারেক মানুষের সমাগম সম্ভব) অংশে অণ্ণা বিনামূল্যেই অনশন করতে পারেন। কিন্তু ভাড়া নিয়েও মাঠের সংরক্ষিত অংশ অনশনের জন্য খুলে দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ সেখানে নিয়মিত ক্রিকেট প্রশিক্ষণ হয়। অণ্ণা শিবির যদিও অনশন স্থলের জন্য বড় জায়গাই চায়। ফলে জটিলতা বাড়ছে।
গোটা ঘটনায় সারা দিন কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত দেখিয়েছে স্বয়ং অণ্ণাকেও। আদালতের বক্তব্য শুনে প্রথমেই আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে জানিয়েছিলেন, মুম্বইয়ের কোথাও বসতে না-দিলে ফের জেলে গিয়ে অনশন করবেন। কিন্তু পরে সেই বক্তব্য থেকে সরে এসে জানান, বিনামূল্যে বা সস্তায় মাঠ চেয়ে তাঁর সমর্থকেরা ‘ভুল’ করেছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় আবার অণ্ণা দাবি করেন, এমএমআরডিএ মাঠেই সভা করার চেষ্টা করছেন তাঁরা। তা-ও সেই ‘ছাড়’ দিয়েই! এমএমআরডিএ যদিও বিষয়টি নিয়ে এখনও কিছু জানায়নি।
কিন্তু ছাড় মিললেও তো ৭ লক্ষ টাকা খরচ। কোথা থেকে আসবে?
অণ্ণা জানিয়েছেন, বহু ‘উৎসাহী’ তাঁর অনশন আন্দোলনের জন্য খরচ করতে আগ্রহী। তাঁদের তিনি চেক বা ডিমান্ড ড্রাফ্ট দিতে বলেছেন!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.