গর্ভেই মারা গিয়েছিল তাঁর সন্তান। দিন কয়েকের মধ্যেই মারা গিয়েছিলেন দাদু-ও। ‘না-দেখা’ সেই সন্তান আর দাদুকে খুঁজতে বাড়ির চেনা চৌহদ্দি ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন তিনি। নতুন নয়, ভিটেমাটি ছেড়ে হুটহাট এমনই বেরিয়ে পড়া তাঁর ‘স্বভাব’। ফিরেও আসেন। এ বার যেমন, মধ্য-কুড়ির সেই তরুণীর খোঁজ মিলল হাসপাতালের রোয়াকে, শীতের এক রাতে।
খবরের কাগজে স্ত্রীর ছবি দেখে বসিরহাট মহকুমা হাসপাতাল থেকে তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছেন স্বামী।
শনিবার সকালে স্বরূপনগরের দত্তপাড়া গ্রামের বাড়ি থেকে ‘হারিয়ে’ যাওয়া কবিতা মণ্ডলকে ফিরে পেয়ে কেঁদে ফেলেন স্বামী অনুকূল। বলছেন, “বাবা-মা মরা মেয়েটা বিয়ের সময়েও বেশ সুস্থ ছিল। কিন্তু ওর দাদু মারা গেলেন। তারপর পেটের বাচ্চাটাও। এরপর থেকেই ও কেমন যেন হয়ে গেল। মাঝে মাঝে ভুল বকত। দিন কয়েক আগে কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে। তারপরে বহু খুঁজেও ওকে পাইনি।” আনন্দবাজার পত্রিকায় কবিতার ছবি-সহ খবর দেখেই স্ত্রীকে চিনতে পারেন অনুকূল। মঙ্গলবার ভাই তারক আর বন্ধু অরুণকে নিয়ে ছুটে এসেছিলেন হাসপাতালে।
মেছোভেড়িতে ছোটখাট একটা কাজ করেন অনুকূল। সংসার চলে কোনও মতে। বছর খানেক আগে তাঁর বিয়ে হয়েছিল কবিতার সঙ্গে। বিয়ের পর পরই হঠাৎই কবিতার দাদুর মৃত্যু হয়। তাতে মানসিক ভাবে খুবই আঘাত পেয়েছিলেন স্ত্রী, জানালেন অনুকূল। পেটের সন্তানও মারা যায় অকালে। কিছু দিন আগেই বাদুড়িয়ার পুলিশ ওই কবিতাকে উদ্ধার করে বাড়ি ফিরিয়ে দিয়েছিল বলে জানান অনুকূল।
বলেন, “কিন্তু সংসারে এত টানাটানি। ভাল করে চিকিৎসা করাতে পারি না। যখন ভাল থাকে, তখন বাড়ির সকলের কত যত্ন করে। কিন্তু তারপরেই..।”
দিন কয়েক আগে এক শীত-রাতে বসিরহাটের দক্ষিণপাড়ায় একটি বন্ধ দোকানের সামনে বসে ছিলেন কবিতা। স্থানীয় বাসিন্দারা বিবাহিতা ওই তরুণীকে বসে থাকতে দেখেন। কথাবার্তা কিছুটা অসংলগ্ন। শীতে ঠকঠক করে কাঁপছিলেন। গ্রামের মানুষ খবর দেন পুলিশে। পুলিশই তাকে উদ্যোগী হয়ে তাঁকে সে দিন ভর্তি করে দিয়েছিল বসিরহাট মহকুমা হাসপাতালে। বাড়ির ঠিকানা বলতে পারেননি তিনি। শুধু নামটুকুই বলতে পেরেছিলেন।
মঙ্গলবার হাসপাতালে বসে ফ্যালফ্যাল করে স্বামীর দিকে খানিক তাকিয়ে থেকে কবিতা আপন মনেই বলেন, “দাদু চলে গেল, ছেলেটাও হারিয়ে গেল। ওদের খুঁজতেই তো বেরিয়ে ছিলাম। কোথায় গেল বল তো!” |