দেশ জুড়ে থ্রিজি পরিষেবা দেওয়া নিয়ে শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাতের পথেই গেল টেলিকম সংস্থাগুলি। শুক্রবার এ বিষয়ে কেন্দ্রের নির্দেশের বিরুদ্ধে টেলিকম ট্রাইব্যুনাল টিডিস্যাটের দ্বারস্থ হল তারা।
বৃহস্পতিবারই থ্রিজি পরিষেবা দিতে বিভিন্ন সংস্থার গাঁটছড়া বেআইনি বলে ঘোষণা করেছিল কেন্দ্র। অবিলম্বে বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিল তাদের মধ্যের থ্রিজি রোমিং চুক্তি। আর তার পর শুক্রবারই এ বিষয়ে তীব্র ক্ষোভ জানিয়ে টিডিস্যাটের দ্বারস্থ হল তিন টেলিকম সংস্থা ভারতী এয়ারটেল, ভোডাফোন ও আইডিয়া। মোবাইল পরিষেবা সংস্থাগুলির সংগঠন সেলুলার অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া-র ডিরেক্টর জেনারেল রাজন এস ম্যাথুজ জানান, “তিন সংস্থাই আলাদা ভাবে টিডিস্যাট-এ অভিযোগ দায়ের করেছে। শনিবার এর বিশেষ শুনানি হবে।”
কে কোন সার্কেলে থ্রিজি পরিষেবা দেবে গত বছর তা নিলামের মাধ্যমে নির্ধারণ করেছিল কেন্দ্র। তবে কেউই সবক’টি সার্কেলে পরিষেবা দেওয়ার লাইসেন্স পায়নি। তার পরই সারা দেশে থ্রিজি পরিষেবা দিতে নিজেদের মধ্যে চুক্তি করে সংস্থাগুলি। যেমন, এয়ারটেল যেখানে লাইসেন্স পায়নি (ধরা যাক, কলকাতা সার্কেল) সেখানে তারা গাঁটছড়া বেঁধেছে লাইসেন্স পাওয়া সংস্থা ভোডাফোনের সঙ্গে। আর তাতেই আপত্তি তুলেছে টেলিকম মন্ত্রক। তাদের দাবি, এই গাঁটছড়া টেলিকম লাইসেন্স নীতির বিরোধী। কারণ, এ ক্ষেত্রে একটি সংস্থা অন্য সংস্থার জন্য বরাদ্দ স্পেকট্রাম ব্যবহার করছে। ফলে ক্ষতি হচ্ছে কেন্দ্রের। তাই থ্রিজি পরিষেবা দিতে ‘রোমিং’ চুক্তি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে তারা। |
কেন্দ্রের নির্দেশে ক্ষুব্ধ ভারতী এয়ারটেলের দাবি, এই সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। ম্যাথুজ বলেন, এই গাঁটছড়া লাইসেন্স নীতির পরিপন্থী নয়। বরং তা না-হলে বঞ্চিত হতেন গ্রাহকরাই। তাঁর মতে, “স্পেকট্রাম ব্যবহারের অর্থ অন্য সংস্থার বেস টাওয়ার স্টেশন (বিটিএস) ব্যবহার করা। এ ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। টুজি-র ক্ষেত্রে যেমন ‘ইন্ট্রা-সার্কেল’ (একই সার্কেলের মধ্যে অন্য সংযোগ সংস্থার ফোনে পরিষেবা দেওয়া) গাঁটছড়া রয়েছে, এ ক্ষেত্রেও তা-ই হচ্ছে।” তাঁর দাবি, এ জন্য কেন্দ্রের রাজস্ব ক্ষতিরও আশঙ্কা নেই। এ ছাড়া স্পেকট্রাম বরাদ্দের সময় শিল্পমহলের এ ভাবে চুক্তির ব্যাপারে কেন্দ্রই সায় দিয়েছিল। ম্যাথুজের এই দাবিকে সমর্থন জানিয়েছে এয়ারটেল-ও। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে ভোডাফোনও।
এই ডামাডোলের বাজারে থ্রিজি গ্রাহকদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াবে বলে আশঙ্কা করছে টেলিকম শিল্পমহল। একেই মাত্র ক’দিন আগে থ্রিজি পরিষেবা চালু হওয়ায় এর গ্রাহক সংখ্যার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তার উপর কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে বিভ্রান্তি আরও বাড়বে বলে মোবাইল পরিষেবা সংস্থাগুলির অভিযোগ।
কেন্দ্রের নির্দেশ শেষ পর্যন্ত কার্যকর হলে কী থ্রিজি পরিষেবার দাম বাড়বে?
এ নিয়ে এখনই কিছু নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন ম্যাথুজ। একই সঙ্গে তাঁর দাবি, এতে গ্রাহকদের একটা বড় অংশ থ্রিজি পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হবেন। কারণ তাঁর বক্তব্য, সে ক্ষেত্রে একটি সার্কেলে যে বা যারা লাইসেন্স পেয়েছে, সেখানে পরিষেবা দেবে শুধুমাত্র তারাই। অন্য সংস্থা সেই সুযোগ পাবে না। ফলে কম সংখ্যক মানুষকে পরিষেবা দেওয়া যাবে। কমবে পছন্দের সংস্থা বাছার সুযোগও। যা আখেরে টেলিকম শিল্প বিস্তারের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করবে। |