রায়গঞ্জে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির দাবি নিয়ে এবার লাগাতার আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিল উত্তর দিনাজপুর জেলা সিপিএম। বৃহস্পতিবার কালিয়াগঞ্জে দলের জেলা সম্মেলনের সমাপ্তির পরে দলের তরফে এ কথা জানানো হয়েছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অপূর্ব পাল জানান, কয়েকদিনের মধ্যেই ওই আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
সিপিএমের অন্দরের খবর, রাজ্য কমিটির নেতাদের পরামর্শেই একযোগে দু’টি উদ্দেশ্য পূরণ করতে এইমস নিয়ে টানা আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রথমত, এইমস নিয়ে আন্দোলনে নামলে কংগ্রেসের পালের হাওয়া কিছুটা কেড়ে জেলায় পায়ের তলার মাটি ফের শক্ত করা যাবে। দ্বিতীয়ত, রায়গঞ্জের কংগ্রেস সাংসদ দীপা দাশমুন্সির এইমস নিয়ে আন্দোলনে যথেষ্ট ‘ক্ষুব্ধ’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই অবস্থায় এইমস নিয়ে প্রকারান্তরে কংগ্রেসের আন্দোলনের পাশে থাকায় মুখ্যমন্ত্রীকে আরও খানিকটা ‘উত্যক্ত’ করা যাবে। এর ফলে অবশ্য তৃণমূল আরও একবার কংগ্রেস-সিপিএম আঁতাতে’র অভিযোগ তোলারও সুযোগ পেয়ে যাবে। তবে স্থানীয় ভাবে তৃণমূলের নেতাদের একাংশও মনে করেন, রায়গঞ্জেই প্রথমে ওই হাসপাতাল করা উচিত। নইলে ‘রাজনৈতিক’ ভাবে তাঁদের বিরুদ্ধেও মানুষ ক্ষুব্ধ হবে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন, ওই হাসপাতালটি প্রথম হবে দক্ষিণবঙ্গের কল্যাণীতে। কারণ সেখানে পরিকাঠামো তৈরি। রায়গঞ্জে জমির সমস্যা আছে বলেও তিনি কেন্দ্রীয় সরকারকে জানিয়েছিলেন। ফলে স্থানীয় তৃণমূলের নেতারাও প্রকাশ্যে ‘অন্যকিছু’ করতে পারছেন না।
এ দিন সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অপূর্ববাবু বলেন, “এইমসের বিষয়টি কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে ছিল। কিন্তু তা বাস্তবায়িত করতে কেন্দ্রের কংগ্রেস জোট সরকার উদোগী নয়। তৃণমূল তো রায়গঞ্জে এইমস চায় না। উভয়পক্ষই বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করছে। তাই আমরা ওই হাসপাতাল গড়ার দাবিতে লাগাতার আন্দোলন করব।” প্রসঙ্গত, এদিন ফের সিপিএমের জেলা সম্পাদক মনোনীত হয়েছেন বীরেশ্বর লাহিড়ী। তিনি জানান, এইমস ছাড়াও জেলার নানাবিধ সমস্যার সমাধানের দাবিতে লাগাতার আন্দোলন হবে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাকাকালীন প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি রায়গঞ্জে ওই হাসপাতাল গড়ার প্রক্রিয়া শুরু করান। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় ওই প্রকল্প-প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। কিন্তু প্রিয়বাবুর অসুস্থতার জেরে সেই কাজ থমকে যায়। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতার কারণে তা এগোয়নি। সাংসদ হওয়ার পর থেকে দীপা দেবী বিষয়টি নিয়ে সংসদের অন্দরে ও বাইরে এখনও সরব। রাজ্যে তৃণমূল-কংগ্রেস জোট সরকার গঠনের পরে ওই হাসপাতাল কল্যাণীতে সরিয়ে যাওয়ার আলোচনা শুরুর জেরে দীপা গোটা উত্তরবঙ্গ জুড়ে আন্দোলনে নেমেছেন। তাতে কিছুটা ‘বেকায়দায়’ পড়ে তৃণমূলের উত্তর দিনাজপুর জেলা কমিটিও রায়গঞ্জে ওই হাসপাতাল তৈরির জন্য মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে দাবি জানানোর কথা ঘোষণা করেছে।
সিপিএমের আন্দোলনের ঘোষণায় কংগ্রেস-তৃণমূল উভয় শিবিরেই কিছুটা ‘উদ্বেগ’ তৈরি হয়েছে। জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পবিত্র চন্দ বলেছেন, “ওই হাসপাতাল রায়গঞ্জে গড়ার বিষয়টি ভোটের প্রতিশ্রুতি নয়। এটা উত্তরবঙ্গের স্বার্থে করতেই হবে। সে জন্য আমরা গোড়া থেকে লড়ছি। এখন রাজ্যের বিরুদ্ধেও আন্দোলন করছি। সিপিএম রাজনীতি করতে আন্দোলনের কথা বলছে।” আর তৃণমূলের জেলা সভাপতি অসীম ঘোষ জানান, ওই হাসপাতাল রায়গঞ্জে গড়ার জন্য জমি অধিগ্রহণের জটিলতার সূত্রপাত বামেদের আমলেই হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, “এখন যা অবস্থা, বিধানসভায় জমি বিল পাশ না-হওয়া পর্যন্ত কিছু হওয়ার নয়। আমরা বরাবরই রায়গঞ্জে এইমসের দাবিতে লড়ছি। সিপিএম এখন রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে মরিয়া। সে জন্য এইমস নিয়ে আন্দোলনের কথা বলছে।” |