মগরাহাট-কাণ্ড
লাঠি চলাতেই গণ্ডগোল, দাবি অভিযুক্তদের
হুকিং কাটতে গিয়ে পুলিশ লাঠি না চালালে অত বড় ঘটনা ঘটত না বলে মগরাহাট-কাণ্ডের জনশুনানিতে দাবি করলেন পুলিশকে আক্রমণে অভিযুক্ত দু’জন।
বৃহস্পতিবার ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের ওই শুনানিতে হোসেন শেখ এবং আবু খয়ের মোল্লা নামে দুই অভিযুক্ত হাজির হন। তবে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়নি। শুধু তাঁরা নন, দক্ষিণ ২৪ পরগনা পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের সামনে জনশুনানিতে সব গ্রামবাসীই কার্যত একই দাবি করেন।
গত ১ নভেম্বর নৈনান গ্রামে হুকিং কাটতে গিয়ে ক্ষিপ্ত গ্রামবাসীর সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে পুলিশ। তাদের ছোড়া গুলিতে রেজিনা খাতুন নামে এক স্কুলছাত্রী ও সায়েরা বিবি নামে এক বধূর মৃত্যু হয়। জনতার ছোড়া ইটে গুরুতর জখম হন এক হোমগার্ড। গত রবিবার তিনি মারা গিয়েছেন। সিআইডি তদন্ত শুরু করেছে। পাশাপাশি চলছে বিচারবিভাগীয় তদন্তও।
কী পরিস্থিতিতে পুলিশ গুলি চালিয়েছিল তা জানতে মঙ্গলবার থেকেই ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের শুনানি শুরু হয়েছে। প্রথম দু’দিন ঘটনার সময়ে উপস্থিত পুলিশকর্মীদের শুনানি হয়। অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) ওয়াই রত্নাকর রাও এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) কঙ্করপ্রসাদ বারুইয়ের নেতৃত্বে পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকেরা এ দিন মগরাহাট-২ ব্লক অফিসে নৈনান ও মল্লিকপাড়া গ্রামের ৩২ জনের কথা শোনেন।
অভিযুক্ত আবু খয়ের ও হোসেন শেখ (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র
তিন মৃতের পরিবারের লোকজনও যেমন এসেছিলেন, এফআইআরে নাম থাকা সাত জনের অন্যতম হোসেন শেখও হাজির ছিলেন। ছিলেন আবু খয়ের, যাঁর নাম মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লিখিত ভাবে জানিয়েছিলেন ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়। যদিও কাউকেই এখনও গ্রেফতার করা হয়নি। জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, “সিআইডি তদন্ত করছে। কাজেই গ্রেফতার বা তদন্তের সব দায় তাদের উপরেই বর্তায়।” সিআইডি-র ডিআইজি (অপারেশনস) কে জয়রামনের আশ্বাস, “ঠিক সময়েই অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হবে।”
দুই অভিযুক্তই অবশ্য শুনানিতে এসে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। হোসেন শেখ বলেন, “সকাল থেকেই গ্রামের বাইরে ছিলাম। বিকেল পৌনে ৪টে নাগাদ ফিরে দেখি, গ্রামবাসীরা পুলিশ এবং বিদ্যুৎকর্মীদের আটকে রেখেছে। হঠাৎই পুলিশের দু’টি গাড়ি আসে। পুলিশকর্মীরা নেমে লাঠি চালাতে থাকে। আমার পায়ে লাঠি লাগে। গ্রামবাসীরা পুলিশকে লক্ষ করে ইট ছোড়ে। পুলিশ গুলি চালায়।” তাঁর দাবি, “পুলিশ ও ভাবে লাঠি না চালালে কোনও গোলমালই হত না। আমি কিছুই করিনি। অথচ পুলিশ এফআইআরে নাম ঢুকিয়েছে।” আবু খয়ের জানান, তিনি সে দিন মগরাহাট থেকে দুপুর আড়াইটে নাগাদ গ্রামে এসে দেখেন গোলমাল হচ্ছে। তাঁর কথায়, “পুলিশ লাঠি চালাচ্ছিল। অনেকে ইট ছুড়ছিল। গোলমালের জন্য দু’পক্ষই দায়ী।”
একই বক্তব্য বাকিদেরও। নৈনানের ফরজাহান মোল্লা শুনানিতে বলেন, “আমরা কয়েক জন প্রথম থেকেই সকলকে বলছিলাম, কাউকে আটক করার দরকার নেই। শান্তিপূর্ণ পথেই আন্দোলন করব। ওরা কথা শোনেনি। কিন্তু পুলিশ লাঠি না চালালে এত খারাপ কিছু ঘটত না।” ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, কলেজছাত্র সাবির মোল্লার কথায়, “কলেজ থেকে ফিরেই দেখি লাঠি চলছে। পুলিশের গাড়ির কাছে গিয়ে পড়ায় আমাকেও লাঠিপেটা করে। আমি পাশের বাঁশবাগানে গিয়ে লুকোই। তার পরেই শুনি পরপর গুলির আওয়াজ। রেজিনা ও সায়েরা বিবি একটি নির্মীয়মাণ বাড়ির উপরে দাঁড়িয়েছিলেন। ওঁদের গুলি লাগে। জখম দু’জনকে গ্রামবাসীরা মাঠে নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু প্রচুর গুলি চলতে থাকায় ফেলে পালাতে বাধ্য হন।”
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, যে মাঠে গোলমাল বাধে তার তিন দিক ঘেরা ছিল এবং উন্মত্ত জনতাকে হটিয়ে বেরনোর পথ করতেই গুলি চালাতে হয় বলে শুনানিতে পুলিশকর্মীরা দাবি করেছেন। অতিরিক্ত জেলাশাসক বলেন, “সকলের সঙ্গেই আলাদা ভাবে কথা বলেছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট পাঠিয়ে দেওয়া হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.