জাঁকিয়ে শীতে হাসপাতাল ‘সুনসান’
ছরের অন্য সময় রোগীর চাপে হাসপাতালে পা ফেলাই দায়। অথচ শীতটা একটু জাঁকিয়ে পড়তেই গত কয়েকদিন ধরে করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা ব্যাপক কমে গিয়েছে। একই অবস্থা তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালেও। একের পর এক খালি বিছানা। আউটডোরের অবস্থাও তাই। দূরদুরান্ত থেকে আসা রোগীদের সংখ্যা অর্ধেকেরও বেশি কমে গিয়েছে।
করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে গত নভেম্বরে প্রতিদিন গড়ে রোগী ভর্তি ছিলেন ৫০ জনেরও বেশি। গত ১৩ ডিসেম্বরও ৪৪ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। এর পরের দিন থেকেই তাপমাত্রার মতোই রোগীর সংখ্যাও হু হু করে কমে গিয়েছে। ১৪ ডিসেম্বর রোগী ভর্তি ছিলেন মাত্র ২৯ জন। ১৭ ডিসেম্বর সেই সংখ্যাটা দাঁড়ায় মাত্র ২৩। ২০ ডিসেম্বর রোগী ছিলেন মাত্র ২৬ জন।
কিন্তু কেন এমন অবস্থা? জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অমিত হালদার বলেন, “শীতকালে ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া জনিত রোগের প্রকোপ কম থাকে। সেই সঙ্গে সাপে কাটা রোগীও কম থাকে। তাই রোগীর সংখ্যা এই সময় কমে যাওয়াটা আশ্চর্যের নয়।” সেই সঙ্গে রয়েছে যানবাহনের সমস্যাও। সাধারণত এই এলাকায় বিকেলের পর কৃষ্ণনগর ছাড়া অন্য কোনও দিকে যাওয়ার বাস পাওয়া যায় না। কেবল কৃষ্ণনগর ছাড়া অন্য কোনও দিক থেকে বাস আসেও না করিমপুরে। ফলে তখন সাধারণ মানুষের ভরসা লছিমন, যন্ত্রচালিত অন্য ভ্যান। কিন্তু এই ঠান্ডায় সে সবও সন্ধ্যার পরে কমে যাচ্ছে রাতারাতি। ফলে গ্রাম থেকে জেলা সদর বা করিমপুরে আসার সমস্যা হচ্ছে। করিমপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কংগ্রেসের সুরপতি প্রামাণিক বলেন, “সন্ধ্যার পর শিকারপুর বা হোগলবেড়িয়া থেকে করিমপুর যাওয়ার কোনও বাস থাকে না। রাতে বিরেতে মানুষের ভরসা ভ্যানই। কিন্তু শীতকালে বাড়িতে রোগী থাকলেও তাঁকে সেই ভ্যানে করে করিমপুর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া খুবই ঝুঁকির। তাই এই সময় লোকে অসুস্থ হয়ে পড়লে চেষ্টা করা হয় স্থানীয় ভাবেই নিরাময়ের চেষ্টা করতে।”
বুধবার করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালের পুরুষ বিভাগে ঢুকে সার দিয়ে পড়ে রয়েছে খালি শয্যা। ভর্তি রয়েছেন মাত্র ৫ জন। বুধবার শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন রঘুনাথপুর গ্রামের প্রৌঢ় ভিকুরঞ্জন শীল। তাঁর কথায়, ‘‘এ তো মনে হচ্ছে দ্বীপান্তরে এলাম। অন্য রোগীরা গেল কোথায়?’’ ভিকুবাবুর ছেলে সুজিত শীল বলেন, ‘‘বাবার সমস্যাটা শুরু হয়েছে কাল রাত থেকে। রাতেই এলাকার এক গ্রামীণ চিকিৎসককে দেখিয়েছি। রাতে এই ঠান্ডায় প্রায় ১৪ কিমি পথ উজিয়ে হাসপাতালে আসাটাও একটা বিরাট সমস্যা। তাই ভোরে একটা গাড়ি ভাড়া করে হাসপাতালে নিয়ে এলাম।’’ বছর দেড়েকের ছেলেকে নিয়ে মঙ্গলবার থেকে হাসপাতালে ভর্তি নাটনা গ্রামের তাপসী বন্দোপাধ্যায়। তাপসীদেবী বলেন, ‘‘ছেলের ডায়েরিয়া হয়েছে এই শীতে হাসপাতালে থাকা খুবই কঠিন। সারা রাত ঘুমোতে পারিনি। কাল ছুটি দিয়ে দেবে। বাড়ি যেতে পারলে বাঁচি।’’
তেহট্টের মহকুমাশাসক অচিন্ত্যকুমার মণ্ডল বলেন, “প্রত্যন্ত গ্রামগুলো থেকে শীতকালে রাতবিরেতে করিমপুরে আসা-যাওয়ার সমস্যা রয়েই গিয়েছে। তাই স্থানীয় স্তরেই রোগীকে দেখানোর একটা প্রবণতা রয়েছে। কিন্তু সেটা খুবই বিপজ্জনক।” করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালের সুপার বিধুভূষণ মাহাতো বলেন, ‘‘প্রতি বছরই এই সময়ে রোগী কম থাকে। রোগের প্রকোপও কম থাকে। মাতৃযান ছাড়া অন্য ক্ষেত্রে রোগীদের নিজের দায়িত্ভেই হাসপাতালে আসতে হয়। তাই শীতকালে সেই সমস্যটাও থেকে যায়।’’ বুধবার আউটডোরে ছিলেন করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসক সুদীপা মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘পুরনো নতুন সব মিলিয়ে এদিন প্রায় ১৫০ জন রোগী এসেছিলেন আউটডোরে। ঠান্ডার কারণেই এই সংখ্যাটা কমে গিয়েছে বলে আমার অনুমান। আসলে অনেক দূর থেকে এখানে রোগীরা আসেন। অনেক পুরনো রোগী আগে যেখানে সপ্তাহে দুদিন বা তিনদিন করে আসতেন, এখন তারা ঠান্ডার কারণে কম আসছেন।’’
তেহট্টের অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সঞ্জয় মণ্ডল বলেন, ‘‘শুধু তেহট্ট মহকুমা বলেই নয়, শীতকালে সব হাসপাতালেই রোগীর সংখ্যা অনেক কমে যায়, এইসময় আসলে মানুষের অসুখ বিসুখও তুলনামূলকভাবে কম হয়। তাছাড়া সামান্য সর্দি কাশির জন্য দূরদুরান্ত থেকে অনেকেই এই ঠান্ডায় হাসপাতালের আউটডোরে আসেন না।’’ সঞ্জয়বাবু বলেন, ‘‘এইসময় মরসুমি সব্জি ও ফল খাওয়া ভাল। তবে শীত বলে জল কিন্তু কম খেলে চলবে না। পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খেতে হবে। না হলে সমস্যা হতে পারে। কোনও ভাবে যাতে ঠান্ডা না লাগে সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকা দরকার।’’



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.