বাদশার দুই বিবির বিবাদের বিষেই কি মদে মৃত্যু
বিষমদ-কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত খোঁড়া বাদশাকে ঘটনার ন’দিন পরেও গ্রেফতার করতে পারল না সিআইডি। ধরা যায়নি তার দুই স্ত্রী, এক ছেলে এবং দুই সঙ্গীকেও। এর ফলে বিষমদ-কাণ্ডের তদন্তে বিশেষ অগ্রগতি হয়নি বলেই জানিয়েছেন পুলিশকর্তারা।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার বিধানসভার বাইরে জানান, আগামী ৩০ ডিসেম্বর তিনি বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে সচেতনতা মিছিল করবেন। মগরাহাটে বিষমদ খেয়ে ১৭২ জনের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডি-কে। এর মধ্যে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ আনেন, সিপিএম-ই চোলাই মদে বিষ মিশিয়েছে। পার্থবাবুর ওই মন্তব্যকে ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়। বিরোধীদের সমালোচনার মুখে পড়তে হয় পার্থবাবুকে। যদিও তিনি তাঁর মন্তব্য প্রত্যাহার করেননি।
রাজ্যের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র অবশ্য এ দিন মহাকরণে জানান, খোঁড়া বাদশার দুই বৌয়ের মধ্যে রেষারেষির জেরেই বিষমদ-কাণ্ড ঘটেছে। সাবিত্রীদেবী বলেন, “খোঁড়া বাদশার দুই বৌয়ের মধ্যে রেষারেষি ছিল। এক জন মদে বিষ দিয়েছে। তাই ওই কাণ্ড ঘটেছে।” ওই কাণ্ডে সিপিএম যুক্ত কি না, সেই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনও উত্তর দেননি।
এখনও ফেরার বাদশা
এই মন্তব্য করার ঘণ্টা দুয়েক পরে সাবিত্রীদেবী তড়িঘড়ি সাংবাদিক বৈঠক ডাকেন। এ বার তিনি জানান, খোঁড়া বাদশার দুই স্ত্রীর রেষারেষির বিষয়টি তিনি একটি খবরের কাগজ পড়ে জেনেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তাঁর মন্তব্য বিকৃত করা হচ্ছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর অভিযোগ, সিপিএমই নদীনালায় বিষ মেশাচ্ছে।
বিষমদ-কাণ্ডের তদন্তে এ-পর্যন্ত কতটা এগিয়েছে সিআইডি?
সিআইডি-র এক কর্তা বলেন, বিষমদের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত খোঁড়া বাদশা, তার দুই স্ত্রী ও সঙ্গীদের গ্রেফতার না-করা পর্যন্ত তদন্তের বিশেষ অগ্রগতি হওয়া সম্ভব নয়। তাদের খোঁজ চলছে। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, খোঁড়া বাদশার মগরাহাটের পশ্চিম বিলন্দপুরের বাড়িতেই চোলাইয়ে বিষাক্ত ভেজাল মেশানো হত।
কী ভাবে ‘বিষ’ মেশানো হত ওই বাড়িতে?
এলাকার বাসিন্দা এবং বাদশার কারবারের সঙ্গে যুক্ত লোকেদের কাছ থেকে সিআইডি-কর্তারা জেনেছেন, খোঁড়া বাদশা তার প্রথম স্ত্রী নুরজাহানের সঙ্গে ওই বাড়িতে থাকত। ওই বাড়িতে বেলা ১২টার মধ্যেই গোচরণ, জয়নগরের বিভিন্ন ভাটি থেকে চোলাই মদ চলে আসত। তার পরেই মদে কীটনাশক ও রাসায়নিক মেশানো হত। চোলাইয়ে ওই ভেজাল মেশানোর দায়িত্ব ছিল নুরজাহানের উপরে। সাধারণত ১২টা নাগাদই চোলাইয়ে ভেজাল মিশিয়ে দিত নুরজাহান। চোলাইয়ে সেই ভেজাল মিশে যেতে মোটামুটি দু’ঘণ্টা লাগে। সেই হিসেব করে ওই চোলাই ‘পাউচ’-এ ভরার কাজ শুরু হত বেলা আড়াইটে নাগাদ। তার পর তা নিয়ে যেত ‘ক্যারিয়ার’ বা বাহকেরা।
কী হয়েছিল ঘটনার দিন?
তদন্তকারীরা প্রাথমিক ভাবে জেনেছেন, ঘটনার দিন খোঁড়া বাদশা ১২টা নাগাদ বাড়িতে ফিরে দেখে, নুরজাহান ঘরে নেই। চোলাইয়ে ভেজাল মেশানোর কাজে দেরি হয়ে যাচ্ছে দেখে বাদশা নিজেই চোলাইয়ে ভেজাল মিশিয়ে দেয়। পরে সে ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। কিছু পরেই নুরজাহান বাড়ি ফেরে। খোঁড়া বাদশাকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে সে আর তাকে ডাকেনি। অন্যান্য দিনের মতো সে চোলাইয়ে ভেজাল মিশিয়ে দেয়। এর ফলে চোলাইয়ে দু’বার ‘বিষ’ মেশানো হয়ে যায়। পরে ওই চোলাই-ই পাউচে ভরে ‘ক্যারিয়ার’-এর মাধ্যমে চলে যায় বিভিন্ন এলাকায়।
সিআইডি-কর্তারা জানান, প্রাথমিক ভাবে বিভিন্ন ব্যক্তিকে জেরা করে এই ঘটনার কথা শোনা যাচ্ছে ঠিকই। তবে এ ব্যাপারে নিশ্চিত তথ্য পাওয়ার জন্য বাদশা বা নুরজাহান ধরা পড়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। মোবাইলের টাওয়ার অনুসরণ করে জানা গিয়েছে, বাদশা ঘটনার পরে কুলতলি হয়ে ক্যানিংয়ে ঢোকে। তার পরে আর তার হদিস মেলেনি। বাদশার দ্বিতীয় স্ত্রী ফিরোজা বিবি থাকে বারুইপুর থানার মাদারহাটে। ফিরোজা বিবিও ঘটনার পর থেকে ফেরার বলে সিআইডি-কর্তারা জানান। খোঁড়া বাদশার ওই দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়েই নানা গুজব রটেছে বলে জানান তদন্তকারীরা। তাঁদের বক্তব্য, নিজেদের মধ্যে কাজিয়ার জেরে দুই স্ত্রীর এক জন চোলাইয়ে বিষ মিশিয়ে দিয়েছে বলে এলাকার কিছু মানুষ রটিয়ে দেন। কিন্তু এখনও ওই রটনার কোনও ভিত্তি খুঁজে পাননি তদন্তকারীরা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.