অনির্বাণ রায় • জলপাইগুড়ি |
বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থার মাশুল দিতে হচ্ছে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের। স্নাতক স্তরের ফল প্রকাশের পরে তিন মাসের বেশি সময় কেটে গেলেও পুর্নমূল্যায়নের পরে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ না হওয়ায় উচ্চশিক্ষার সুযোগ এক বছর পিছিয়ে গিয়েছে জলপাইগুড়ি আনন্দচন্দ্র কলেজের (এসি কলেজের) ১৮০ জন ছাত্রছাত্রীর। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের গোড়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্নাতক স্তরের চূড়ান্ত বর্ষের ফল প্রকাশ করে। অত্যন্ত কম নম্বর পেয়ে যারা স্নাতক হয়েছিলেন বা কয়েক নম্বরের জন্য যারা স্নাতক পরীক্ষা পাশ করতে পারেননি, তাঁরা সকলেই পুর্নমূল্যায়ন করার আবেদন করেছিলেন। সাধারণত এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে পুর্নমূল্যায়ন করে চূড়ান্ত রেজাল্ট প্রকাশ করা হলেও চলতি বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ডামাডোলের কারণে তা হয়ে হয়ে ওঠেনি। অথচ উচ্চ শিক্ষার বিভিন্ন শাখায় অক্টোবর-ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ভর্তির প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যায়। তার ফলে উচ্চশিক্ষার সুযোগ নিতে হলে পুর্নমূল্যায়নের আবেদন করা ছাত্রছাত্রীদের আরও একবছর অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।
জলপাইগুড়ি এসি কলেজের তৃতীয় বর্ষের ১৮০ জন ছাত্রছাত্রী পুর্নমূল্যায়নের আবেদন করেছিলেন। এখনও তারা চূড়ান্ত রেজাল্ট হাতে পাননি। তৃতীয় বর্ষের রেজাল্ট ছাড়া স্নাতকোত্তর স্তরে ভর্তি হওয়ার আবেদন করা সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতিতে উচ্চশিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলেই ধরে নিয়েছে ছাত্রছাত্রীরা। একই সমস্যা তৈরি হয়েছে কলেজের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষেও। পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে ২০ জন পড়ুয়া পুর্নমূল্যায়নের আবেদন করেছিলেন। পরবর্তী শিক্ষাবর্ষ শুরুর চার মাস পেরোলেও তাদের চূড়ান্ত রেজাল্ট প্রকাশ না হওয়ায় তাঁরা কোন বর্ষে পরীক্ষা দেবেন তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষও বিষয়টি নিয়ে অন্ধকারে। সূত্রের খবর, স্নাতক স্তরের চূড়ান্ত বর্ষের অর্থাৎ তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষার পুর্নমূল্যায়ন প্রক্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচর্যের সন্মতি ছাড়া বা তাঁর সঙ্গে আলোচনা ছাড়া সম্ভব নয়। গত দু’মাস ধরে উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে না দেওয়াতেই প্রক্রিয়াটি বিলম্বিত হয়ে রয়েছে বলে অভিযোগ। যার মাশুল দিতে হচ্ছে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের। কলেজের অধক্ষ্য সুভাষ চন্দ বলেন, “প্রতিনিয়ত আমাদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে। অথচ বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের। কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে বারবার যোগাযোগ করা হয়। কোনও কাজ হচ্ছে না।”
কলেজের এক প্রবীণ শিক্ষকের কথায়, “বার বার বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছি। দেখেছি কর্মীরা সকলেই আন্দোলনে ব্যস্ত। কাজ করার কেউ নেই। উপাচার্যও ঢুকতে পারছেন না। জরুরি নির্দেশও তাই জারি করা সম্ভব হয়নি।” বিশ্ববিদ্যালয়ের তাজ বন্ধ থাকায় প্রশাসনিক স্তরেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। স্নাতকোত্তর স্তরের পাঠক্রমে ‘গ্রুপ ডিসকাশন’ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জলপাইগুড়ির এসি কলেজে স্নাতকোত্তর বাংলা পাঠক্রম রয়েছে। চলতি মাসের প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে নির্দেশ পাঠিয়ে কলেজকে জানানো হয় ৯ এবং ১০ ডিসেম্বর স্নাতকোত্তর স্তরের প্রথম সেমিস্টারের গ্রুপ ডিসকাশন হবে। অথচ প্রথম সেমিস্টারের ভর্তির শেষ তারিখ বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রেই ১২ ডিসেম্বর ধার্য করা হয়। অধক্ষ্য বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের এই নির্দেশ পেয়ে প্রথমে চমকে গিয়েছিলাম। পাঠক্রমে ভর্তির আগেই প্রথম পরীক্ষার দিন ধার্য করা হয়েছিল। এই নোটিশ পাওয়ার পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে যোগাযোগ করতে চাইলেও সেদিন কোনও আন্দোলনের জন্য শীর্ষ কর্তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে পারেননি বলে জানানো হয়।” কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, ভর্তির আগেই পরীক্ষা শুরুর মতো নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরে সেই পরীক্ষা স্থগিতেরও কোনও নির্দেশ জানানো হয়নি। পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে মৌখিক ভাবে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। |