তাজা কেক আর বড়দিন। এ যেন সমার্থক। কবে থেকে এই রেওয়াজের শুরু, তা নিয়ে নানা গল্প প্রচলিত আছে। তবে বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে এমনটাই। আর বাজারে বাড়ছে রকমারি কেকের বাহার।
দুর্গাপুরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে জানা গেল, উৎসবের এই সময়ে সবচেয়ে বেশি চাহিদা পাম কেকের। সিটি সেন্টারে একটি হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার শান্তনুরঞ্জন পাল জানালেন, তাঁদের নিজস্ব বেকারিতে প্রস্তুত কেক তাঁরা হোটেলে বিক্রি করেন। কী ভাবে তৈরি হয় সেই কেক? শান্তনুবাবু জানালেন, আমন্ড, কাজু, কিসমিস দিয়ে তৈরি কেকের উপকরণ একমাস ধরে ওয়াইনের মধ্যে রেখে ম্যারিনেট করা হয়। তবেই আসে আকর্ষণীয় ফ্লেভার। এরপরে তৈরি হয় পাম কেক। আর ওয়াইনের সঙ্গে সম্পর্ক রহিত কেক হল ফ্রুট কেক। এই কেকে থাকে নানা রকম ফলের সমাহার। এ ছাড়া চকোলেট মাফিনস ও কুইন কেকের চাহিদা বেড়ে যায় বড়দিনে। তবে গত কয়েক বছরে ওই হোটেলে বড়দিনের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ‘ইয়ুল লগে’র ধাঁচে সাজানো কেক। শান্তনুরঞ্জনবাবু বলেন, “এক সময় মূলত ফ্রান্সে এই কেকের প্রচলন ছিল। এখন আমাদের দেশেও এটি ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে।”
স্টেশন সংলগ্ন দুর্গাপুর বাজারে ১৯৫৬ সাল থেকে কেকের দোকান চালাচ্ছেন মহম্মদ আলি। দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম প্রসিদ্ধ কেক প্রস্তুতকারী একটি সংস্থার কেক বিক্রি করেন তিনি। তিনি জানালেন, বিভিন্ন ধরনের ফ্রুট কেক বিক্রি হচ্ছে। সেগুলির দাম ৯০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া চকো বল, হোয়াইট ফ্রস্ট, ব্ল্যাক ফ্রস্ট, টুইন রোল, স্প্রিং কেকের চাহিদা রয়েছে। সিটি সেন্টার বাসস্ট্যান্ডের কেক বিক্রেতা বাদল হালদার জানান, তাঁর দোকানে ২০০ গ্রাম থেকে ৮০০ গ্রাম কেকের বিক্রি বেশি হচ্ছে। |
দুর্গাপুরের মামরাবাজারে তোলা নিজস্ব চিত্র। |
দেশের বিভিন্ন শহরে কেক ও চকোলেটের দোকান রয়েছে এক সংস্থার। তাঁদের একটি শাখা রয়েছে দুর্গাপুরের বিধাননগরেও। সেখানকার এক কর্মী জানালেন, বড়দিনের অন্তত এক সপ্তাহ আগে থেকেই তাঁদের দোকানে পাম কেক ও ফ্রুট কেকের বিক্রি বেড়ে গিয়েছে। শুক্রবার সকালে ওই দোকানে গিয়ে দেখা গেল, কাঁচের বাক্সের ভিতরে রাখা রং-বেরঙের কেকের দিকে জুলজুল চোখে তাকিয়ে রয়েছে বছর ছয়েকের রেশমি শিকদার। তাঁর বাবা উপলবাবু বললেন, “বড়দিন মানেই কেক। কিন্তু মেয়ের দাবি, কেনার আগে টেস্ট করে দেখে নিতে হবে কোনটা সেরা। বড়দিনের জন্য সেটাই স্পেশাল।”
আগের বছরের থেকে কেকের দাম অন্তত ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, জানালেন ডিপিএল হেড কোয়ার্টার এলাকার কেক সরবরাহকারী আশিস হালদার। কিন্তু বিক্রি তাতে আদৌ কমেনি। উল্টে বড়দিন যত এগিয়ে আসছে কেকের চাহিদা তত বাড়ছে। আশিসবাবুর কাছে জানা গেল আরও নতুন তথ্য। বললেন, “এগলেস কেকের বিক্রি বাড়ছে দিন দিন। কারণ, কেকে ডিমের স্বাদ পছন্দ করছেন না বহু ক্রেতাই। তাছাড়া হিন্দু বিধবাদের অনেকেই ডিম খেতে চান না। তাই তাঁরা কেকও খেতে পারতেন না। এগলেস কেক তাঁদের সমস্যা মিটিয়ে দিয়েছে।”
এখন শুধু রাত পোহানোর অপেক্ষা। |