|
|
|
|
বন্ধে হয়রানি এড়াতে মাধ্যমিক পিছোলেন মমতা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
ছাত্রছাত্রীদের হয়রানি এড়াতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে মাধ্যমিক পরীক্ষার দিন শেষপর্যন্ত পিছিয়ে দিল রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বৃহস্পতিবার মহাকরণে জানিয়েছেন, আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি ধর্মঘটের দিনের বদলে মাধ্যমিকের ইতিহাস পরীক্ষা হবে পর দিন, ২৯ ফেব্রুয়ারি। সে দিন মাধ্যমিকের অন্য কোনও পরীক্ষা নেই। পাশাপাশিই মমতা জানিয়েছেন, বাম, কংগ্রেস, বিজেপি মিলিয়ে মোট ১১টি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের ডাকা ওই ধর্মঘটকে তিনি সমর্থন করেন না। কিন্তু লক্ষ লক্ষ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের কথা ভেবেই ‘নৈতিক কারণে’ রাজ্য সরকার এক দিন পরীক্ষা পিছিয়ে দিল বলে মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
ঘটনাচক্রে, ওই ধর্মঘটের জেরে আইসিএসই এবং আইএসসি পরীক্ষার দিনও বদলানো হয়েছে। বুধবারই আইসিএসই বোর্ড ঘোষণা করেছে, ওই দিনের পরীক্ষা ২৭ ফেব্রুয়ারি নেওয়া হবে।
বস্তুত, মাধ্যমিকের ইতিহাস পরীক্ষা এক দিন পিছিয়ে দিয়ে লক্ষ লক্ষ পরীক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের কাছে ‘বার্তা’ পাঠাতে চেয়েছেন, পড়ুয়া তথা সাধারণ মানুষের হয়রানির কথা মাথায় রাখছে তাঁর সরকার। যে কারণে নীতিগত ভাবে বন্ধের প্রবল বিরোধী হয়েও তিনি বন্ধের জন্য মাধ্যমিকের সূচি পরিবর্তন করলেন। প্রসঙ্গত, পরীক্ষা পিছনোর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বার্তা পাঠিয়েছেন সিপিআই সাংসদ এবং এআইটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক গুরুদাস দাশগুপ্তের কাছে। কারণ, গুরুদাসবাবুই এর আগে সরাসরি মমতাকে মাধ্যমিক পরীক্ষা এক দিন পিছিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। মমতা তখন বলেছিলেন, তিনি বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা দফতরের সঙ্গে আলোচনা করবেন। ঘটনাচক্রে, এ দিনই সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটুর রাজ্য সভাপতি শ্যামল চক্রবর্তী জানিয়েছিলেন, আগামী ৯ জানুয়ারি বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ধর্মঘটের পক্ষে ‘জনমত সংগঠিত’ করতে কলকাতায় আসছেন। তখন তাঁরা মমতাকে পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার জন্য আবেদন জানাবেন। মমতা অবশ্য ততদিন অপেক্ষা করেননি। এ দিনই শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে আলোচনা সপেক্ষে তিনি ওই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন।
গুরুদাসবাবু প্রত্যাশিত ভাবেই মুখ্যমন্ত্রীকে ‘ধন্যবাদ’ জানিয়েছেন। দিল্লি থেকেই মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফ্যাক্স পাঠিয়েছেন। আইসিএসই তাদের সর্বভারতীয় পরীক্ষার দিন পরিবর্তনের কথা ঘোষণা করেছিল। রাজ্য সরকারও সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ায় গুরুদাসবাবু বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রী ভাল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ধর্মঘট না পরীক্ষা, এ নিয়ে অযথা বিতর্ক হচ্ছিল!”
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন মহাকরণে বলেন, “আমরা ২৮ তারিখের বনধ্কে সমর্থন করি না। আমরা ওই দিন কাজ করব। কিন্তু রাজ্যের হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীর কথা ভেবে এবং তাঁদের অভিভাবকেরা যাতে অনিশ্চয়তার মধ্যে না-থাকেন, তাই মাধ্যমিক পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি ব্রাত্যকে (শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু) ফোন করেছিলাম। বলেছি, পরীক্ষা এক দিন পিছিয়ে দিতে। কারণ, বনধ্ অঘটন ঘটতে পারে। আমরা চাই না, ছাত্রছাত্রীদের ক্ষতি হোক। অভিভাবকদের কোনও দুশ্চিন্তার মধ্যেও রাখতে চাই না।”
ধর্মঘট-অবরোধের বিরুদ্ধে তাঁদের দলীয় অবস্থান ব্যাখ্যা করে মুখ্যমন্ত্রী পরে বলেন, “এই ধরনের ধর্মঘটে কোনও লাভ হয় না। গত তিন বছরে তাই আমরা এই ধরনের কোনও ধর্মঘট করিনি। আমাদের অনেক কর্মীরই মৃত্যু হয়েছে। নেতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তা-ও আমরা বন্ধ করিনি। এমনকী, অবরোধের রাজনীতি করাও ছেড়ে দিয়েছি। তা-ও ক্ষমতায় আসার অন্তত দু’বছর আগে থেকেই। ওদের কোনও বিষয় নিয়ে প্রতিবাদ জানাতে হলে সভা-মিছিল করতে পারত। বা লোকসভায় বলতে পারত। কিন্তু ওরা এই ধরনের ধর্মঘট ডেকে দলকে জিইয়ে রাখতে চায়!” |
|
|
|
|
|