ধৃতদের নিয়ে বুধবারেই এক দফা তদন্ত চালানো হয়েছিল ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালে। অগ্নিকাণ্ডের তথ্যপ্রমাণ খুঁজতে ধৃত ছয় ডিরেক্টরকে নিয়ে বৃহস্পতিবার ফের সেখানে তল্লাশি চালালেন গোয়েন্দারা। এ দিনই কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে ফেরার অন্য তিন অভিযুক্ত রাহুল
তোদি, প্রীতি সুরেখা এবং আদিত্যবর্ধন অগ্রবালের বিরুদ্ধে ‘লুক আউট নোটিস’ জারি করা হল।
এ দিন বিকেল ৪টে নাগাদ দু’টি টাটা সুমোয় চাপিয়ে ধৃত আমরি-কর্তাদের ওই হাসপাতালে নিয়ে যান তদন্তকারীরা। ঘণ্টা দেড়েকের তল্লাশির পরে তাঁদের লালবাজারে নিয়ে যায় পুলিশ। যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) দময়ন্তী সেন জানান, কিছু নথি, কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, আমরির মেন বিল্ডিংয়ে শ্রবণকুমার তোদি এবং ডি এন অগ্রবালের অফিস রয়েছে। বোর্ড মিটিংয়ে যোগ দিতে সেখানেই যেতেন অন্য ডিরেক্টরেরা। ধৃতদের এ দিন ওই দু’টি অফিসেই নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের ওই ভবনের অন্য কয়েকটি অফিসেও হানাদেন গোয়েন্দারা।
লালবাজার সূত্রের খবর, বাজেয়াপ্ত নথির মধ্যে পরিচালনমণ্ডলীর বৈঠকে আলোচ্য এবং গৃহীত সিদ্ধান্তের খুঁটিনাটি (‘মিনিটস’) রয়েছে। সেগুলি পরীক্ষা করলেই স্পষ্ট হবে, বেসমেন্ট থেকে দাহ্য পদার্থ সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আমরি-কর্তাদের ভূমিকা কী ছিল। এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, “আমরির অগ্নি সুরক্ষার ক্ষেত্রে ডিরেক্টরদের কী ভূমিকা ছিল, ওই নথি ঘেঁটে তা জানার চেষ্টা করা হবে।”
আজ, শুক্রবার আলিপুর আদালতের মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে ফের তোলা হবে আমরির ধৃত কর্তা-কমর্ীর্দের। ওই হাসপাতালের অন্যতম ডিরেক্টর, এসএসকেএমে চিকিৎসাধীন রাধেশ্যাম অগ্রবালকে হাসপাতালের বাইরে নিয়ে গিয়ে জেরা করা যাবে বলে জানিয়ে দিয়েছে আদালতের নির্দেশে গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড। আদালতে পেশ করা রিপোর্টে এসএসকেএম হাসপাতালের পাঁচ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড জানিয়েছে, রাধেশ্যামকে বাইরে জেরা করা গেলেও তাঁর উপরে বেশি মানসিক বা শারীরিক চাপ দেওয়া ঠিক হবে না। রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাধেশ্যামের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। কিন্তু মানসিক ভাবে তিনি অসুস্থ। সব সময়েই উদ্বেগজনিত
সমস্যায় ভুগছেন।
আমরি-তদন্তের জন্য ঢাকুরিয়ায় ওই হাসপাতাল সিল করে দিয়েছে পুলিশ। এর ফলে ফাঁপরে পড়েছেন অগ্নিকাণ্ডের পরে সেখান থেকে স্থানান্তরিত কয়েক জন রোগী। ওই হাসপাতালে পড়ে থাকা প্রেসক্রিপশন, মেডিক্যাল রিপোর্ট-সহ চিকিৎসা সংক্রান্ত অন্যান্য তথ্য ফেরত পেতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁরা। বৃহস্পতিবার আলিপুর আদালতের মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট চৌধুরী হেফাজত করিমের এজলাসে ওই আর্জি জানানো হয়। সঞ্জয় গুপ্ত, স্বপ্না ঘোষ, শ্রীমন্তিনী মহান্তি, মোহনলাল কর্মকারদের মতো ন’জন রোগীর অভিযোগ, চিকিৎসা সংক্রান্ত নথি ফেরতের জন্য পুলিশকে অনুরোধ জানানো হলেও এখনও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
আইনজীবীর বক্তব্য শুনে বিচারক জানান, ওই সব নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে কি না, তা জানতে তিনি তদন্তকারী অফিসারদের বক্তব্য শুনবেন। বাজেয়াপ্ত না-হলে সেগুলি রয়েছে আমরি হাসপাতালেই। রোগীদের চিকিৎসার নথি ফেরতের ব্যবস্থা পুলিশ করবে বলে আশ্বাস দেন বিচারক। তিনি জানিয়ে দেন, প্রয়োজনে নথিগুলির প্রতিলিপি রেখে মূল নথিগুলি আবেদনকারীদের ফেরত দিতে পারে পুলিশ। তদন্তকারী এক অফিসার বলেন, “রোগীদের প্রযোজনীয় নথি তাঁদের দিতে কোনও আপত্তি নেই। তদন্তের প্রয়োজনে লাগবে, এমন নথি ছাড়া আর কিছু আমরা বাজেয়াপ্ত করব না। আদালত যা বলবে, তা-ই হবে।”
|
দেহ শনাক্ত করলেন বোন
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
আমরি-কাণ্ডে অশনাক্ত একটি দেহের পরিচয় মিলল। পুলিশ জানায়, ওই ব্যক্তির নাম সন্তোষ দাস। বাড়ি ত্রিপুরায়। বৃহস্পতিবার তাঁর পরিবারের লোকেরা এসএসকেএম হাসপাতালের মর্গে দেহটি শনাক্ত করেন। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) দময়ন্তী সেন জানান, হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে ওই দেহটি শনাক্ত হচ্ছিল না। পুলিশি সূত্রের খবর, ঘটনার পরে তাঁর পরিবারের কয়েক জন এলেও দেহটি শনাক্ত করতে পারেননি। এর পরে তাঁর বাড়ির অন্যদের ডাকা হয়। এ দিন ত্রিপুরা থেকে এসে দেহটি শনাক্ত করেন সন্তোষবাবুর বোন। এর ফলে আমরি-কাণ্ডে আর কোনও অশনাক্ত দেহ থাকল না বলে পুলিশের দাবি। |