দল থেকে বহিষ্কৃত হলেন তৃণমূলের ইন্দাস ব্লক সভাপতি রবিউল হোসেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি দলেরই স্থানীয় বিধায়কের বাড়ি থেকে তাঁর ত্রাণসামগ্রী ‘লুঠ’ করেছেন। ইন্দাসের তৃণমূল বিধায়ক গুরুপদ মেটে বৃহস্পতিবার এ খবর জানিয়ে দাবি করেন, “আমাদের দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে ইন্দাস ব্লক সভাপতিকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দলের সর্বস্তরের কর্মীদের তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক না রাখার জন্য বলা হয়েছে।” যদিও ‘লুঠ’-এর অভিযোগ মানতে চাননি রবিউল হোসেন। বহিষ্কারের খবর এখনও তাঁকে জানানো হয়নি বলে তাঁর দাবি।
তৃণমূল সূত্রের খবর, বেশ কিছু দিন ধরেই ইন্দাসে দলের দুই নেতা রবিউল হোসেন ও গৌতম বেরার মধ্যে ‘দ্বন্দ্ব’ প্রকাশ্যে এসেছে। পাশাপাশি বিধায়কের সঙ্গে ব্লক তৃণমূল সভাপতির সম্পর্ক যে বিশেষ মধুর নয়, তা দলের নিচুতলার কর্মীরাও জানেন। সেই ‘তিক্ততা’ আরও বাড়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। বিধায়ক কোটার জন্য বরাদ্দ ৬০০টি কম্বল গুরুপদবাবুর বাড়িতে মজুত ছিল। বিধায়কের অভিযোগ, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ রবিউল দলবল নিয়ে তাঁর বাড়িতে চড়াও হয়ে কম্বলগুলি ‘লুঠ’ করেন।
গুরুপদবাবু এ দিন অভিযোগ করেন, “ঘটনার সময় আমি বাড়িতে ছিলাম না। সেই সময় ব্লক সভাপতি তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গোদের নিয়ে বাড়িতে চড়াও হন। আমার ৮৫ বছরের বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও সাত বছরের অসুস্থ ছেলেকে মারধর করে আর গালিগালাজ করে এলাকার দুঃস্থদের বিতরণের জন্য আমার কোটার ৬০০টি কম্বল লুঠ করে পালিয়ে যান রবিউলরা।”
বিধায়কের দাবি, তিনি গোটা ঘটনা দলের বাঁকুড়া জেলা সভাপতি তথা আবাসনমন্ত্রী শ্যাম মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়, রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সিকে জানিয়েছিলেন। গুরুপদবাবু বলেন, “এ দিন বিধায়ক দলের বৈঠকে দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীকে বিষয়টি জানানোর পরে তিনি রবিউলকে দল থেকে বহিষ্কারের কথা ঘোষণা করেন।” শ্যামবাবু অবশ্য বলেন, “আমি ওই বৈঠকে ছিলাম না। তবে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এই সিদ্ধান্ত নিতেই পারেন।” জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি অরূপ চক্রবর্তীর মন্তব্য, “দলের শৃঙ্খলারক্ষার জন্য এ রকম কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।”
কম্বল লুঠের অভিযোগ অবশ্য পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছেন ব্লক তৃণমূল সভাপতি। রবিউলের দাবি, “বিধায়ক কোটার ত্রাণসামগ্রী বাড়িতে কেন থাকবে, এই প্রশ্ন তুলে দলেরই কিছু কর্মী গুরুপদবাবুর বাড়িতে গিয়েছিলেন। তাঁর বাড়ির লোকেরাই কম্বলগুলি আমাদের কর্মীদের হাতে তুলে দেন। আমি বিধায়কের বাড়িতে যাইইনি! মারধর বা খারাপ ব্যবহার করার অভিযোগও সম্পূর্ণ মিথ্যা।” দলেরই গুদামে ওই কম্বলগুলি রাখা রয়েছে বলে তিনি জানান।
ঘটনাচক্রে বুধবারই দলের ব্লক কমিটির বৈঠক ডেকে ব্লকের অন্যতম দুই নেতা গৌতম বেরা ও নিত্যানন্দ মিশ্রকে বহিষ্কারের প্রস্তাব জেলা নেতৃত্বের কাছে পাঠিয়েছিলেন রবিউল। যদিও এই ভাবে ব্লক কমিটি বহিষ্কারের প্রস্তাব নিতে পারে না বলে তা খারিজ করে দেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই খোদ ব্লক সভাপতিকে বহিষ্কারের ঘটনায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আরও প্রকাশ্যে এল বলে মনে করা হচ্ছে।
তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে ইন্দাস ব্লক সভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন রবিউল। তাঁর পরে এখন ব্লক সভাপতি কে হবেন, তা নিয়ে তৃণমূলের অভ্যন্তরে এখন জোর জল্পনা চলছে। |