|
|
|
|
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় |
কর্মচারী আন্দোলনে শঙ্কায় পড়ুয়ারা, উদ্বিগ্ন শিক্ষা সংসদ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
উচ্চ শিক্ষা দফতরের ‘আর্জি’ সত্ত্বেও উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী সমিতি লাগাতার আন্দোলনে অনড় থাকায় অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন প্রায় দেড় লক্ষ ছাত্রছাত্রী। এমনিতেই দেড় মাস ধরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভের জেরে উপাচার্য অফিসে ঢুকতে পারছেন না। তার উপরে বৃহস্পতিবার কর্মবিরতির জেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি পরিষেবা ছাড়া সব কাজকর্ম পণ্ড হয়ে যায়। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হয়েও কেন সমস্যা মেটাতে পারছেন না, তা নিয়ে ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবক মহলে ক্ষোভ বাড়ছে।
আগামী এপ্রিলে স্নাতক স্তরের পরীক্ষা। জানুয়ারির মধ্যে ওই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি করে তা ছাপতে দেওয়ার কথা। ছাত্রছাত্রীদের আশঙ্কা, অবস্থা এমনই চলতে থাকলে সেই পরীক্ষা প্রক্রিয়া পর্যন্ত বিপর্যস্ত হতে পারে। |
|
বন্ধের জেরে বন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক |
শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য সমস্যা দ্রুত মিটবে বলে আশাবাদী। তবে এ দিন তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। উচ্চ শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, মন্ত্রীর তরফে আন্দোলনকারীদের কাছেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার আর্জি জানানো হয়েছে।
তবে কর্মচারী সমিতি দাবি করেছে, উচ্চ শিক্ষা দফতরের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আলোচনার পরেই আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সমিতির সেই দাবির যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান সুগত মারজিৎকে লেখা একটি চিঠিও প্রকাশ্যে বিলি করা হয়েছে। সমিতির ওই চিঠির বয়ান অনুযায়ী, বর্তমান উপাচার্য বহাল থাকলে শিক্ষাকর্মীদের ব্যাপারে গৃহীত সিদ্ধান্ত যে কার্যকরী হবে না, সেই ব্যাপারে সুগতবাবু সহমত।
কিন্তু সুগতবাবুর বক্তব্য, বিশ্ববিদ্যালয় অচল করার আন্দোলনে তিনি কখনও সহমত পোষণ করেননি। টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে সুগতবাবু বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় অচল করার আন্দোলনের সঙ্গে আমি কখনও সহমত পোষণ করিনি। উপাচার্যের মেয়াদ বৃদ্ধির যে সিদ্ধান্ত আচার্য তথা রাজ্যপাল নিয়েছেন তা সঠিক। নতুন উপাচার্য নিয়োগের জন্য সময় লাগবে। সে জন্য নতুন কোর্ট, কর্মসমিতি যাতে কাজ করতে পারে, সেটা নিশ্চিত করা জরুরি।” |
|
তিনি কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেবীপ্রসাদ বুটকে একটি ই-মেল পাঠিয়েছেন। সেই ই-মেল-এর ‘প্রিন্ট আউট’ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকের হাতে-হাতে ঘুরছে। সেই ই-মেল প্রসঙ্গ উল্লেখ করলে তাঁর বক্তব্য, “নতুন কোর্ট, কর্মসমিতি কাজ করতে না-পারলে, নয়া উপাচার্য যে নিয়োগ করা যাবে না, সেটাও ই-মেলে লিখে দিয়েছি।”