|
|
|
|
পাঠ্যবই-বিতর্ক |
হাতে সময় এক বছর, তবু অনড় প্রকাশকরা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ হল, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীকে নিখরচায় বই দিতে হবে। পাশাপাশি পাঠ্যক্রম কমিটির সুপারিশ, ওই পর্যন্ত সব পাঠ্যবইয়ের বিষয়বস্তুও তৈরি করে দিক মধ্যশিক্ষা পর্ষদ, যাতে রাজ্য জুড়ে যে কোনও একটি শ্রেণির সব পড়ুয়ার পাঠ্যবই একই হয়। তবে ২০১৩-র আগে যে রাজ্য সরকার এই ব্যবস্থায় যাচ্ছে না, বৃহস্পতিবার প্রকাশকদের বিভিন্ন সংগঠনকে ডেকে সে কথা জানিয়ে দিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
শিক্ষামন্ত্রীর কথায় প্রকাশকদের কয়েকটি সংগঠন আশ্বস্ত হলেও ‘জয়েন্ট ফোরাম ফর বুক ট্রেডার্স অ্যান্ড অ্যালায়েড ইন্ডাস্ট্রিজ’ অবশ্য ২৬ ডিসেম্বর থেকে ধর্মঘটের সিদ্ধান্তে অনড়। তাদের দাবি, এই সিদ্ধান্তের জেরে পাঠ্যবই প্রকাশনা শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে, বিপন্ন হবেন প্রায় ১৩ লক্ষ মানুষ। পাঠ্যপুস্তক সংক্রান্ত সাম্প্রতিক বিতর্ক নিয়ে এ দিন প্রকাশক সংগঠনগুলিকে বৈঠকে ডেকেছিলেন ব্রাত্যবাবু। কিন্তু জয়েন্ট ফোরাম তাতে যোগ দেয়নি। কেন?
ফোরামের আহ্বায়ক অশোক রায় বলেন, “বিকেল সাড়ে তিনটেয় ফ্যাক্স পাঠিয়ে জানানো হয়, মন্ত্রী চারটেয় বৈঠকে ডেকেছেন। ফোরাম যে হেতু অনেক সংগঠনের যৌথ মঞ্চ, তাই এত অল্প সময়ে সকলের মতামত নেওয়ার উপায় ছিল না। তাই বৈঠকে যাওয়া সম্ভব হয়নি। রাজ্য সরকারকে সে কথা আমরা জানিয়েও দিয়েছি।”
মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফে এ দিন জানানো হয়েছে, ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ৩৩টি বই পড়ানো হয়। এর ২৫টি পাঠ্যবই, যার ১১টি ছাপে পর্ষদ। বাকিগুলো ছাপে বেসরকারি প্রকাশকেরা। পর্ষদের সচিব শান্তিপ্রসাদ সিংহের কথায়, “২০১২-তে এই নিয়ম মেনেই বই ছাপা হবে। ২০১৩ থেকে পর্ষদেরই পাঠ্যবইগুলো ছাপার কথা।” আর শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য, “২০১২-য় তো পর্ষদের পক্ষে সব বই ছাপা সম্ভব নয়। তাই আগামী শিক্ষাবর্ষে সরকারের পক্ষ থেকে বই দেওয়া যাবে না। ২০১৩-য় কী হবে, তা আলোচনা করে স্থির করা হবে। পরিবর্তন যা হওয়ার, তা ২০১৩ থেকে হবে।” স্কুলশিক্ষা সচিব বিক্রম সেন এ দিন জানান, ২০১২-র জানুয়ারিতে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হচ্ছে। সেখানে নতুন নিয়ম হচ্ছে না। ২০১৩-য় ব্যবস্থাটা কেমন হবে, তা নিয়ে ফেব্রুয়ারিতে বৈঠক ডাকা হয়েছে। সচিব বলেন, “শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী ২০০৫-এর ন্যাশনাল কারিকুলাম ফ্রেমওয়ার্ক মেনে পাঠ্যক্রম তৈরি করতে হবে। স্কুলশিক্ষা দফতরের পাঠ্যক্রম কমিটি সেই সুপারিশ অনুযায়ী পাঠ্যক্রম তৈরি করছে। তার ভিত্তিতেই পাঠ্যবইয়ের বিষয়বস্তু তৈরি হবে।” সচিবের বক্তব্য: বিভিন্ন প্রকাশক বিভিন্ন লেখককে দিয়ে বই লেখান। তাতে পাঠ্যবিষয়ের অভিন্ন মান বজায় থাকে না বলে কমিটি মনে করছে। তাই সরকার পাঠ্যবইয়ের বিষয়বস্তু তৈরি করে দেবে। কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের নির্দেশ, পড়ুয়াদের টাকা না-দিয়ে তাদের বই দিতে হবে। কিন্তু কী ভাবে, তা চূড়ান্ত হয়নি। “আলোচনার জন্য পুরো একটা বছর থাকা সত্ত্বেও প্রকাশকেরা ধর্মঘট ডাকছেন কেন, তা বোঝা যাচ্ছে না।” মন্তব্য করেন সচিব।
প্রকাশক সংগঠনগুলোর বক্তব্য, এই সিদ্ধান্ত মানা হলে বই নির্মাণ, প্রকাশনা ইত্যাদি কাজে জড়িত লক্ষ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। উপরন্তু সরকার পাঠ্যবইয়ের বিষয়বস্তু তৈরি করে ছাপার জন্য দরপত্র চাইলে দু’-একটা বড় সংস্থা লাভবান হতে পারে। তাই ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসা সম্ভব নয়। |
|
|
|
|
|