ছাত্র আন্দোলনের জেরে উপাচার্য দফতরে ঢুকতে না পারায় অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েও। সেমিস্টার পরীক্ষায় গরহাজির ছাত্রদের জরিমানা মকুব, ছাত্র সংসদের নির্বাচন, বাম জমানার ছাত্র সংসদের আয়-ব্যয়ের অডিট-সহ কয়েকটি দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। কালীপুজোর পরে কয়েক বার ওই ছাত্র সংগঠনের হাতে ঘেরাওয়ের পরে উপাচার্য অসিত দাস দফতরে যাওয়া বন্ধ করেছেন। কোচবিহার শহরে নিজের বাংলোয় বসে জরুরি কাজকর্ম সারছেন।
এই পরিস্থিতির জেরে ক্লাস, গবেষণার কাজে নজরদারি থেকে পাহারাদারদের ওভারটাইমের মতো বহু গুরুত্বপূর্ণ কাজ আটকে রয়েছে। বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার ও ডিনকে বিকেল থেকে ঘেরাও করেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ সমর্থক ছাত্রছাত্রীরা। ফলে, নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে আধিকারিক মহলে। আগামী ২৬ ডিসেম্বর রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের কোচবিহারে আসার কথা। সে দিন সমস্যা মেটাতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মতো আন্দোলনকারী ছাত্ররাও আচার্যের হস্তক্ষেপ দাবি করবেন বলে ঠিক করেছেন।
উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, “কালীপুজোর পরে মাঝে মধ্যেই ঘেরাও হয়েছি। একবার রাতে কয়েক ঘন্টা রাস্তায় কাটাতে হয়। যখন তখন ঘেরাওয়ের ভয়ে বেশ কিছুদিন ধরে নিয়মিত অফিস করতে পারছি না। বহু কাজ ব্যাহত হচ্ছে। রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রীকে সব জানিয়ে চিঠি দিয়েছি।’’ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের উত্তরবঙ্গের আহ্বায়ক বরুণ দত্ত বলেন, “উপাচার্য টালবাহানা করে সমস্যা জিইয়ে রাখছেন। পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছেলেখেলা চলছে। অফিসে না এসে উনি পার পাবেন না। আচার্য তথা রাজ্যপাল ২৬ ডিসেম্বর কোচবিহারে এলে তাকে সব কিছু জানাব।” উপাচার্যের দাবি, এগজিকিউটিভ কাউন্সিলের নিয়ম মেনে জরিমানা করা হয়। আচমকা তা ভাঙা যায় না। নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। অডিটের ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তাদের জানিয়েছি। আন্দোলনকারীরা কিছুই মানছেন না।
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সেমিস্টার পরীক্ষায় গরহাজির থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তিন শতাধিক পড়ুয়াকে এক হাজার টাকা করে জরিমানা করেন। তার পরেই অসন্তোষ শুরু হয়। এ বছরের জানুয়ারি থেকে বকেয়া থাকা ছাত্র সংসদের নির্বাচনের দিন ঘোষণা নিয়েও উপাচার্যের বিরুদ্ধে টালবাহানার অভিযোগ ওঠে। বাম জমানার ছাত্র সংসদের আয়ব্যয়ের অডিটের দাবিও তোলে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। কিন্তু জরিমানা মকুব থেকে অন্য দুই দাবির কোনওটিই পূরণ না হওয়ায় কালীপুজোর পর থেকে ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়। গত দু’মাসে দফায় দফায় উপাচার্য ঘেরাও হন। সম্প্রতি ক্যাম্পাস থেকে বাংলোয় ফেরার সময় তৃনমূল ছাত্র পরিষদ তাঁকে ঘেরাও করে। শীতের রাতে টানা কয়েক ঘন্টা রাস্তায় বসে কাটাতে হয় উপাটার্যকে।
এমনকী, এ মাসেই উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ভরত সাহা-সহ ৪ আধিকারিককে প্রায় দু’দিন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কর্মীরা ঘেরাও করে রাখেন। তার জেরে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার পদত্যাগপত্র জমা দেন। সেটি গৃহীত না হলেও উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে কাজে সমস্যার কথা স্বীকার করেন তিনিও। |