মদ্যপদের অত্যাচারে পরিবেশ বিষিয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ তুলে এলাকা থেকে অনুমোদিত দেশি মদের দোকান তুলে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন বাসিন্দারা। একই দাবিতে সরব হয়েছেন গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে স্থানীয় বিধায়কও। মালদহের চাঁচলের আশাপুরের ঘটনা। স্কুল, বাসস্ট্যান্ড, বাজার লাগোয়া ওই এলাকায় মদের দোকান গড়ার সময়ই লাগাতার আন্দোলন করেছিলেন বাসিন্দারা। বাসিন্দাদের আন্দোলনকে গুরুত্ব না দিয়েই ওই দোকানের অনুমোদন দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। ৮ বছর আগে ওই মদের দোকান চালু হওয়ার পর গোটা এলাকার পরিবেশ বিষিয়ে ওঠাই নয়, যুবক, পড়ুয়া-সহ সর্বস্তরের বহু মানুষ নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ায় এলাকার সামাজিক ও আর্থিক কাঠামো ভেঙে পড়ছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন বাসিন্দারা। এ ছাড়া মদ্যপদের অত্যাচারে এলাকার মহিলাদের জীবনও দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ। ওই দোকান বন্ধ করার দাবি জানিয়ে তাই জেলা প্রশাসন-সহ আবগারি দফতরের দ্বারস্থ হয়েছেন বাসিন্দারা। পৃথক ভাবে একই দাবিতে জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ বিধায়কও।
বিধায়ক আসিফ মেহবুব বলেন, “ওই দোকানের অনুমোদন দেওয়া নিয়ে বাসিন্দাদের আপত্তিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। যা পরিস্থিতি তাতে ওই দোকান বন্ধ করা বা অন্যত্র সরানো জরুরি। সমস্যার কথা জেলাশাসককে জানিয়েছি।” এই প্রসঙ্গে জেলাশাসক শ্রীমতি অর্চনা বলেছেন, “সব দিক খতিয়ে দেখেই আবগারি দফতরের তরফে অনুমোদন দেওয়া হয়। একবার চালু হয়ে গেলে বন্ধ করা যায় না। সরানো যেতে পারে। গণস্বাক্ষর করে তা আবগারি দফতরকে বলতে হবে।”
আবগারি দফতর সূত্রে জানা যায়, ২০০২ সালের ১৩ ডিসেম্বর ওই দেশি মদের দোকান চালু হয়। আগে থেকেই ওই এলাকায় যাতে দোকানের অনুমোদন না-দেওয়া হয় তার দাবিতে লাগাতার আন্দোলন হয়। সরকারি সিদ্ধান্তের কথা বলে কোনও অভিযোগকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। বাসিন্দারা জানান, ওই রাস্তার উপর দিয়ে প্রাথমিক, উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে যাতায়াত করে। এ ছাড়া সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নদীর ওপারে উত্তর দিনাজপুর ও লাগোয়া এলাকার দুষ্কৃতীরা ভিড় জমায়। মদ্যপ অবস্থায় তারা মহিলাদের উদ্দেশ্য করে অশালীন আচরণ ও কটূক্তি করে বলে অভিযোগ। মহিলাদের পথ চলাই দায় হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া বেড়ে গিয়েছে এলাকায় নানা অসামাজিক কাজকর্মও। স্থানীয় খরবা গ্রাম পঞ্চায়ের প্রধান মহবুবুল হকও বলেন, “সহজলভ্য হওয়ায় কমবয়সী তরুণ, যুবকরাও নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছেন। ওই দোকানের জন্য মফফসল এই এলাকার সামাজিক পরিবেশ বিষিয়ে উঠেছে। তথ্য জানার অধিকার আইনে খোঁজ নিয়ে জেনেছি যে দোকান বন্ধ করা না-গেলেও তা স্থানান্তরিত করা যায়। আবগারি দফতর কেন তা করছে না সেটাই স্পষ্ট নয়।” মালদহের আবগারি দফতরের জয়েন্ট কমিশনার সৌমিত্র বিশ্বাস বলেন, “দু’দিন হল জেলার দায়িত্বে এসেছি। বিশেষ কারণে অনুমোদিত দোকান স্থানান্তরিত করার ব্যবস্থা রয়েছে। আশাপুরের বিষয়টি বিস্তারিত খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দেশি মদের দোকানের মালিক ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য বলেন, “এলাকার বাসিন্দারা না চাইলেও তো আমার কিছু করার নেই। দফতরের সিদ্ধান্ত মতোই আমাকে কাজ করতে হবে।” |