এমনকী, বর্তমান উপাচার্যের মেয়াদ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত তাঁর নিজের না-হলেও আচার্যের নির্দেশ সকলকে মানতে হবে বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন চেয়ারম্যান। তা হলে উচ্চ শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান তাঁদের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন বলে কর্মচারী সমিতি কেন দাবি করছে? দেবীপ্রসাদবাবুর দাবি, “উচ্চ শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমাদের কী কথা হয়েছে, উনি আমাদের কী বলেছেন তা আমাদের সব সদস্য-সদস্যা জানেন। ওঁর (সুগতবাবু) কোনও মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া আমরা সংবাদ মাধ্যমের কাছে জানাব না।”
|
আলোচনা উত্তরে
উপাচার্যকে অপসারণের দাবি কর্মচারী সমিতির আন্দোলনের জেরে অচল হয়ে পড়েছে
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়। প্রায় দেড় মাস ধরে অচলাবস্থা চললেও রাজ্য উচ্চ শিক্ষা দফতর
কেন হাল ফেরাতে পারেনি? এই প্রশ্নে কে কী বলছেন? |
কৃষ্ণা পাল, আহ্বায়ক,
তৃণমূল শিক্ষা সেল, দার্জিলিং |
বেণু দত্ত রায়,
কবি |
আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে
মামলা দায়েরের পর থেকেই উপাচার্য অনেকের
চক্ষুশূল। সন্দেহ হচ্ছে, আন্দোলনে আড়াল থেকে
কলকাঠি নাড়ছেন তাঁরাই। উপাচার্যকে সরিয়ে
ওই মামলা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা মানুষ বরদাস্ত
করবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের হাল ফেরাতে উত্তরবঙ্গ
উন্নয়নমন্ত্রী কিছু করবেন বলে আমরা আশাবাদী। |
বিশ্ববিদ্যালয় ক্রমেই দাবিদাওয়া
আর রাজনীতির কারখানায়
পরিণত হয়েছে। উত্তরবঙ্গের
অভিভাবকেরা আর কত
দিন চুপ থাকবেন? পড়ুয়াদের
ভবিষ্যৎ নিয়ে কত দিন
খেলা চলবে? |
|
অজিত রায়, অধ্যাপক,
উঃবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় |
মঞ্জরী বিশ্বাস, অধ্যক্ষ, কোচবিহার
ঠাকুর পঞ্চানন মহিলা মহাবিদ্যালয় |
উপাচার্যের জন্য কলেজে অচলাবস্থা তৈরি
হয়েছে। বিভিন্ন গবেষণার বিষয় লাটে উঠেছে।
আমরা সমস্ত বিষয় সুগত মারজিৎকে জানিয়েছি।
তিনি সহমত পোষণ করেছেন। আমরা উপাচার্যের
মেয়াদ বৃদ্ধি চাইছি না। তাই এ দিন এক
দিনের বন্ধ পালন করা হয়েছে। |
বেশ কিছুদিন ধরেই বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা চলছে।
ফলে, আমাদের কলেজের বিএ প্রথম ও দ্বিতীয়
বর্ষের প্রায় একশো ছাত্রীর ফল পুনর্মূল্যায়নের কাজ
কবে মিটবে তা নিয়ে উদ্বেগে আছি। এপ্রিলের
পরীক্ষার কথা মাথায় রেখে দ্রুত পরিস্থিতি
স্বাভাবিক করা হওয়া দরকার। |
|
রুমা ঘোষ, অধ্যক্ষ,
আনন্দচন্দ্র কর্মাস কলেজ |
তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়, অধ্যক্ষ,
হলদিবাড়ি কলেজ |
উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে দেওয়া
হবে না, এটা কল্পনাও করা যায় না। আমরা
ভাবতেই শিখিনি। শিক্ষাক্ষেত্রে এটা
ভাল লক্ষণ নয়। |
পঠনপাঠন, গবেষণার কাজ সবকিছু ক্ষতিগ্রস্ত
হচ্ছে। কলেজ পরিচালনায় সমস্যা হচ্ছে। বহু
রেজাল্ট অসমাপ্ত। এ রকম আন্দোলন
সমর্থনযোগ্য নয়। |
|
|
খোদ উচ্চ শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক কাজকর্ম চালু রাখার পক্ষপাতী, সেখানে দেড় লক্ষাধিক পড়ুয়াকে অনিশ্চয়তায় ভুগতে হবে কেন? উপাচার্য বলেছেন, “আমি সমস্যার কথা আচার্য ও শিক্ষামন্ত্রীকে জানিয়েছি। দেখা যাক কী হয়।” |
|
|
|
|
|